শেষের পাতা
সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক
উপদেষ্টা আসিফকে ক্ষমা চাইতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
একটি বেসরকারি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অত্যন্ত আপত্তিকর কিছু কথা বলেছেন। আসিফ বলেছেন, বিএনপি’র এক নেতার ইন্ধনে ইশরাকের আন্দোলন হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে হাজার হাজার ঢাকার ভোটারদের চরম অপমান করা হয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি, তীব্র রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে আন্দোলন করা ঢাকার এই জনগোষ্ঠীকে একটি বাক্য উচ্চারণের মধ্যদিয়ে নাগরিক থেকে পশুর মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটার জন্যে তাকে অবশ্যই নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, আসিফ বলেছে ইশরাককে ‘মিসগাইড’ করা হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। তিনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আমাকে চরমভাবে হেয় করেছেন। আমাদের ঢাকা নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলনকে এইভাবে অপমান করার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঢাকার অধিবাসীদের প্রতি চরম অবমাননাকর এই বক্তব্যের জন্যে তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার নগর ভবনে হামলার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে কারও সংশ্লিষ্টতা দেখছেন না ইশরাক হোসেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, হামলায় কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা মামলা হওয়ার পর মামলার তদন্তসাপেক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে পারবে। আমরা প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষী করতে পারি না। আমি কেবল বলেছি, যার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে, সে উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ মানুষ। কিন্তু এ ব্যক্তি আরও অনেকের ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করেছে। সুতরাং এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বলতে পারবেন। শপথ না পড়ানোর কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ নেই। বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আইন আদালত যাই বলুক তারা ইশরাক হোসেনকে দক্ষিণ সিটির দায়িত্ব নিতে দেয়া হবে না। এখানে একটি রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। ঢাকা শহরে একটি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। একটি নতুন গঠিত রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এ সকল বিষয় বিবেচনায় তারা সিদ্ধান্তটি নিয়েছে।
সম্প্রতি ডিএসসিসিতে একটি অনুষ্ঠানে ইশরাক হোসেনকে ‘মাননীয় মেয়র’ হিসেবে ব্যানারে উল্লেখ করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে ইশরাক বলেন, মাননীয় শব্দের অর্থ অনারেবল। মাননীয় শব্দ নিয়ে এত কথা হয়েছে যে, এর মাধ্যমে মূল বিষয়, সরকার যে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করেছে, আন্দোলন ত্যাগ-তিতিক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে- এ বিষয়গুলোকে আড়াল করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানেও এটা লেখা হয়। উপদেষ্টা নিজেও এটা নিয়ে বলেছেন। এটা এমন কী বিশাল ঘটনা ঘটে গেছে আমি জানি না। এটা তো আইন লঙ্ঘন না। সরকার যে আইন লঙ্ঘন করেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করেছে মূল বিষয় হবে সেটা।
সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেনের বলা কথাগুলোর পাল্টা জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, অকারণে আমার ছবিতে জুতা মারার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? আসিফ মাহমুদ বলেন, গুজবকে কেন্দ্র করে আমার পিতাকে চাল চোর বলে স্লোগান দেয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? শুরুতেই সরকার পক্ষ থেকে সমাধান চেষ্টা যারা দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করে ভোগান্তির জন্য দায়ী তারা ক্ষমা চেয়েছে? নগর ভবন বন্ধ করে ১ কোটির বেশি নগরবাসীকে কষ্ট দেয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? নগর ভবন দখলকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং আহত হওয়ার ঘটনায় কেউ ক্ষমা চেয়েছে? ইশরাক হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের জন্য আমাকে বারবার ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ, আমার পরিবারকে আক্রমণ, জবাই করার স্লোগান দেয়াসহ অব্যাহত মানহানির জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে?
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে কারণ আমি বলেছি কয়েকজন নেতার প্ররোচনায় এই আন্দোলন হয়েছে, আমি সত্যি বলেছি এবং সত্যি যে বলেছি এটা তিনিও জানেন। তাকে যে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে, ফর অ্যা বেটার ন্যাগোসিয়েশন ব্যবহার করা হয়েছে তা তিনি ভালো করেই জানেন এবং আমার পরিচিত একাধিক ব্যক্তির কাছে স্বীকারও করেছেন। এত নোংরামি করার পরও গত দেড়মাসে একবারের জন্যও ভদ্রতার লাইন ক্রস করিনি। একবারও ব্যক্তি আক্রমণ করা কিংবা ছোট করে কথা বলিনি। আমার লড়াই, রাজপথ, রাজনৈতিক পথচলা কিংবা পরিবার কেউই আমাকে এই শিক্ষা দেয়নি। আমি ধৈর্য ধরেছি, জবাব দেইনি বলে যে এসব অন্যায় জবাবহীন থেকে যাবে এমনটা না। ইতিহাস সবাইকে যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়।