বাংলারজমিন
বান্দরবানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে আরসিসি রাস্তার নির্মাণকাজ
নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
বান্দরবানে আরসিসি সড়ক নির্মাণের আগে পুরনো ইট ময়লাযুক্ত স্যালভিশ ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার শিফু বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। তাছাড়া নির্মাণকাজে বালু না দিয়ে কাদা মাটির উপর নিম্নমানের ইট ও রাবিশ স্যালভিশ ইট বিছিয়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সদর উপজেলার ১২ মেইল চিম্বুক ওয়াই জংশন বাজারে আরসিসি রাস্তা নির্মাণের আগে বালি না দিয়ে পুরনো স্যালভিশ ইট দিয়ে সলিং করা হচ্ছে। ইট সলিং কাজে বালু ফিলিং ব্যবহার না করার পাশাপাশি ওই রাস্তার ব্যবহৃত ময়লাযুক্ত রাবিশ ইট বিছিয়ে দিয়েছে নিয়োজিত শ্রমিকরা। শুধু তাই নয় এর আগে ড্রেইন নির্মাণের কাজে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিল ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া। জেলা পরিষদে সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলামের যোগসাজশে এমন অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
জানা যায়, থানচি সড়ক হতে দেওয়াই হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে রুমা সড়ক পর্যন্ত ৫০০ মিটারে এডিবি প্রকল্পের আরসিসি রাস্তা নির্মাণকাজ পেয়েছিলেন ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া। কিন্তু সেই সড়ক নির্মাণের পুরোটাই ব্যাপক অনিয়মে ভরা। অনিয়মে আশ্রয় নিতে ওয়াই জংশন বাজারের সভাপতি রেরং ম্রোকে নিজের আয়ত্তে নেন। এরপর শুরু ড্রেইন ও রাস্তা কাজে অনিয়মের সুযোগ। তাছাড়া শিফু বড়ুয়া এক সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদার হিসেবে কাজ হাতিয়ে নিতেন। তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিবি প্রকল্পের ৫০০ মিটার আরসিসি রাস্তা নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন প্রতিভা এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া। যার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই চলছে কাজ। সরজমিন দেখা গেছে, চিম্বুক ওয়াই জংশন বাজারের ওপর আরসিসি রাস্তার আগে চলমান রয়েছে ইট বিছানো কাজ। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ও ময়লাযুক্ত স্যালভিশ ইট। এসব ইট বিছানো কাজে কোনোখানে বালু ব্যবহার করেনি। কাদা মাটির উপর ইট বিছিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ করছেন ঠিকাদার। সড়ক নির্মাণকাজে নিয়োজিত মাঝি মো. সোনাফ উদ্দিন বলেন, ইট সলিং নির্মাণে বালু দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিকাদাররা যেভাবে বলছে আমরা সেভাবে কাজ করছি। স্থানীয় বাসিন্দা মেনরাও, তনসাং ম্রো বলেন, ইট সলিং নির্মাণকাজে পুরনো ইট ব্যবহৃত করা হয়েছে। ইটের নিচে বালু দেয়া হয়নি। রাস্তা মজবুত হতে হলে নিচে বালু হবে, না হলে কয়দিন পর নষ্ট হয়ে যাবে। ওয়াই জংশনের দোকানদার আবছার বলেন, রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এই রাস্তা বেশিদিন টিকবে না। ঠিকাদার এর আগেও ড্রেইনে কাজ করার সময় দু নম্বরি কাজ করেছে। এবারো একইভাবে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার শিফু বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যে রাস্তার পুরাতন ইট ব্যবহার করছি সেগুলো অফিস থেকে (স্যালভিশ) ধরা আছে। তাই আমি ইটগুলো কিনে নিয়েছি। ওই রাস্তার ব্যবহারের জন্য তাই আমি পুরাতন ইটগুলো ব্যবহার করছি। আর এখানে রাস্তার কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না বলে জোর গলায় দাবি করেন তিনি। বান্দরবান জেলা পরিষদ ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী লেলিন চাকমা বলেন, রাস্তার কাজে পুরনো ময়লাযুক্ত স্যালভিশ ইট তুলে ফেলতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ আসায় প্রকৌশলীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।