বিশ্বজমিন
গাজায় একদিনে ৭২ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল, মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি
মানবজমিন ডেস্ক
(১ দিন আগে) ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:৪৯ অপরাহ্ন

গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে একদিনে কমপক্ষে ৭২ জন ফিলিস্তিনিতে হত্যা করেছে ইসরাইল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ। ইসরাইলি নৃশংসতায় সেখানে প্রতিদিনই মৃত্যুর সারি দীর্ঘ হচ্ছে। খাদ্য সংকট, পানি-ওষুধের সংকটে মানুষ দুর্ভিক্ষাবস্থা মোকাবিলা করছে। এতে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মেডিকেল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে, রোববার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় শুধু গাজা সিটি এবং উত্তর গাজায় ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মোআথ আল-কালহুত জানান, উত্তরের আল-আহলি হাসপাতালে আহতদের ঢল নেমেছে।
তিনি বলেন, এখানে আহত অসংখ্য বেসামরিক মানুষ, শিশুদের সংখ্যাও কম নয়। অনেকেই মাটিতে পড়ে আছে। কারণ হাসপাতালে পর্যাপ্ত বিছানা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। প্রতিষ্ঠানটি চরম সংকটে পড়েছে। তিনি আরও জানান, ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার পূর্ব অংশে লিফলেট ছড়িয়ে দিয়েছে, যাতে মানুষকে দক্ষিণে চলে যেতে বলা হয়েছে। সাধারণত এই লিফলেট ছড়ানোর পরই বোমা হামলা হয় এবং বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রাফার উত্তরে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তা নিতে আসা কমপক্ষে ৫ জন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওই সংগঠন মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমর্থনে গাজায় সীমিত সহায়তা দেয়া শুরু করে। তখন থেকেই এই কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে ইসরাইলি সেনারা নিয়মিত গুলি চালিয়ে আসছে। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের মতে, এর ফলে কমপক্ষে ৫৮০ জন নিহত ও ৪,০০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরাইলের দৈনিক হারেৎসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কিছু সেনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, অস্ত্রহীন সহায়তা প্রত্যাশীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার আইনজীবী জিওফ্রে নাইস আল জাজিরাকে বলেন, এটা অবিশ্বাস্য যে, যারা খাদ্য সহায়তা দিতে আসছে, তারাই শত শত মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে। এমন ঘটনা ব্যাখ্যাতীত। গাজায় মানবিক পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন অস্ট্রেলিয়ান স্বেচ্ছাসেবী নার্স ক্রিস্টি ব্ল্যাক। তিনি বলেন, গাজা সিটির হাসপাতালে অনেক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী নেই। গর্ভবতী নারীদের ফর্মুলা ফিডের অভাবে দুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য মিলছে না। গত কয়েক দিনে কয়েকটি শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, বোমার ধোঁয়ার কারণে শিশুদের ফুসফুসের রোগ বাড়ছে। ৯-১০ বছরের শিশুরা যেন ২ বছরের মতো দেখাচ্ছে- রাস্তায় আবর্জনার স্তূপে খাবার খুঁজছে তারা।
গাজায় ইসরাইলি বোমাবর্ষণ চলতে থাকলেও ইরানে বোমা হামলা ও তার পরবর্তী যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষিতে গাজা যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টা নতুন গতি পেয়েছে। রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, গাজায় চুক্তি করুন। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন!! তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি এক সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে বলে বিশ্বাস করেন।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও সম্প্রতি বলেছেন, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে। আল জাজিরার হামদাহ সালহুত জর্ডানের আম্মান থেকে জানান, নেতানিয়াহুর ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে আসছেন। এছাড়া দুই সপ্তাহ আগে ইরানে ইসরাইলি হামলার সময় ইউরোপীয় মিত্রদেরও চাপ ছিল। একইসঙ্গে জেরুজালেমের আদালত নেতানিয়াহুর বহুল আলোচিত দুর্নীতি মামলার শুনানি স্থগিত করেছে। নেতানিয়াহুর দাবি, তিনি বর্তমানে গোপন কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কাজে ব্যস্ত।
পাঠকের মতামত
গাজাকে মুস্লিম শুন্য করে , ট্রাম্প এবং নেতানিহানু গাজায় একটি আমেরিকান টুরিস্ট প্লেস বানাতে চায় - সাথে আমেরিকান সামরিক ঘাটি । সব কিছুর পর মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইস্রায়িলের আধিপত্য।
নির্যাতনের এতো বিবৎস বর্ণনা পুরোটা পড়তে পারিন। ধর্মীয় উন্মাদনায় মানুষ পশুত্বকে হার মানিয়েছে। আমার মনে হয় পৃথিবীর ভারসাম্যের প্রয়োজনে ইহুদীদেরকে ধ্বংস করা প্রয়োজন।