প্রবাস
মালয়েশিয়ার ন্যানো স্যাটেলাইট আবিষ্কার ও গবেষণায় বাংলাদেশি ড. তারিকুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া
(২ সপ্তাহ আগে) ২২ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:০২ অপরাহ্ন
মালয়েশিয়ায় গবেষণা, উদ্ভাবন ও বাণিজ্যিকীকরণ প্রদর্শনী ২০২৪ এর অন্যতম সেরা আকর্ষণ ছিলো বাংলাদেশি প্রবাসী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামের গবেষণা প্রকল্প 'ন্যানো স্যাটেলাইট কমপ্যাক্ট সি-ব্যান্ড প্যাচ অ্যান্টেনা'। যা মালয়েশিয়ার ন্যানো স্যাটেলাইট পরিচালনায় এই প্রথম কোনো বাংলাদেশির মাইলফলক অর্জন।
মালয়শিয়ার খ্যাতনামা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) সম্প্রতি এ গবেষণা, উদ্ভাবন ও বাণিজ্যিকীকরণ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ইউকেএমের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (পরিকল্পনা ও কর্পোরেট উন্নয়ন), অধ্যাপক দাতো ড. রোসলি বিন রাজিকান এর সভাপতিত্বে টেকনোপলিস সাইবার একাডেমি (এএসটি) এর অডিটোরিয়াম হলে এ প্রদর্শনীর পর্দা উন্মোচিত হয়।
এ বছরের আলোচ্য বিষয় ছিলো 'টেকনোলজির কমার্শিয়ালাইজেশন এবং উদ্ভাবন টেকসই গবেষণা।' এ প্রোগ্রামে তিনি ইউকেএম এর ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির সেরা ১০টি বাণিজ্যিক পণ্য উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনীতে অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সেরা গবেষণা প্রজেক্ট গুলোর বাণিজ্যিকীকরণ, ইন্ডাস্ট্রি কোলাবোরেশান এবং গবেষণা পত্র শীর্ষক সেমিনার আয়োজিত হয়। প্রদর্শনীর সেরা ১০ বাণিজ্যিক প্রজেক্টে স্থান পাওয়া অন্যতম আকর্ষণীয় গবেষণা প্রজেক্ট হলো ন্যানো স্যাটেলাইটের জন্য তৈরি করা কমপ্যাক্ট প্যাচ অ্যান্টেনা যা সি-ব্যান্ডে পরিচালিত হয়।
এই প্যাচ অ্যান্টেনাটি জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কর্তৃক তৈরি করা একটি কিউবস্যাটেলাইটে (ন্যানো স্যাটেলাইট) ইনস্টল করা হয়েছে, যা গত ২৪ মার্চ ২০২২ তারিখে রাত ৯:১০ (জেএসটি) এ আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন (আইএসএস) থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। স্যাটেলাইট মিশনে সি-ব্যান্ড কমিউনিকেশন বোর্ড ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ২০ এমবিপিএস উচ্চ গতির ক্ষমতা সম্পন্ন ডেটা ডাউনলিংক পাওয়া যায়। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এই সি-ব্যান্ড এন্টেনা, মোবাইল গ্রাউন্ড মিশনে ওয়ান (১) এমবিপিএস পর্যন্ত ডাউনলিংক স্পিড প্রদর্শন করে যা মূল গ্রাউন্ড স্টেশনে একই ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহার করা হয়।
প্রস্তাবিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মাইক্রোস্ট্রিপ অ্যান্টেনা সিস্টেমে কোএক্সিয়াল ফিড টেকনিক ব্যবহার করা হয়। এর গঠনগত আকৃতিতে একটি অপ্রতিসম বর্গাকার প্যাচ এবং একটি প্যাসিভ আয়তকার স্ট্রিপ রয়েছে। এটি সহজেই কিউবস্যাটেলাইটের যে কোনো আকারের ধাতব বা অধাতব পৃষ্ঠে সংযুক্ত করা সম্ভব। এটিই বিশ্বের প্রথম সি-ব্যান্ড, উচ্চ গেইন, কমপ্যাক্ট, রাইটহ্যান্ড সার্কুলার পোলারাইজড ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টেনা যা সরাসরি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি থেকে কমার্শিয়াল স্যাটেলাইট পরিচালনায় ব্যবহার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার গবেষণা এবং আবিষ্কারের দিক থেকে অন্যতম সেরা মাইলফলক অর্জন করেছে এই কমপ্যাক্ট সি-ব্যান্ড প্যাচ অ্যান্টেনা ।
সেরা এই প্রজেক্টটির পরিচালনায় ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়শিয়ার অন্যতম শীর্ষ গবেষক এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম যিনি বর্তমানে ইউকেএম-এর ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক এবং সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। একই সাথে তিনি জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কর্মরত আছেন। সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, তিনি নেটওয়ার্কিং এবং টেলিকমিউনিকেশন’ শাখায় বিশ্বের শীর্ষ ২% বিজ্ঞানীদের একজন।
এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সাল থেকে এই ধরনের বিজ্ঞানীদের ক্যারিয়ার লং এবং সিংগেল ইয়ারের ক্যাটাগরিতে তালিকা প্রকাশ করে থাক। ২টি ক্যাটাগরিতেই ড. ইসলামের নাম একাধারে ২০২০ সাল থেকে বর্তমান অবধি নথিভুক্ত হয়ে আসছে। প্রতি বছর আগের বছরের অর্জনের ভিত্তিতে র্যাংক আপডেট করা হয়। এই র্যাংকিংটি সাইটেশন মেট্রিক্স যেমন: এইচ-ইনডেক্স, কো অথর সংশোধিত এইচএম-ইনডেক্স, সাইটেশন এবং সি -স্কোরের উপর ভিত্তি করে করা হয়ে থাকে যা স্কোপাস ডেটাবেস থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে।
অধ্যাপক তারিকুল ইসলামের অর্জনের ঝুলিতে আরো রয়েছে প্রায় ৬০০টি গবেষণা প্রবন্ধ, ২৫০ কনফারেন্স আর্টিকেল, গবেষণামূলক বই, যাতে অ্যান্টেনা, মেটাম্যাটেরিয়াল এবং মাইক্রোওয়েভ ইমেজিং-এর মতো বিষয় গুলো নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ড. ইসলামের গবেষণা প্রোটোটাইপ দিয়ে ২৫টি পেটেন্টের আবেদন দাখিল করা আছে এবং ইতোমধ্যে ৫টি পেটেন্ট এর আবেদন গৃহীত হয়েছে।
বর্তমানে তিনি একটি গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা তার তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি গবেষকও রয়েছেন। ইতিমধ্যে তার তত্ত্বাবধানে ৩৫ জন ছাত্র পিএইচডি ডিগ্রী এবং ২৫ জন ছাত্র এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এছাড়াও, ১০ জনেরও বেশি পোস্টডক্টরাল এবং ভিজিটিং গবেষকগণ তার তত্ত্বাবধানে গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।
শুধু তাই নয়, ড. ইসলাম একজন চার্টার্ড প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার (সিইঞ্জ), আইইইই এর সিনিয়র সদস্য, যুক্তরাজ্যের আইইটি-এর ফেলো, এবং জাপানের আইএইআইসিএই-এর সিনিয়র সদস্য। তার গুগল স্কলার সাইটেশন সংখ্যা প্রায় ২৭,০০০ এবং তার এইচ-ইনডেক্স ৬৯।
এছাড়াও ড. ইসলামের তত্ত্বাবধানে একটি উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন আধুনিক মানের অ্যান্টেনা ল্যাবরেটরি (স্টেট অফ দ্যা আর্ট) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা ৪০ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি পর্যন্ত অ্যান্টেনা ডিজাইন এবং টেস্টিং সুবিধা প্রদান করে থাকে। ইতিপূর্বে তিনি আইইটি ইলেকট্রনিক্স লেটারের সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও, বর্তমানে তিনি সেন্সরস এবং ন্যানোম্যাটেরিয়ালস জার্নাল এর গেস্ট সম্পাদক, আইইইই এক্সেস-এর সহযোগী সম্পাদক, এবং স্প্রিঙ্গার নেচার এর 'সাইন্টিফিক রিপোর্টস' জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য হিসেবে কর্মরত আছেন।
আমরা তো পরে আছি, বাংলাদেশ স্বাধীন কে করেছে এটার তর্ক বিতর্ক নিয়ে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের উন্নয়ন বোঝে না,তার চেয়ে বেশি বোঝে নিজের পকেটের উন্নয়ন।যার ফলে দেশ যা হওয়ার তাই হয়েছে।কি খারাপ লাগছে এই কথা শুনে, এটাই চরম সত্য কথা।
কি যে বলার দরকার বুঝতে পারছি না। এদেশের ছেলেরা বিশ্বের নানা প্রান্তে বহু অসাধ্য সাধন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অকল্পনীয় অবদান রাখলেও শুধু মাত্র যথাযথ মূল্যায়ন এবং পিষ্টপোষকতার অভাবে নিজ দেশের মানুষের জন্য কিছুই করতে পারছে না। এমতাবস্থায় জনাব ইসলামকে Congratulations জানিয়ে সম্ভব হলে বাংলাদেশের জন্য কিছু করার অনুরোধ করছি।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নীতিশাস্ত্র ও মরা কাহিনী ধরে রাখুক! প্রজন্মের চিন্তা বাদ দিয়ে শিক্ষকদের চাকরি বহাল যেন থাকে। পুথি সাহিত্য ছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আধুনিক চিন্তাধারায় পরিবর্তন হবে না।
Congratulations-বিনীত আবেদন থাকলো বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করুন।