শেষের পাতা
অগ্নিঝরা জুলাই
এনসিপি’র জুলাই পদযাত্রা শুরু, দল পরিবর্তনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান ঘটেনি
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের মায়ের দোয়া নিয়ে এনসিপি’র জুলাই পদযাত্রা শুরু
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান একটি দল পরিবর্তন কিংবা ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য ঘটেনি। অভ্যুত্থান ঘটেছিল একটি গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা অনেকে মনে করি জুলাই আন্দোলন ছিল সরকার পতনের আন্দোলন। কিন্তু এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আমাদের মাঝেও কিছু হতাশা রয়েছে, কারণ আমরা এখনো সম্পূর্ণ বিচার দেখতে পারিনি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে যে সংস্কার হওয়ার কথা তা সম্পূর্ণরূপে আমরা দেখতে পারিনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে এসে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিতে চাই যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকেন জুলাই আন্দোলনে যারা রাজপথে নেমে এসেছিল তারা ঘরে ফিরে গিয়েছে, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি বাংলার প্রতিটি পথে-প্রান্তে আমরা যাবো, বাংলার ছাত্র-জনতা, তরুণ-শ্রমিকদের আবারো রাজপথে নেমে আসতে আহ্বান জানাবো। আমরা ৩রা আগস্ট ঢাকায় দেশের জনগণ, শ্রমিকদেরকে সঙ্গে নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য আবারো আন্দোলন শুরু করবো।
নাহিদ বলেন, আমাদের যে ৩টি দাবি ছিল, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান। আবু সাঈদের কবরের পাশ থেকে তা পুনর্ব্যক্ত করছি। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে।
এ সময় এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, দেশ গড়তে বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে জুলাই পদযাত্রার অনুষ্ঠানিক সূচনা জুলাইয়ের প্রথম শহীদ বীর যোদ্ধা শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে রংপুরের পীরগঞ্জ হতে আমরা শুরু করছি। আপনারা জানেন হাজার মানুষের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। সে নতুন বাংলাদেশ গড়তে পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুন বন্দোবস্তের জন্য মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা গণহত্যা সংঘটিত করেছে, বাংলাদেশের উপর মানবতাবিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের পুরনো মুজিববাদী সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এর সবকিছুর মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আবু সাঈদের কবর এমন এক জায়গা যেখানে আমরা দ্রোহের শক্তি পাই। আবু সাঈদের কবর এমন এক জায়গা যেখান থেকে গোটা বাংলাদেশকে আমরা বিনির্মাণ করার শক্তি পাই। সেই আবু সাঈদের কবরের পাশে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। আবু সাঈদের কবরের মাটি ছুঁয়ে আজ আমরা শপথ করছি, যতদিন পর্যন্ত না নতুন বন্দোবস্ত ও মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠিত হবে, বাংলাদেশে সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন পর্যন্ত ছাত্র জনতার নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
আখতার বলেন, দেশব্যাপী গোটা জুলাই মাসসহ জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির পক্ষ থেকে জুলাই পদযাত্রা আমরা শুরু করেছি। গত বছর ১৬ই জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় নিরস্ত্র একজন ছাত্র যৌক্তিক দাবিতে যখন তার কণ্ঠ উঁচু করেছিল, সেই সময়ের স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদ আওয়ামী পাণ্ডা পুলিশের গুলিতে সেই ছাত্র আবু সাঈদকে শহীদ হতে হয়। সেই আবু সাঈদের সমাধি জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জুলাই পদযাত্রা শুরু করলাম।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা। এ সময়, কবর জিয়ারত শেষে তারা আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ গেট থেকে পদযাত্রা নিয়ে এনসিপি নেতারা নগরীর লালবাগ, শাপলা চত্ব্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে পথসভা করবেন। এরপর তাদের পদযাত্রা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করবে।
আবু সাঈদের ব্যানার সরিয়ে এনসিপি’র ব্যানার, শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ গেটের সামনে থাকা বিলবোর্ড থেকে আবু সাঈদের ব্যানার সরিয়ে এনসিপি’র ব্যানার সাঁটানোর প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবি’র আবু সাঈদ গেটের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি চলমান থাকা অবস্থায় এনসিপি’র নেতৃবৃন্দরা ব্যানারটি সরিয়ে ফেলেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ রংপুর জুড়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, গত বছরের ১২ আগস্ট আমি কয়েকজনের সহযোগিতা নিয়ে বিলবোর্ডে আবু সাঈদের ব্যানারটি লাগিয়েছিলাম। তৎকালীন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা তার ক্ষমতাবলে আবু সাঈদের জন্য বিলবোর্ডটি ফ্রি করে দেন। পরে ঝড়-বৃষ্টির কারণে ব্যানারটি নষ্ট হয়ে যায়।
অবস্থানরত বেরোবির গণিত বিভাগের ইমরান শিক্ষার্থী বলেন, আবু সাঈদ কোনো একক দলের ব্র্যান্ড নয়। সে জাতীয় শহীদ, জাতীয় বীর। এর আগে এখানে আবু সাঈদ চত্ত্বর নামে একটি ব্যানার ছিল। সেখানে এনসিপি’র ব্যানার লাগানোর কারণে আমরা স্থানীয় নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছি দুপুর ২টার মধ্যে ব্যানারটি সরিয়ে ফেলতে এবং নিঃশর্ত শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু তারা এসে টালবাহানা করে এবং বলে এটি নাকি প্রিন্টিং মিসটেক। এতো বড় দল যদি সামান্য একটি ব্যানার নিয়েই এত বড় ভুল করে তাহলে তারা আগামীতে সংসদে যেতে চায়, সেখান থেকে তারা দেশ কীভাবে সামলাবে। দল সামলাবে কীভাবে।
এনসিপি’র রংপুর মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর নয়ন বলেন, আমরা যাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সে ভুলবশত খেয়াল না করে এ ভুলটি করে বসে। কাল রাতে যখন ব্যানারটি এখানে লাগানো হচ্ছিল আমরা কেউ জানতাম না আসলে। যখনই আমরা জানতে পেরেছি, তাৎক্ষনিক আমরা লোক লাগিয়ে ব্যানার খোলার ব্যবস্থা করেছি। আবু সাঈদ শুধু এনসিপি’র না তিনি বাংলাদেশের আইকন