ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বিশ্বজমিন

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কোনো দল নিষিদ্ধ করা সমাধান নয়

মানবজমিন ডেস্ক

(৩ দিন আগে) ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৫:২৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর  বাংলাদেশে যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয় তা একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মাত্র চার বছরেই বিলিন হয়ে যায়। গত বছরও বাংলাদেশে এক গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। যাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। যার প্রায় এক বছর হয়ে গেছে, তবে এখনও ভারসাম্য প্রচেষ্টার নিক্তিতে ঝুলে আছে বাংলাদেশ।

সত্যি কথা বলতে এক্ষেত্রে ড. ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠিন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা দুঃশাসনে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। দুর্নীতির বিস্তার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সরকার বাহিনী বিরোধীদলগুলোকে দমনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। এক সময়ের চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধির পর বাংলাদেশ অর্থনীতির গতি হারাতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তরুণ বেকার হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিদ্রোহ করে দেশের জনগণ । আগের তুলনায় নতুন সরকার কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারা জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে তারা। অর্থনীতির গতি মন্থর হলেও স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে ঋণ দিতে শুরু করেছে।

তবে সরকারের অন্যান্য অনেক পদক্ষেপকে ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন স্পষ্টভাবে চীনমুখী অবস্থানে। এর পেছনে রয়েছে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সস্তায় অস্ত্রের আমদানি। এই কূটনৈতিক কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে চীনের দিকে ঝোঁকার পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোয় দিল্লিও ঢাকার ওপর নাখোশ। গত গ্রীষ্ম পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নতির পথে থাকলেও সম্প্রতি তা অবনতির দিকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্স-শিপমেন্ট চুক্তি বাতিল করেছে, যা বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনক ছিল। পাশাপাশি (কথিত) বাংলাদেশিদের জোরপূর্বক সীমান্তে ঠেলে দিতে শুরু করেছে দিল্লি। এছাড়া পানিবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনার দাবিও জানিয়েছে প্রতিবেশী এই দেশ।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুনর্গঠন করাই ড. ইউনূসের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর অর্থ হচ্ছে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে নির্বাচনের নতুন কলা-কানুনসহ মৌলিক সংস্কারগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানো। তবে বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো অধৈর্য হয়ে পড়ছে। সড়কে সড়কে ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক বিরোধ।  জুনের মাঝামাঝি সময়ে একদল উৎসুক জনতা সাবেক এক নির্বাচন কমিশনারের ওপর আক্রমণ করে।  ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সহায়তা করার অভিযোগে তার ওপর মবলিঞ্চিং করা হয়।

চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্ভবত বড় ধরনের ভুল করেছে: তারা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলত দলটি আগামী  নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিচার শুরু করেছে আদালত। যা তারা সঠিকভাবেই করছেন। তবে এতদিন যে আশা ছিল- আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে নতুন করে ফিরে আসার আন্দলোন গড়ে তুলবে সে সুযোগ হারিয়েছে তারা।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি সংশোধনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা আইনগত দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। এতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রচলিত কূটনৈতিক কৌশল ও অস্থিরতার আভাস পাওয়া যায়। কেননা এর মাধ্যমেই বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশকে পুনরায় সেই প্রতিশোধ যুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।  

বাংলাদেশের নেতাদের উচিত আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আরো ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ করা।  অনেকেই হয়তো এই ধারণার সঙ্গে এক মত হবেন না।  তবে দেশের সবথেকে পুরনো এই দলের সবাই নৈতিকভাবে কলঙ্কিত নয়। আওয়ামী লীগ এখনও ব্যাপক সমর্থন পায়, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে। দীর্ঘ বছর ধরে বিতর্কিত ও অবৈধ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর, এই ভোটাররাও নিজের পছন্দের প্রার্থী বা দলকে ভোট দেয়ার অধিকার রাখে।

আওয়ামী লীগ স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালালেও হয়তো জয়ী হবে না। তবে সংসদে তাদের উপস্থিতি বিরোধী শিবিরকে শক্তিশালী করতে পারে, যা বিজয়ীদের সতর্ক রাখবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিশোধ নয়,  প্রয়োজন পুনর্মিলন।

পাঠকের মতামত

বাস্তব তথ্য

Mamun
২৮ জুন ২০২৫, শনিবার, ১:২৭ অপরাহ্ন

বাস্তবতা আর এই নিবন্ধের মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান।

Ja
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৭:৩৮ অপরাহ্ন

পলাতক আওয়ামিলিগ বসে নেই। The Economist এ লবিস্টা নিয়োগ করে এই লিখাটা লিখিয়েছে। আমি এই লিখার কোনো গুরুত্ব দেই না। িশেষ করে দিল্লিতে The Economist এর রিজাইন‍্যাল অফিস আছে। ভারতের চাপেও এটা লিখে থাকতে পারে।

সৈয়দ বাহার
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৫০ অপরাহ্ন

জার্মানিতে হিটলারের নাতসি পার্টকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

Hedayet Ullah
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৬ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগ প্রচুর টাকা ব্যয় করতেছে ইকনোমিস্টের পিছনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের দলকে নিষিদ্ধ করা হয়নি ? হয়েছে।

Mohsin
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৫:৫১ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান/ একাধিক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত

নেতানিয়াহুর ভূয়সী প্রশংসা করলেন ট্রাম্প/ ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসরাইলের, প্রত্যাখ্যান তেহরানের/ ইরানে তীব্র হামলা চালানোর নির্দেশ

১০

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরান/ সকল বিকল্প উন্মুক্ত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status