ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

চুরির অপবাদ

গাজীপুরে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানাধীন কাশিমপুর রোডে একটি পোশাক কারখানার ইলেকট্রিক মেকানিককে চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাত ৮টা থেকে শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করায় বিলম্বে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। ঘটনার পর থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। নিহত মেকানিক হৃদয় হোসেন (১৯) টাঙ্গাইল ঘাটাইল থানার শুকতারবাইদ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে। তিনি কোনাবাড়ীর হারিনাবাড়ী এসরারনগর হাউজিং এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় গ্রীনল্যান্ড ফ্যাক্টরিতে ডাইং সেকশনের ইলেকট্রিক মেকানিক হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করতেন। এ ঘটনায় হাসান মাহমুদ মিঠুন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানার হাদিরা বাজার এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে ও গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানাধীন কুদ্দুস নগর এলাকার আয়নালের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে চুরির অপবাদ দিয়ে গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টসের মেকানিক সেকশন ও নিরাপত্তাকর্মীরা হৃদয়ের হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে দুপুরের দিকে হৃদয় মারা যায়। ঘটনার খবর আশপাশের অন্যান্য গার্মেন্টসে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে প্রায় ৪০০-৫০০ শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে এবং গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টসের সামনে গিয়ে কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হৃদয় হত্যার বিচার দাবি করেন। এ সময় তারা কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হত্যাকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষ গার্মেন্টসের মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে পালিয়ে যান।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কিছু লোক হৃদয়কে দড়ি দিয়ে হাত পিঠ মোড়া করে বেঁধে কারখানার ভেতরে একটি কক্ষে নিয়ে যাচ্ছে। পরে ওই কক্ষে তার ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়। শনিবার সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে কারখানার ভেতরে একটি এম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেখা যায়। এম্বুলেন্সে করে মৃত অবস্থায় হৃদয়কে নিয়ে ১০টা ২১ মিনিটে কারখানা ত্যাগ করে। হৃদয় মারা যাওয়ার পর তার শরীরের একাধিক ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। তাতে তার সারা শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার ভেতরে নির্যাতনে তার মৃত্যু হওয়ার পর বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে আহত দেখিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে স্থানান্তর করে।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, হৃদয় মা ও বোনের সঙ্গে কোনাবাড়ী থানাধীন হরিনাচালা এসরারনগর হাউজিং সাকিনস্থ মিরাজের বাসায় ভাড়া থেকে গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতো। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার সময় বাদীর মা মোবাইলে ফোন করে বাদীকে জানায় যে, শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার সময় হৃদয় খাওয়া শেষে ডিউটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে ডিউটি শেষে আর বাসায় না ফেরার সংবাদ পেয়ে বাদী তাৎক্ষণিক মায়ের বাসায় এসে মাকে নিয়ে হৃদয়ের অফিসে যায়। সেখানে গিয়ে লোকজনের নিকট হৃদয়ের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে পারে। গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা টাঙ্গাইল-গাজীপুরগামী মহাসড়কের পাকা রাস্তার ওপর রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছে। তখন পরিবারের লোকজন হৃদয়ের লাশের সন্ধান করলে উক্ত অফিসের লোকজন জানায় যে, হৃদয়ের লাশ শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে হৃদয়ের লাশ শনাক্ত করে।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, সংবাদ পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ও হৃদয়ের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। বাদী এজাহারে অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টা হতে শনিবরি বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার মধ্যে যেকোনো সময় অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা একই উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কোনাবাড়ী থানাধীন কোনাবাড়ী সাকিনস্থ গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড ফ্যাক্টরির ভেতরে হৃদয়কে নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই লিটন বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে খবর আসে একজন চোর ফ্যাক্টরির দেয়াল টপকে ভেতরে আসার সময় ড্রেনে পড়ে আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতাল থেকে জানান, ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা শোনার পর কারখানায় অভিযান চালিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ এবং হত্যায় ব্যবহৃত অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হই এটি হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, কারখানার ভেতরে হৃদয়কে নির্যাতন করার ফুটেজ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতেই সে মারা যায়। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে শনিবার সকালে এম্বুলেন্সে করে তার লাশ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে কারখানার সবাই পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ঘটনাটি জানতে পেরে বিক্ষোভ করে।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status