বাংলারজমিন
বিশ্বনাথে হঠাৎ উত্তাপ রাজনীতি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবারহঠাৎ করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিশ্বনাথের রাজনীতি। আলোচনার কেন্দ্রে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও লামাকাজি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া। তাকে ঘিরে নানা জল্পনাও উপজেলা জুড়ে। বিএনপিতে নেই, অথচ বলে বেড়াচ্ছেন বিএনপি’র রাজনীতির কথা। বর্তমান দায়িত্বে থাকা নেতাদের কথার মাধ্যমে নানাভাবে আক্রান্ত করছেন। এ কারণে গেল কয়েকদিন ধরে বিশ্বনাথে আলোচনার ঝড় চলছিলো। নতুন করে গত সোমবারের একটি ঘটনা বিশ্বনাথে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কবির হোসেন ধলা মিয়া নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর জামানায় বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। একাধিকবারের ইউপি চেয়ারম্যান। বর্তমানেও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে ধলা মিয়া বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে আসেন। নতুন বাজারে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সামনে আসা মাত্র তার ওপর হামলা চালাতে উদ্যেত হয় উপস্থিত থাকা ১০-১৫ জন যুবক। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জানাইয়া গ্রামের বাসিন্দা যুবদল নেতা বাবুল আহমদ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ওই যুবকদের মধ্যে ধলা মিয়ার ধস্তাধস্তির সময় অদূরে থাকা বাবুল এগিয়ে আসেন। তিনি এসে উত্তেজিত অবস্থায় থাকা যুবকদের কাছ থেকে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ তাকে অপদস্থ করেন। গায়ে হাতও তুলেন। পরে স্থানীয়রা উত্তেজিত ওই যুবকদের কাছ থেকে ধলা মিয়াকে রক্ষা করেন। ধলা মিয়া বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন। এক সঙ্গে রাজনীতি করেন বিশ্বনাথে। বিএনপি’র রাজনীতির বাইরে থাকায় বিগত সরকারের সময় যারাই এমপি হয়েছিলেন তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। এ কারণে বহিষ্কৃত এসব বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বারবার রাজনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। বিশ্বনাথ পৌর শহরে ধলা মিয়ার প্রকাশ্য হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন সুহেল ও তার অনুসারীরা। তারা গত সোমবার সন্ধ্যায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে শহরের ডাকবাংলো এলাকা থেকে বের হওয়া মিছিলটি পুলের মুখে আসার পথে উত্তেজনা ছড়ায়। যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা পাল্টা মিছিল নিয়ে বাসিয়া ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উভয়পক্ষই তাদের কর্মসূচি শেষ করে সরে যায়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য কালে আক্রান্ত ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া জানান- কারা তার ওপর হামলা করেছে তিনি তাদের চিনেন না। কখনো দেখেননি। তবে ওই সময় ঘটনাস্থলে যুবদল নেতা বাবুল ছিল। একমাত্র বাবুলই বলতে পারবে কারা হামলাকারী ছিল। তিনি ধারণা করেন- যারা হামলা করেছিল তারা বাবুলের পরিচিত থাকতে পারে। তাদের বাড়ি বিশ্বনাথ পৌর শহরেই। প্রতিবাদ সভায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন- যারা ঠেলা ধাক্কা দিয়েছে তারা ঘটনার সময় বলেছে ধলা মিয়া কোনো দিন বিএনপি করেননি। ধলা মিয়া বিএনপি করেননি তারা জানবে কীভাবে। আমরা পুরাতন বিএনপি। এখনো বিএনপিতে আছেন বলে জানান তিনি। তবে সুহেল কিংবা ধলা মিয়া ঘটনার জন্য বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের কাউকে দায়ী করেননি। রাতে তারা বিশ্বনাথ থানার ওসির সঙ্গে দেখা করে ঘটনাটি বলেছেন চেয়ারম্যান ধলা মিয়া। তবে হামলাকারীদের তিনি চিনেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান। এদিকে হামলার প্রতিবাদে গতকাল লামাকাজি ইউনিয়নে এলাকাবাসীকে নিয়ে চেয়ারম্যান ধলা মিয়া প্রতিবাদ সভা করেছেন। ধলা মিয়ার ওপর হামলার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তার ওপর বিএনপি কিংবা অঙ্গসংগঠনের কেউ হামলা করেনি। তার সঙ্গে নানা জনের বিরোধ আছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এমপিদের পাওয়ারে মানুষকে হেনস্তা ও হয়রানি করেছেন। এজন্য তার ওপর অনেকেই ক্ষুব্ধ রয়েছেন। বছর দুয়েক আগে মেম্বার কালাম আহমদও ধলা মিয়াকে মারধর করেছিলেন। বর্তমানেও তাকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদেও বিভক্তি আছে। এ ঘটনায়ও তার ওপর হামলা হতে পারে। তিনি বলেন- কবির হোসেন ধলা মিয়া এখন বিএনপি’র কেউ নয়। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ১০-১২ বছর আগে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি।