শেষের পাতা
সমবায় কর্মকর্তা জামালের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নানা অভিযোগে আলোচিত সমবায় কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন। সরকারি নিরীক্ষাতেই ধরা পড়েছে তার আর্থিক অনিয়ম। এরপরই জেলার কসবা উপজেলার সাবেক এ সমবায় কর্মকর্তাকে দি কসবা কো-অপারেটিভ করপোরেশন লিমিটেডের নির্বাচনে ব্যয়িত ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা খরচের প্রমাণ জমা করতে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৭শে মে দি কসবা কো-অপারেটিভ করপোরেশন লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। জামাল উদ্দিন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে গত বছরের ১৬ই মার্চ অনুষ্ঠিত কসবা কো-অপারেটিভ করপোরেশন লিমিটেডের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনের পরপরই বিভাগীয় নিরীক্ষায় নির্বাচনে ব্যয়িত ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। দুই সদস্যবিশিষ্ট সমবায় নিরীক্ষা দলের প্রধান ছিলেন জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক সায়েদুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন পরিদর্শক এ এস এম কবিরুল ইসলাম। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ২৫নং অনুচ্ছেদে নিরীক্ষা কর্মকর্তা নির্বাচনী ব্যয়ের কোনো প্রমাণক পাওয়া যায়নি মর্মে নিরীক্ষা আপত্তি উত্থাপন করেন।
আপত্তিতে বলা হয়, ‘নিরীক্ষাকালে দেখা যায় যে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার। উক্ত ব্যয়ের কোনো রকম প্রমাণক পাওয়া যায়নি।’ এ ছাড়া নিরীক্ষায় শেয়ার যাচাই-বাছাই কমিটির ভাতা প্রদানে ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই নিরীক্ষার পর সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় খরচের প্রমাণ চেয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া হয়। জামাল উদ্দিন ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত কসবায় কর্মরত ছিলেন। এ সময়ে তার বিরুদ্ধে আরও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। আদালতে মামলাও হয়। ২০২৪ সালের ১৪ই নভেম্বর কসবা উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে একজন প্রার্থীকে জয়ী করাতে আরেকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে প্রতিস্বাক্ষর না দেয়ার অভিযোগ করা হয় । এতে জামাল উদ্দিনের পছন্দের প্রার্থী জিয়াউল হুদা শিপন জয়ী হন। এনিয়ে প্রথমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. জহিরুল হক খান সমবায় অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। পরে আদালতে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর থেকে ওই কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। কসবা কো-অপারেটিভ করপোরেশন লিমিটেডের নির্বাচনে পছন্দের প্যানেলকে নির্বাচিত করতে ১২৬ জন নিয়মিত নিরীক্ষিত শেয়ার স্থগিত রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগও দেয়া হয় সমবায় কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার এখতিয়ারভুক্ত এ কাজের বিরুদ্ধে করপোরেশনের সদস্য এরশাদ মিয়া ও শওকত রেজা গং সমবায় অধিদপ্তরে অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রাম সমবায় বিভাগের যুগ্ম নিবন্ধক মো. দুলাল মিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। সে কারণে অভিযোগ দেয়ার পরও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সাজানো নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। কসবা কো-অপারেটিভ করপোরেশন লিমিটেডের সভাপতি জহিরুল ইসলাম খান জানান, সমবায় কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কসবা কো-অপারেটিভ করপোরেশন লিমিটেডের সদস্য শওকত রেজা রতন বলেন, আমাদের নির্বাচনে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৬০ হাজার টাকা। সে ভাউচার করেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। তার চাচা জয়েন্ট রেজিস্ট্রার। সে কারণে তার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায়।
এদিকে, সরাইল উপজেলাতে যোগদানের পরও কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির নির্বাচন নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে সভাপতি পদের একক ও বৈধ প্রার্থী মো. আনিসুল ইসলাম ঠাকুরকে বাদ দিয়ে সমবায় কর্মকর্তা নিজেই কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি হয়েছেন। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ঋণের চেকে স্বাক্ষর না করায় ঋণসহায়তা কার্যক্রম বন্ধ সেখানে। আনিসুল ইসলাম বলেন, তাদের নির্বাচনে ইচ্ছাকৃতভাবে অনিয়ম করা হয়েছে। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, সমিতি অকার্যকর বলে ১৪৯ সমিতির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে সমবায় কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। কসবার নির্বাচনের হিসাব এডহক কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। নিরীক্ষা কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে লিখতে পারেন না। তাছাড়া সেখানে নানা অনিয়ম ধরার কারণেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়। সরাইল কেন্দ্রীয় সমিতিতে জয়েন্ট রেজিস্ট্রার তাকে এডহক করেছেন বলে জানান।