শেষের পাতা
হাসিনার ফাঁসি চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট
‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ প্রশ্নে আমির ইন টিটু আউট
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
আদালত অবমাননার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমিনুল গণি টিটুকে সরিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর প্রশ্ন তুলে আমিনুল গণি টিটুকে সরিয়ে তার পরিবর্তে আমির হোসেনকে নতুন আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
মামলার অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান মামলার প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলে দুই সপ্তাহ সময় চান। পরে ট্রাইব্যুনাল এক সপ্তাহের সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২রা জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে আদালত অবমাননা মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য ট্রাইব্যুনালে আসেন আমিনুল গণি টিটু। এ সময় আমিনুল গণি দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি আদালতকে জানান, তিনি তার মক্কেলকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এরই মধ্যে আমরা কিছু নেতিবাচক তথ্য পেয়েছি। আপনি কি এখনো চালিয়ে যেতে চান। জবাবে তিনি বলেন, আমি বিগত ৩৬ বছর আইন পেশায় কর্মরত আছি। আমি নিরপেক্ষ থেকে আমার মক্কেলকে রক্ষা করবো। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, একসময় আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত হাসিনা (শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়ে)কে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে আপনি সত্যিই নিরপেক্ষভাবে তাকে রক্ষা করতে পারবেন কিনা। জবাবে আমিনুল গণি বলেন, আমাকে ট্রাইব্যুনালই নিয়োগ দিয়েছে। আমি একজন সৎ আইনজীবী। আমি হাসিনার বিরুদ্ধে করা মূল মামলায় ডিফেন্ড করছি না। নিজেকে প্রমাণ করার একটি সুযোগ প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমাদের কাছে ন্যায়বিচারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার এই মামলায় দাঁড়ানো উচিত না। আমরা আপনার সম্পর্কে জানি। ভবিষ্যতে আপনার প্রয়োজন হবে। তখন আমিনুল গণি নিজের থেকেই সরে যাওয়ার কথা ট্রাইব্যুনালকে জানান। পরে ট্রাইব্যুনাল তার পরিবর্তে আমির হোসেনকে নতুন আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ আদেশ দেন।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এইচ এম তামিম সাংবাদিকদের বলেন, আদালত অবমাননার মামলায় সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল গণি টিটুকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সম্মান দেখানোয় তিনি ট্রাইব্যুনালের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। যেহেতু তার ব্যাপারে একটি ইস্যু জানতে পেরে তিনি নিজে থেকেই এই মামলা থেকে প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। যেহেতু তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার পরিবর্তে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এর আগে, শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে আমির হোসেনকে নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল-১। গতকাল আদালত অবমাননার মামলায়ও শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে আমির হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে দু’টি মামলায়ই শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে আমির হোসেন কাজ করবেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হলো।