বিশ্বজমিন
ব্যাক চ্যানেলে আমিরাত
সিরিয়া কি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে?
মানবজমিন ডেস্ক
(২১ ঘন্টা আগে) ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:৩৭ অপরাহ্ন

প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়ার নতুন সরকার এখন তাদের আঞ্চলিক সম্পর্ক পুনর্গঠন করছে। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি নজর পড়েছে ইসরাইলের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে খবরে বলা হচ্ছে। এমনকি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার টাইমলাইন নিয়েও আলোচনা চলছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত এ দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে জড়িত অবস্থায় রয়েছে। ইসরাইলি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়া ও ইসরাইল সম্ভাব্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি নিয়ে সরাসরি আলোচনা করেছে। এই যোগাযোগের পেছনে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা একটি গোপন ব্যাকচ্যানেল তৈরি করে কথাবার্তা এগিয়ে নিচ্ছে। চুক্তিটি হলে সেটি সম্ভবত আব্রাহাম অ্যাকর্ডস-এর একটি সম্প্রসারণ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে ইসরাইল ও কিছু আরব দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিকে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস বলে অভিহিত করা হয়। এই অ্যাকর্ডস ২০২০ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন স্বাক্ষর করে, পরে সুদান ও মরক্কোও যোগ দেয়। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সে সময় প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায়। তিনি এ উদ্যোগ শুরু করেছিলেন এবং এরপর তিনি আরও দেশকে ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তিতে আনতে সক্রিয় ছিলেন।
গত মে মাসে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফর করেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সৌদি আরবে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উৎসাহ দেন।
বিশ্লেষকদের মতে ভবিষ্যতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব হলেও এখনই তা কার্যত অসম্ভব। সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা রয়েছে। বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করার পর তা আরও তীব্র হয়। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিডিওন সার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, সিরিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তিতেও তারা গোলান মালভূমির দখল বজায় রাখবেন। ইতিমধ্যে ইসরাইলি সেনারা গোলানের আরও গভীরে প্রবেশ করেছে, ঘরবাড়ি দখল ও মানুষ উচ্ছেদ করেছে। অনেক সিরিয়ান এই দখল ছেড়ে দিতে রাজি নন। তবে বাস্তবতায় অনেকে যুক্তিসংগত আলোচনাকে স্বাগত জানাতে পারেন।
সিরিয়ান লেখক রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলেন, সিরিয়ানরা দ্বিধান্বিত। একদিকে তারা ক্লান্ত, জানে যে সিরিয়া এখন নিজের প্রতিরক্ষা করতে বা ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না। তাই শারার আলোচনায় বসা ইতিবাচক। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির মতো একটি বাস্তববাদী চুক্তিই হতে পারে সেরা পথ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ সিরিয়া ত্যাগ করার এক সপ্তাহ পর, ইসরাইলের সংসদ সিরিয়ায় নতুন বসতি স্থাপনের পক্ষে ভোট দেয়। যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। বর্তমানে দখলকৃত গোলানে ৩১,০০০-এর বেশি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী রয়েছে। আল-শারার সরকার বলেছে, তারা ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি চায় এবং ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে। তবে নেতানিয়াহু ৮ই ডিসেম্বর (আসাদের পালানোর দিন) ঘোষণা করেন, তিনি সেই চুক্তিকে বাতিল বলে মনে করেন। ইসরাইল সিরিয়ায় একাধিকবার হামলা চালিয়েছে, সেনা অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং নতুন এলাকাও দখল করেছে।