শেষের পাতা
সিলেটে ফের পাহাড়ি ঢলে শঙ্কায় মানুষ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২ জুন ২০২৫, সোমবার
নিম্নচাপের প্রায় তিনদিন অঝোরধারায় বৃষ্টি ঝরেছে সিলেটে। গতকাল বিকাল থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় সীমান্ত নদী দিয়ে রাতারাতি পানি বেড়েছে। প্রবল বেগে সীমান্ত নদী দিয়ে ঢল নামছে সিলেটে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের রোববার বিকাল পর্যন্ত তথ্যে জানা গেছে; সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়া, সীমান্ত নদী ডাউকি, গোয়াইন, পিয়াইন, ধলাইসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। ঢল আসা অব্যাহত থাকার কারণে শঙ্কায় রয়েছেন সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলার মানুষ। ইতিমধ্যে নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তি অব্যাহত থাকলে বন্যা আঘাত হানবে লোকালয়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী; ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে গত দু’দিনে প্রায় ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনো সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া আসামের শিলচর, মনিপুরসহ কয়েকটি পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটের বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান বলছে; গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টায় ২৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বিকালে কম বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা উমঘট নদী। যেটি শুরু হয়েছে সিলেটের জাফলংয়ে পিয়াইন নদী দিয়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- শনিবার সকাল থেকে উমঘট নদী থেকে পিয়াইনে ঢল আসা শুরু হয়। এর আগে ঢল নিয়ে অবশ্য সতর্ক ছিলেন এলাকার মানুষ। ঢলের প্রবল স্র্রোতের কারণে পর্যটক এলাকায় থাকা দোকানপাট ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শতাধিক বারকি নৌকাও ভেসে গেছে। অন্যদিকে হাজিপুর এলাকা দিয়ে পুরান পিয়াইনের ঢলে এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বিশেষ করে রাধানগর থেকে গোয়াইনঘাটগামী সড়কের উপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হয়। এতে করে জাফলংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে গতকাল দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
কোম্পানীগঞ্জে ধলাই নদী দিয়ে প্রবল বেগে ঢল আসে। এই ঢলের তোড়ে কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের আসাম রাজ্য দিয়ে প্রবাহিত বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের এসে অমলসীদে মিশেছে। ওখান থেকেই সৃষ্টিই সুরমা ও কুশিয়ারা। বরাকের প্রবল ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে- অমলসীদে কুশিয়ারা নদীর পানি গতকাল দুপুরে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে এ পানি নিম্নাঞ্চল দিয়ে চলে আসায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। এখনো সিলেট অংশে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। ২০২২ সালে সিলেটে প্রলয়ঙ্করী বন্যা হয়েছিল। সেটি বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় সিলেট। উজানের ঢলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিল সিলেটের মানুষ। ওই বন্যার পর সিলেটকে হঠাৎ ঢল থেকে বাঁচানোর নানা পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছিলো। কিন্তু কোনো পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
অমলসীদ থেকে সুরমা নদী খননের একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনাও আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া সিলেট নগরীর ৪৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রনালয়ে ঝুলছে। ফলে সিলেটবাসীর দুঃখ দুঃখই থাকছে। ঢল এলে বাড়ে আতঙ্ক। এমনকি নির্ঘুম রাত কাটান সিলেট নগরবাসীও। গত দু’দিনে সিলেট নগর এলাকায় ৪০০ মিলিমিটারের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যায় সিলেট নগর। বিশেষ করে নগরের উপশহর, ওসমানী মেডিকেল এলাকা, যতরপুর সহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব লোকজন গত দু’দিন নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তবে বৃষ্টি কমে আসায় গতকাল দুপুরের পর থেকে জলাবদ্ধতার পানি কাটতে শুরু করে। তার আগে খোদ নগরীতেই কয়েক হাজার বসবাড়িতে জলাবদ্ধতার পানি ঢুকে যায়। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সিলেট নগরের মানুষকে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- টানা বর্ষণ হওয়ায় নগরে পানি জমেছিল। বৃষ্টি কমে আসায় এখন পানি কমেছে। তিনি বলেন- অনেক জায়গায় স্থানীয়রা ড্রেন বা খালে ময়লা ফেলে দেয়ার কারণে পানি ব্লক হয়ে পড়েছিল। পরে শ্রমিক দিয়ে সেগুলো স্বাভাবিক করা হয়েছে।