ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

শতকোটি টাকার মালিক কামাল

কামরুল ইসলাম, লাকসাম থেকে
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবারmzamin

কামাল হোসেন। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাবেকমন্ত্রী তাজুল ইসলামের উন্নয়ন সমন্বয়কারী। একসময় কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসের দালাল ছিলেন। এরপর জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সাবেক মন্ত্রীর আশীর্বাদে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সদস্য হন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ১১ বছরে বনে যান শতকোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা দুদকে মামলা হলেও মন্ত্রী তাজুল ও কুমিল্লার সংসদ সদস্য বাহারের হুমকিতে হয়নি তদন্ত। 

সরজমিন জানা যায়, মনোহরগঞ্জ উপজেলা লক্ষণপুর গ্রামে নূর মোহাম্মদের পুত্র কামাল হোসেন। লেখাপড়ার গণ্ডি খুব বেশি এগোয়নি। তার পিতা কৃষিকাজের পাশাপাশি লক্ষণপুর বাজারে কাঁচা তরকারি বিক্রি করতেন। অভাবের সংসারে হাল ধরতে তিনি কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে এক দালালের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৯৬ সালে এমপি তাজুলের হাত ধরে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে যুবলীগের সদস্য হন। তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাগ্যের চাকা খুলতে থাকে কামালের। মন্ত্রীর উন্নয়ন সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেয়া হয়। কুমিল্লা এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করার পাশাপাশি বড় বড় কাজগুলোর টেন্ডার তার নির্দেশ ছাড়া কোনো কাজ ঠিকাদারদের দেয়া হতো না। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করতেন। চট্টগ্রাম বিভাগের এলজিইডি প্রকল্পে তার নির্দেশ ছাড়া কোনো ঠিকাদারদের কাজ দেয়া হতো না। এ ছাড়া উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বদলির কাজ করতেন। 

কামাল কুমিল্লায় বসবাস করতেন। তাজুল ইসলামের উন্নয়ন সমন্বয়কারী হওয়ায় বাহারের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। রাতারাতি ভাগ্যের চাকা খুলতে থাকে তার। নিজ এলাকা লক্ষণপুর বাজারে বিশাল একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। গত সংসদ নির্বাচনে বাহারের দায়িত্বে ছিলেন কামাল। কয়েক মাস পরপর গাড়ি পরিবর্তন করতেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে কামাল টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়িতে করে চলাফেরা করতেন। তখনই আলোচনায় আসেন। কুমিল্লা এলজিইডি পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্যে ও দুর্নীতির মাধ্যমে শ’ শ’ কোটি টাকার মলিক হন। মাস্টার এন্টারপ্রাইজ নামে লাকসাম, কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় কাজ তার লাইসেন্সে করা হতো। কুমিল্লা আদর্শ উপজেলায় তার নামে ১০তলায় ২টি ফ্লোর, কুমিল্লা সদরের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়াও কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটের এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি, ঢাকায় একাধিক বাড়ি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ রোডে বিগ বাজার নামে একটি সুপার শপ রয়েছে। সেখানে ৫০ জন কর্মচারী কাজ করেন। কিছুদিন পূর্বে তার এক ভাইয়ের নামে লাকসাম জংশন এলাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ৬ তলা ভবন ক্রয় করেন। 

জান যায়, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কুমিল্লা ২০২৩ সালে ২৩শে নভেম্বর সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা বাদী হয়ে ৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। দুদক অনুসন্ধানে তার নিজের নামে স্থাবর-অবস্থার মিলিয়ে ১৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ টাকার সম্পদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও কুমিল্লা সংসদ সদস্য বাহারের হুমকিতে দুর্নীতি দমন কমিশন উক্ত মামলার তদন্ত করতে সাহস পায়নি। গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে চান কামাল। এসব বিষয়ে জানতে কামালের নাম্বারে ফোন দেয়া হলেও বন্ধ পাওয়ার কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 
 

পাঠকের মতামত

"দুর্নীতিবাজদের চিড়িয়াখানা" এই নামে একটি চিড়িয়াখানা বানানো হোক। আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর তাদেরকে জেলখানায় না রেখে চিড়িয়াখানায় রাখা হোক, যাতে এই ভদ্রলোকবেশী সমাজের এবং রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কুলাঙ্গারদের দেখে সবাই শিক্ষা নিতে পারে। এদের জন্য সেক্টর ও পদমর্যদা হিসাবে আলাদা আলাদা নামঃ এবং দুর্নীতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ সম্বলিত লোহার খাঁচা বানানো যেতে পারে, খাঁচার বাহিরে মোটা কাপড়ের পর্দা থাকবে যাহা ইলেকট্রিক সুইচ এর মাধ্যমে সময় মতো উঠা নামা করানো যাবে। আর কার্যক্রম মিরপুর ১ নং চিড়িয়াখানার ন্যায় হতে পারে । আশা করা যায় মিরপুর ১ নং চিড়িয়াখানার চেয়ে এখানে বেশি দর্শনার্তী হবে। সুতরাং আয়ও ভালো হবে। আরো আশা করা যায় এইরকম চিড়িয়াখানার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বড় ধরণের দুর্নীতি কমানো অনেকটা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।

N. Islam
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২:৩০ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status