শেষের পাতা
সার্ক কার্যত অচল, বিকল্প আঞ্চলিক জোট গঠনের চিন্তা পাকিস্তান ও চীনের
মানবজমিন ডেস্ক
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান ও চীন একটি নতুন আঞ্চলিক প্ল্যাটফরম গঠনের উদ্যোগ নিয়ে ভাবছে। দুই দেশই বাণিজ্য, সংযুক্তি এবং রাজনৈতিক সংলাপকে এগিয়ে নিতে বিকল্প জোট গঠনের বিষয়ে পরামর্শ চালাচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং সম্প্রতি চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের কুনমিং ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর এ ধারণাটি গতি পেয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো হয়নি। তবে প্রস্তাবিত জোটে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার একাধিক দেশ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি ভারতেরও নাম রয়েছে আলোচনায়। তবে বর্তমানে ভারত-চীন ও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লির অংশগ্রহণ প্রায় অনিশ্চিত। পাকিস্তানের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আঞ্চলিক অচলাবস্থাকে অতিক্রম করে গতি সৃষ্টির চেষ্টা করা, সার্কের জাগ্রত হাওয়ার জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করা নয়। ইসলামাবাদ ও বেইজিং মনে করছে, সার্কের অচল অবস্থাই এখন একটি নতুন বহু-রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠনের সুযোগ এনে দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পর সার্কের কোনো সম্মেলন হয়নি। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে আয়োজিত সম্মেলন ভারত ‘উরি হামলা’র পরিণতিতে বর্জন করায় তা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে সার্ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। চীন যদিও সার্কের সদস্য নয়, কিন্তু ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব ক্রমেই বাড়াচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়েই একটি নতুন জোট গঠনের প্রয়াসে নেতৃত্ব দিচ্ছে বেইজিং।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি ছিল একধরনের পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ। ছোট আঞ্চলিক শক্তিগুলোর (যেমন বাংলাদেশ) আগ্রহ যাচাইয়ের একটি উপায়। এই নতুন জোট চীন ও পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন বহু-দেশীয় প্ল্যাটফরম হতে পারে। সেখানে তারা সার্কের সীমাবদ্ধ কাঠামোর বাইরে গিয়ে সিপিইসি (চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর), অবকাঠামো অর্থায়ন এবং জলবায়ু ও বাণিজ্য ইস্যুতে যৌথভাবে কাজ করতে পারবে। যদিও এখনো কোনো সময়সূচি নির্ধারিত হয়নি, তবে কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বছরের শেষ নাগাদ একটি খসড়া রূপরেখা প্রকাশ হতে পারে। সেটি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর আসন্ন বৈঠকের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে, যেখানে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই সদস্য।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর অবস্থান হবে গুরুত্বপূর্ণ
এই সম্ভাব্য নতুন আঞ্চলিক কাঠামো গঠনের ক্ষেত্রে নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিশেষ করে সার্কের পরিবর্তে একটি চীন-সমর্থিত জোট গঠনের ধারণা তারা কতোটা গ্রহণযোগ্য মনে করে, সেটাই নির্ধারণ করবে উদ্যোগটির ভবিষ্যৎ। তবে গত সপ্তাহেই বাংলাদেশ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, তারা চীন বা পাকিস্তানের সঙ্গে ‘কোনো নতুন জোট’ গঠন করছে না। ২৬শে জুন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো নতুন জোট গঠনের বিষয় নেই। তিনি আরও বলেন, এটি ছিল একটি দাপ্তরিক পর্যায়ের বৈঠক, রাজনৈতিক পর্যায়ের নয়। কোনো ধরনের জোট গঠনের আলোচনা হয়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন ‘পুনঃসমন্বয়ের’ পর্যায়ে রয়েছে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো সদিচ্ছার ঘাটতি নেই। কুনমিং বৈঠককে তিনি বর্ণনা করেন, এটা বড় কিছু নয় এবং কোনো কাঠামোগত বিষয়ও নয়।