বিশ্বজমিন
যুদ্ধ নিয়ে ইরানি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই হামলা বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে হবে, এরপরই আলোচনা
মানবজমিন ডেস্ক
(২২ ঘন্টা আগে) ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১১:৩২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:২৩ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা ফের শুরু করতে চায়, তবে আগামী দিনে কোনো ধরনের সামরিক হামলা চালাবে না- এই প্রতিশ্রুতি আগে দিতে হবে। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাফ এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভাঞ্চি।
তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তেহরানকে জানিয়েছে তারা আবারও আলোচনায় ফিরতে চায়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নে- ভবিষ্যতে হামলা চালাবে কি না সে বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেনি। ১৩ জুন ভোরে ইসরাইলের হামলা শুরুর কথা উল্লেখ করে তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, মাস্কটে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ দফা আলোচনা সম্পূর্ণভাবে ভেস্তে গেছে। (যেদিন হামলা হয় তার) দু’দিন পরই সেই আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়ায়। তারা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।
ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পরমাণু অবকাঠামো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থা আইএইএ’র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, আঘাত ছিল গুরুতর, তবে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস নয়’। তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাবে শুধু শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য। তার ভাষায়, আমাদের গবেষণা কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক উপাদান আমাদের দেয়া হয়নি। ফলে আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করতেই হবে।
যারা ইরানকে শূন্য শতাংশ সমৃদ্ধকরণে রাজি না হলে বোমা মারার হুমকি দেয়, তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা জঙ্গলের আইন। আলোচনায় বসে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ও ক্ষমতা নিয়ে কথা হতে পারে, কিন্তু একতরফাভাবে আমাদের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না।
তবে ইরানের সঙ্গে আইএইএ’র সম্পর্ক ক্রমেই খারাপের দিকে। এ সপ্তাহে ইরানের পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। কারণ তারা মনে করে, আইএইএ আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পক্ষ নিচ্ছে। তাখত-রাভাঞ্চি জানান, কোনো আলোচনা হবে কি না বা কবে হতে পারে, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্ধারিত তারিখ নেই। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী এ সপ্তাহেই আলোচনা হতে পারে বলে শোনা গেলেও, তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, আমরা এখনো একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। তা হলো আলোচনার সময়ে আবারও কি আগ্রাসন ঘটবে? যদি তাই হয়, তাহলে আলোচনার পরিবেশই তৈরি হবে না। তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে এটা স্পষ্টভাবে বলতে হবে- যুক্তরাষ্ট্র কী দিতে চায়, কী প্রতিশ্রুতি দেবে- যাতে পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে আলোচনা শুরু করা যায়।
তাখত-রাভাঞ্চিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ইরান কি নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যালোচনার কথা ভাববে কিনা, বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিলতা বা বৈদেশিক বিনিয়োগ পেলে? জবাবে তিনি বলেন, আমরা কেন এমন প্রস্তাবে রাজি হবো? আমাদের ৬০ ভাগ পর্যন্ত সমৃদ্ধকরণ শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যেই হচ্ছে।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ইউরেনিয়াম ৩.৬৭ ভাগের বেশি সমৃদ্ধ করতে পারত না। ফরদো প্লান্টে ১৫ বছর পর্যন্ত কোনো সমৃদ্ধকরণ চালাতে পারত না। কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। বলেন, এই চুক্তি ইরানকে বোমা তৈরির পথ পুরোপুরি রোধ করছে না। ফলে ইরান ধীরে ধীরে সেই সীমা ভাঙতে শুরু করে। ২০২১ সাল থেকে ইরান ফরদোতে পুনরায় সমৃদ্ধকরণ শুরু করে এবং আইএইএ’র তথ্য অনুযায়ী, তারা এখন ৬০ ভাগ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জমা করেছে। যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব হতে পারে।
ইউরোপের ভূমিকা ও সমালোচনা সম্পর্কে তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, ইউরোপের কিছু নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আগ্রাসনকে সমর্থন করে যে উদ্ভট অবস্থান নিয়েছেন, তা অত্যন্ত হাস্যকর। তিনি বলেন, যারা শুধু ইরানকে দোষারোপ করছেন, তারা আগে নিজেদের নীতির দিকে তাকান। যদি সাহস না থাকে আমেরিকাকে সমালোচনা করার, তাহলে নীরব থাকুন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি ইরানিদের ‘স্বাধীনতার জন্য জেগে উঠুন’ বলে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কোনোভাবেই ইরানে শাসন পরিবর্তনের পক্ষে নন। এ প্রসঙ্গে তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা ভাবাটাও একদম অর্থহীন। কিছু ইরানি হয়তো সরকারের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করে। কিন্তু বিদেশি আগ্রাসনের মুখে পুরো জাতি একত্রিত হবে।