ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে হুমকির মুখে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

সিলেটের জেলা প্রশাসকের কঠোর অবস্থানের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। পাথর লুট বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমদানির জন্য পোর্টও খোলা। প্রতিদিন ভারত থেকে আসছে কয়েক কোটি টাকার পাথর। কিন্তু পাথরের ‘উৎস’ বন্ধ না করে সিলেটের হাজারো ক্রাশার মিলের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছেন প্রশাসন। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে ব্যবসায়ী মহলে। শনিবার সিলেটে ব্যবসায়ীদের নিয়ে ‘বিজনেস ডায়ালগ’ করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ডায়ালগে আলোচিত হয়েছে জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি। সিলেটে শিল্প কারখানা নেই। পাথরকেন্দ্রিক ব্যবসা চালু আছে। সিলেটে পাথরের উৎস দু’টি। একটি হচ্ছে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর। অন্যটি স্থানীয়ভাবে উত্তোলিত পাথর। দুই প্রকারের পাথর প্রসেসিং হয়ে গোটা দেশের নির্মাণকাজে সরবরাহ করা হয়। অর্ধশতাধিক বছর ধরে সিলেটের সীমান্তবর্তী চারটি উপজেলায় পাথরকেন্দ্রিক অর্থনীতি চালু রয়েছে। এ কারণে ভোলাগঞ্জ, ধোপাগুল, জাফলং, জৈন্তাপুরে গড়ে উঠেছে হাজারো পাথর ভাঙার মিল। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- ইউনিয়ন অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স, অনাপত্তি নিয়ে মিলের জন্য আবেদন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরে। এরপর পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ক্রাশার মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়। এভাবেই চলছে তাদের ব্যবসা। প্রায় ২০ বছর আগে জাফলংয়ের মামার দোকান, বল্লাঘাট এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল স্টোন ক্রাশার মিল। এতে পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কায় ওয়ান ইলেভেনের সময় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সোনাটিলা এলাকায় একটি স্টোন ক্রাশার জোন করা হয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব ক্রাশার মিল এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের মতে; স্টোন ক্রাশার মিলে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। মূলত ভারত থেকে এলসি’র মাধ্যমে আমদানি করা পাথর ভাঙার জন্য এসব মিল চালু করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রায় ৭ বছর সিলেটের সব পাথরকোয়ারি বন্ধ ছিল। তখন ব্যবসায়ীরা এলসি পাথরের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি সময়ে কোয়ারি এলাকায় পাথর উত্তোলন করা হয়। এলসি পাথরের সংকট থাকায় ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ স্থানীয় পাথর ভেঙে বিক্রি করেন। তিন মাস আগে স্থানীয়ভাবে উত্তোলিত পাথর ভাঙার অজুহাত দেখিয়ে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুলে অভিযান শুরু করেছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এতে বাধা দেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গত ১৪ই জুন জাফলং পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। জাফলংয়ে তারা প্রতিরোধের মুখে পড়েন। তারা সিলেট থেকে চলে যাওয়ার পর স্টোন ক্রাশার মিলের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নেমেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এক মাসে সিলেট জেলায় অন্তত ৫ শতাধিক স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও কয়েকটি ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল সোমবারও কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েকটি ক্রাশার মিল ভেঙে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন; জাফলংয়ে ইতিমধ্যে শতাধিক ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর ও ধোপাগুলে দুই শতাধিক ও কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এবং কলাবাড়ি এলাকার দেড়শতাধিক স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে করে গত এক মাস ধরে হাজারো স্টোন ক্রাশার মিল বন্ধ ও অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তবে স্ট্রোন ক্রাশার মিলের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে অনড় রয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটে যেসব স্টোন ক্রাশার মিল রয়েছে সেগুলোর কোনো অনুমতি নেই। তারা স্টোন ওয়াশিং মিলের অনুমতি নিয়ে পাথর ভাঙছেন। এটি আইনবিরোধী কাজ। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে জেলা প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন- এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা স্টোন ক্রাশার মিলের লাইসেন্স নেবেন কেবল তারাই ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন। এদিকে রোববার স্টোন মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা গিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ধোপাগুলের কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা জানিয়েছেন- জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘উপরের নির্দেশে’ স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি কবির আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন-  জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা পথে নেমেছে। তিনি বলেন- স্থানীয়ভাবে উত্তোলিত পাথর কেউ কেউ ভাঙছেন।  বেশির ভাগ ব্যবসায়ী এলসি’র পাথর ভেঙে বিক্রি করছেন। সবকিছু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হলে প্রশাসনকে অ্যাকশনে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করতে হবে। নতুন ক্ষোভ বাড়বে বলে জানান তিনি। ভোলাগঞ্জ স্টোন ক্রাশার মিলের সভাপতি আব্দুল জলিল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- স্টোন ক্রাশার মিলের অনুমতি নিয়েই তারা ব্যবসা করছেন। জেলা প্রশাসক যদি নতুন করে লাইসেন্স নেয়ার কথা বলেন  সেটিতেও ব্যবসায়ীদের সায় রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ঠিক হচ্ছে না। ক্রাশার মিল বন্ধ থাকায় এলাকায় চুরি, ছিনতাই বেড়েছে। মানুষের কর্মসংস্থান সংকোচিত হয়ে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status