প্রথম পাতা
এখনো খালেদা জিয়ার নামে ৩০ মামলা
রাশিম মোল্লা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবারবিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দীন সরকার পতনের একদিন পর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের সাজা মওকুফে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। গত ৩রা সেপ্টেম্বর মানহানির পাঁচ মামলা থেকেও খালাস পান তিনি। সব মিলিয়ে গত এক মাসে ৭টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। এখনো আছে ৩০টি মামলা। বিচারাধীন ৩০টি মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়েই হাঁটছেন দলটির আইনজীবীরা। তাদের প্রত্যাশা শিগগিরই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলাগুলো থেকে পুরোপুরিভারে মুক্তি পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিএনপি’র আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মানবজমিনকে বলেন, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ৩৭টি মামলা করেন। আসলে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা আছে, তার সবই ভিত্তিহীন। দেশে আইনের শাসন কায়েম থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন পাঁচ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। বাকি যে মামলাগুলো আছে, সেসব মামলা থেকেও তিনি শিগগিরই আইনগতভাবে মুক্তি পাবেন।
২০০৭ সালের ৯ই ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত এই মামলায় ১২ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষীকে হাজির করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুদক সাক্ষীদের হাজির করেনি বলে জানান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা এডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দুদক সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। যে কারণে আদালত এই মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর রেখেছেন। এ ছাড়া আগামী ৩১শে অক্টোবর হত্যা, নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা ১১ মামলার তারিখ রয়েছে। ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা পরিচালনাকারী খালেদার জিয়ার আইনজীবী এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার মানবজমিনকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে তার নামে হওয়া কোনো মামলারই ভিত্তি নেই। বিগত সময় বিচার বিভাগে সরকারের প্রভাব থাকায় আইনের শাসন ছিল না। যে কারণে ভিত্তিহীন মামলাগুলোও চলেছে। কিছু কিছু মামলা প্রয়োজন মতো দ্রুতগতিতে তারিখ পড়েছে। আবার কোনো কোনো মামলায় স্লো গতিতে চলেছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের উচিত খালেদা জিয়ার মামলাগুলো দ্রুত শুনানি করে শেষ করা।
খালাস পাওয়া ৫টি মামলার মধ্যে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত চারটি এবং অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত একটি মামলা খারিজ করে তাকে খালাসের আদেশ দেন। মামলার বাদীরা আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। কয়েক বছর আগে মামলার বাদী এবি সিদ্দিকী মারা গেছেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে আদালত তাকে মামলাগুলো থেকে খালাসের আদেশ দেন। ২০১৬ সালের ৩০শে আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী চারটি মামলা করেন।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ঋণখেলাপি ও মানহানির মতো অভিযোগে মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৫ সালে। পুলিশ, সরকারি দলের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেন। ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থায় ৪টি মামলা হলেও বাকিগুলো পরবর্তী সময়ের।
আদালত ও আইনজীবীদের দেয়া তথ্যমতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখনো বিচারাধীন মামলা রয়েছে তিনটি, স্থগিত ১৪টি, আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে ৩টির, বাকিগুলো তদন্তাধীন রয়েছে। অন্যান্য মামলায় জামিনে আছেন খালেদা জিয়া।
আইনজীবীদের দেয়া তথ্যমতে, খালেদা জিয়ার ৩৭টি মামলার মধ্যে দুর্নীতির পাঁচটি, মানহানির ৫টি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও ঋণখেলাপির একটি করে। বাকিগুলো হত্যা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ‘মিথ্যা’ জন্মদিন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। ঢাকায় ২৮টি ও ঢাকার বাইরে ৯টি মামলা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মামলার তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক-এগারো পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৫ সালে। ২০১৩, ১৪, ১৬ সালেও বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। ঢাকাসহ কুমিল্লা, খুলনা, নড়াইল ও পঞ্চগড়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা এসব মামলা করেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির এই চারটি মামলা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছিল।
অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে কুমিল্লায় তিন মামলা, ঋণখেলাপির অভিযোগে মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা, গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা, ২০১৪-১৫ সালে হত্যার অভিযোগে মামলা, রাজধানীর দারুস সালাম থানায় নাশকতার ৮ মামলা, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৩ মামলা, ঢাকার বাইরে মানহানির মামলা, খুলনায় অগ্নিসংযোগের মামলা, পঞ্চগড়ে নাশকতার মামলা, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট জয়নুল আবদীন বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭ মামলার সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করা উচিত।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে।
যারা এই সব ভুয়া মামলার বাদী ছিল তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক,
বেগম জিয়ার নামে যাঁরা মানহানি মামলা করেছিল! তাঁরা কি এখনো দেশে আছে, নাকি পালিয়েছে?
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করা উচিত।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করা উচিত।