ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

হোটেলে এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যু, নানা রহস্য

স্টাফ রিপোর্টার
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

রাজধানীর মগবাজারে একটি আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ১৭ বছর বয়সী সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ধারণা         করছে, বিষক্রিয়া অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে এই মৃত্যু হতে পারে। রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহতরা হলেন- লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মনির হোসেন, তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার ও তাদের শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈম হোসেন। 
প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা করাতে শনিবার বিকালে মনির হোসেন পরিবারসহ মগবাজারের ‘হোটেল সুইট স্লিপ’-এ ওঠেন। পরে রাতে নিজস্ব লোকের মাধ্যমে আনা খাবার খেয়ে তিনজনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক প্রথমে স্বপ্না ও নাইমকে মৃত ঘোষণা করেন। কিছুক্ষণ পর মনির হোসেনও  অসুস্থ হয়ে মারা যান। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 

গতকাল দুপুর দুইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত সমপন্ন করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. জাকিয়া তাসনিম। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি বলেন, তিনজনের মরদেহের সিমট্রম দেখে মনে হচ্ছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ থেকে ব্লাড ও ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো অ্যানালাইসিসের জন্য মহাখালী পাঠানো হবে। রিপোর্ট আসলে প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। 

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছেলের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পরিবারটি ঢাকায় আসে। শনিবার বিকালে তারা মগবাজারে  হোটেল সুইট স্লিপ’-এ ওঠেন। মনির হোসেনের ঢাকার পোস্তগোলা এলাকায় একটি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া আরও একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। সবগুলো দেখভাল করেন তার চাচা রফিকুল ইসলাম। হোটেলে ওঠার সময় রফিকুল নিজেই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কক্ষ ভাড়া করেন এবং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সন্ধ্যার দিকে তিনি একটি ব্যাগে খাবার নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন। পরে রাত আটটার দিকে মনির হোসেন নিচে নেমে পানি নিয়ে আবার উপরে চলে যান।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, শনিবার বিকালে মনির হোসেন পরিবারসহ মগবাজারের ‘হোটেল সুইট স্লিপ’-এ ওঠেন। সোমবার সকালে পরিবারের এক আত্মীয় হোটেলে গিয়ে তাদের অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে স্বপ্না ও নাইমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। কিছু সময় পর মনির হোসেনও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে নেয়া হয়। রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রফিকুল ইসলাম ও তার মেয়েকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন-অনেক বিষয় আমাদের সন্দেহজনক মনে হয়েছে; ঐসব জায়গায় আমরা কাজ করছি।

হোটেল সুইট স্লিপের সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শনিবার বিকালে মনির হোসেন তার প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ১০৩ নাম্বার রুমে ওঠেন। মনির হোসেনের সঙ্গে এনআইডি কার্ড না থাকায় তার চাচা রফিকুল ইসলামের এনআইডি দিয়ে হোটেল বুকিং দেয়া হয়। পরে রফিকুল বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে চলে যায়। রাতেই পরিবারটি অসুস্থ হয়ে পড়লেও হোটেল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। রোববার সকাল ১১টার দিকে রফিকুল তার মেয়েকে নিয়ে হোটেলে আসেন এবং প্রথমে স্বপ্না আক্তারকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর মনির হোসেনকে এবং পরে চিৎকার শুনে হোটেল কর্মীরা নাইমকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যায়।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, ঘটনাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। হোটেলের রুম, অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, রুমে কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তি প্রবেশ করেছিল কিনা। তিনি আরও বলেন, নিহতদের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আমরা দু’টি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করছি- খাদ্যে বিষক্রিয়া, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ প্রয়োগ। আমরা নিহতের চাচা রফিকুল ইসলাম ও তার মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।  
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status