খেলা
‘রং হারানো’র আক্ষেপ সাদমানের
ইশতিয়াক পারভেজ, কলম্বো থেকে
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
কলম্বোর বাংলাদেশ টিম হোটেলের পরিবেশ বেশ উৎসবমুখর। হোটেলে বিয়ে থেকে শুরু করে নানা আয়োজন। এমন একটা পরিবেশেও টাইগার শিবিরে শনিবার ছিল এক আশ্চর্য নীরবতা। টেস্ট দলের ক্রিকেটাররা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিষণ্ন বদনে। এদিন তাদের কথা ছিল সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে থাকার। কিন্তু চার দিনেই কলম্বো টেস্টে হেরে দিনটি হোটেলেই কাটাতে হয় তাদের। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হলো। তাদের মধ্যে ব্যাটসম্যানরা যেন হাসতেই ভুলে গেছেন। পরের দিনই দেশ ছাড়বেন টেস্ট দলের বেশ কয়েকজন সদস্য। তবে ওয়ানডে দলে না থাকলেও শ্রীলঙ্কায় পরিবার নিয়ে কিছু দিন সময় কাটাবেন ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক। দেশের সীমিত ওভারের ফরম্যাট (ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি) খেলা হয় না তার। এমনকি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগেও (বিপিএল) তার খেলার সুযোগ হয় না। যে কারণে আপাতত ৬ মাস তার সামনে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই। তাই অবসরের সময়টা নিজেকে ফিট রাখাটা ভীষণ চ্যালেঞ্জ। সতীর্থরা যখন অন্যান্য ফরম্যাটে খেলায় ব্যস্ত তখন তাকে কাটাতে হয় বসে। যে কারণে নিজেকে ফিট রাখার পাশাপাশি পরিবারকে সময় দিয়ে দুঃখ ভোলার চেষ্টা করেন। শেষ কবে দেশের ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেছেন! কলম্বোতে দৈনিক মানবজমিনের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে নিজের টেস্ট ক্রিকেটের অভিষ্যৎ, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির আক্ষেপ, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্ব ছাড়া নিয়ে কথা বলেছেন অকপটে। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
দুই ম্যাচে অর্জন কী দেখছেন?
সাদমান: গলে আমরা দারুণ খেলেছি। আমরা বুঝতে পারছিলাম যে ম্যাচটা ড্র’র দিকে যাচ্ছে। শান্ত দারুণ খেলেছে, পরপর দুটি সেঞ্চুরি করে সে। মুশফিক ভাই আর লিটন দারুণ খেলেছে। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও আমাদের ভালো জুটি হয়েছে কয়েকটি। সব মলিয়ে সে ম্যাচটা আমাদের দারুণ ছিল। আর কলম্বোতে আমরা নিজেরাই ভুল করেছি বিশেষ করে ব্যাটাররা সেট হয়ে আউট হয়েছি সবাই। গলের মতো যদি বড় কিছু জুটি গড়তে পারতাম তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকমই থাকতো। অর্জন বলতে একটা ভালো অন্যটাতে খারাপ- দুই রকম অভিজ্ঞতা। দুটি ম্যাচেই আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে যা পরে কাজে আসবে।
নিজের ব্যাটিং নিয়ে কতোটা সন্তুষ্ট?
সাদমান: আমার ব্যাটিং নিয়ে আমি একেবারেই সন্তুষ্ট না। দলের ব্যাটার বিশেষ করে ওপেনার হিসেবে আরো বড় ইনিংস খেলা উচিত ছিল। যা আমি একেবারেই করতে পারিনি। গলে ও কলম্বো দুই জায়গাতেই আমি সেট হয়ে আউট হয়েছি। সেটি না হলে দলের অবস্থাও অন্যরকম হতো।
শ্রীলঙ্কার ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার ব্যাটিং দেখে কি নিজের মধ্যে খারাপ লাগা তৈরি হয়েছে? মনে হয়নি এমন ব্যাটিং আমাদের হয় না কেন!
সাদমান: সে (নিশাঙ্কা) দারুণ ব্যাট করেছে। সেট হয়ে বড় ইনিংস করে দলের জন্য অবদান রেখেছে। আমাদেরও তার মতো খেলার সক্ষমতা আছে। যেটা শান্ত, মুশফিক ভাইরা করেছে। হ্যাঁ, আমরা দুই ওপেনার তার মতো খেলা উচিত ছিল। আমি ও বিজয় ভাই তা করতে পারিনি। তবে আমার মনে হয় না ওর (নিশাঙ্কা) থেকে পিছিয়ে আছি।
সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলাতে হয়। যেখানে ওয়ানডেতে ৩৫০ রান হয় সেখানে টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধুঁকতে দেখা যায়। একটি টেস্ট ভালো হলে আরেকটিতে খারাপ, এক কথায় ধারাবাহিকতা নেই। সমস্যাগুলো কোথায় হচ্ছে?
সাদমান: এখনো আমাদের এই সমস্যাটা প্রকট। ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারছি না। একটা টেস্ট ভালো করলে আরেকটাতে খারাপ হচ্ছে। আমার মনে হয় এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের কাজ করা খুব প্রয়োজন। বিশেষ করে সেট হয়ে ইনিংস বড় না করতে পারার ব্যর্থতা আমাদের বেশি ভোগাচ্ছে।
দেশি কোচ সালাউদ্দিনকে পেয়েছেন, তার দলের সঙ্গে থাকা কতোটা উপকারে আসছে?
সাদমান: ওনি দারুণ কোচ, সব সময় আমাদের খবর নেন। যে কারো সমস্যা হোক তার সঙ্গে আমরা শেয়ার করতে পারি। প্রধান কোচ সিমন্সও বেশ সাহায্য করে। আর সালাউদ্দিন স্যার আমাদের দারুণ মোটিভেশন দেন।
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্ব মিস করবেন?
সাদমান: অবশ্যই শান্তর নেতৃত্ব মিস করবো। সে দারুণ একজন অধিনায়ক। তার সঙ্গে আমি অনেক দিন ধরে খেলছি। মাঠে, ড্রেসিং রুমে সে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। আমাদের সে উজ্জীবিত করে রাখে। অধিনায়ক হিসেবে দলের জন্য তার ভূমিকা অসাধারণ। যে কোনো বিষয়ে সে আমাদের সঙ্গে কথা বলতো। আমাদেরকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতো। আমি মুমিনুল হক সৌরভ ভাইয়ের পর তার নেতৃত্বে খেলেছি। সময়টা দারুণ কেটেছে আমাদের। সত্যি অসাধারণ অধিনায়ক। শান্ত নেগেটিভ কথা কম বলে। মিস করবো তাকে।
এই সিরিজে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দলকে মার্ক দিতে বললে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সাদমান: আমি বলবো দুই দলই সমানে সমান। যদি মার্ক দিতে বলেন দুই দলকে ১০-এ ৮ মার্ক দিবো। আমরা কলম্বোতে ভুল করেছি। স্পিনটা ভালো খেলতে পারিনি।
প্রায় পাঁচ মাস পরে আবারো টেস্টে মাঠে নামার সুযোগ হবে হয়তো আপনার। এই সময়টাতে অন্য ফরম্যাটে খেলতে না পারার আক্ষেপ কাজ করে?
সাদমান: দেখেন আমি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছি ওয়ানডে ফরম্যাটে। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগেও রান করি। কিন্তু কোন দিন আমাকে ‘এ’ দলেও ওয়ানডে খেলার সুযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি ওয়ানডে সিরিজের জন্য যে ক্যাম্প হয় সেখানেও আমাকে ডাকা হয় না। দেখেন কিভাবে নিজেকে ফিট রাখবো বিপিএলও খেলার সুযোগ হয় না আমার। না, আমি নিজেকে শুধু টেস্ট ব্যাটসম্যান মনে করি না। সুযোগ পেলে অবশ্যই প্রমাণ করতে পারতাম।
এখন বয়স ৩০, নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
সাদমান: একটা লক্ষ্য মনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তা প্রকাশ করতে চাই না। তবে একটা কথা বলতে চাই এখনো আমি শেষ হয়ে যাইনি আমার অনেক কিছু দেয়ার আছে।