শেষের পাতা
গোয়াইনঘাটের বালু নিয়ে যে নাটকীয়তা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
জাফলংয়ে লুট হওয়া বালু নিয়ে কাণ্ড-কারবারের শেষ নেই। টানা কয়েকদিন ধরে ঘটছে নানা নাটকীয়তা। পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় গড়িয়েছে সেনাবাহিনী পর্যন্ত। এতে কিছুটা স্বস্তি। আপাতত মুখোমুখি অবস্থানে থাকা চাঁদাবাজরা নমনীয় হয়েছে। তবে রহস্য দেখা দিয়েছে প্রশাসনের নীরবতায়। জেলা প্রশাসন থেকে এখনো কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে না। পুলিশও হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। কয়েকদিন আগে গোয়াইনঘাট সদরের কালা মিয়ার ঘাটের অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন সমন্বয়ক দাবিদার লেঙুরা গ্রামের আজমল হোসেন। তিনি গ্রামের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান। তিনি ঘটনায় অভিযুক্ত করেন বিএনপি নেতা স্ট্যালিন থারিয়াং, যুবদল নেতা সাত্তার, জিয়ারত, জাহিদ খানসহ কয়েকজনকে। আন্দোলন চলাকালে লেঙুরা গ্রামের লোকজন তাদের নাম ধরে স্লোগান দেন। এখানেই শেষ নয়। কালা মিয়ার ঘাটে আটকে রাখা কয়েকশ’ বালুভর্তি ভলগেট ছাড়িয়ে নিতে জিয়ারত অংশের লোকজন বল প্রয়োগ করেছিলেন। এতে করে গোয়াইনঘাট সদরে মুখোমুখি হয়ে পড়েছিলেন দু’পক্ষ। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিলে টহলে থাকা সেনা দল গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। বিবদমান পক্ষের লোকজন জানান- ঘটনায় বাড়াবাড়ি না করার জন্য সেনাবাহিনীর তরফ থেকে সতর্ক করে দেয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে প্রতিদিনই মধ্যরাতের পর গোয়াইনঘাট সদরে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পক্ষ জোরপূর্বক ভলগেটবাহী বালু নিয়ে যেতে চাইলে অপরপক্ষ বাধা দিচ্ছেন। টানা কয়েকদিন ধরে গোয়াইনঘাটে কয়েকশ’ ভলগেট আটকের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ভলগেটে থাকা শ্রমিকরা। টানা কয়েকদিন ধরে তারা গোয়াইনঘাট নদীতে অবস্থান করার কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ নিয়ে তারা গতকাল বিকালে কালা মিয়ার ঘাটের রয়্যালিটি ঘাটে ক্ষোভ দেখান। পরে তারা থানায় গিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আটকে রাখা বালুগুলো উত্তোলিত হয়েছে অবৈধভাবে। জাফলং নদী ও কোয়ারি ইসিএভুক্ত। কোনো লিজ নেই। ওখান থেকে লুট করা বেশির ভাগ বালু। জাফলংলের ভাটিতে বাংলাবাজারের অবস্থান। সেখানেও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে বালু লুট করছে। জাফলংয়ের বালু ছোটো নৌকায় করে এনে বাংলাবাজারে ভলগেটে লোড করা হয়। বাংলাবাজারে চাঁদাবাজি বন্ধের পক্ষে পাথর, বালু ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির নেতা রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার প্রতিবাদী হয়েছিলেন। গত ২৫শে বাংলাবাজারে তার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় থানা মামলা নিলেও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান- উল্টো কাউন্টার মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানান তারা। গোয়াইনঘাট সদরে যখন চলছে উত্তেজনাকর অবস্থা তখন জাফলংয়ে ফের শুরু হয়েছে বালু লুট। মধ্যরাতের পর প্রতিদিনই পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় শতাধিক নৌকা তোলা হচ্ছে। রাতভর বালু লুটের পর ভোরের মধ্যে সেগুলো নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে ওই এলাকায় প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছে- জাফলং থেকে লুট করা বালু এখন বাংলাবাজার, মুকতলা এলাকায় এনে ডাম্পিং করা হচ্ছে। যখন নদী খুলে যাবে তখন সেগুলো বিক্রি করা হবে। জাফলং, বাংলাবাজার, গোয়াইনঘাট সদরে যখন বালু লুট, ভলগেট আটকে দেয়া নিয়ে নানা নাটকীয়তা চলছে তখন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। কেউ কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না। লুটপাট বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। আটক কয়েকশ’ ভলগেট বালু জব্দ করা হচ্ছে না। শক্তি প্রদর্শনে এক পক্ষ আরেক পক্ষের মুখোমুখি দাঁড়ালেও পুলিশ রহস্যময় কারণে নীরব। কেন এমন হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- বালু লুট করতে কিছু দাপ্তরিক কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবনা পাস করে বালু লুট বন্ধে স্থায়ী সমাধান হবে বলে জানান তিনি। বর্তমানে লুটপাট ঠেকাতে পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সেটি করা হচ্ছে না। এতে করে বালু লুট ও ভলগেট আটকের ঘটনা পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠেছে। আর এতে সুযোগ নিচ্ছে বালুখেকো চাঁদাবাজরা। ভলগেট শ্রমিকদের উস্কে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।