শেষের পাতা
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কারণে উত্তেজনা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবারপরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এএইএম এনায়েত হোসেন তিন মাস অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আসেননি। ঢাকায় বসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়েছেন। এই অবস্থায় গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ কার্যালয়ে গেলে ভিসিকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। আগে থেকে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৬ বছর। এখনো চৌহাট্টস্থ অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কেবলমাত্র দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। গত ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিন ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ছাত্র-জনতা। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি কক্ষও। এরপর থেকে ভিসি ও রেজিস্ট্রার ক্যাম্পাসে না এসে বাইরে অবস্থান করছিলেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- প্রায় তিন মাস বাইরে থাকার পর গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ নিয়ে ক্যাম্পাসে নিজের কার্যালয়ে যান ভিসি প্রফেসর ড. এনায়েত হোসেন। খবর পেয়ে চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতনভাতা প্রদানের জন্য আন্দোলনে থাকা ২৪২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভিসি’র কার্যালয়ে ছুটে যান। তারা গিয়ে নিজ কার্যালয়েই ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে তারা ভিসিকে নিয়ে হলরুমে এসে অবরুদ্ধ রাখেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুপুরের দিকে সেখানে যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ফিরে এসে ক্যাম্পাসের চত্বরে অবস্থান নেন। তারা বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য স্লোগান দেয়। আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন- ৫ই আগস্টের পর থেকে ভিসি একবারের জন্য ক্যাম্পাসে আসেননি। অথচ আজ তিনি পুলিশ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা না করে ভিসি নিজের কার্যালয়ে বসার কারণে এমন ঘটনা ঘটে। তাদের মূল দাবি হচ্ছে দুটি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- প্রায় দুই বছরের বকেয়া বেতন প্রদান ও অন্যটি হচ্ছে চাকরি স্থায়ীকরণ। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দাবিও তারা উত্থাপন করেছে। এতদিন ভিসি ক্যাম্পাসে না থাকলেও প্রতিদিনই এসব দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন। ভিসি’র ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ৫ই আগস্ট ভাঙচুরের ঘটনার কয়েক দিন পর আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ছাড়া ৫ই আগস্ট সংঘটিত হওয়া ভাঙচুরে ঘটনারও কোনো তদন্ত হয়নি। এ কারণে গতকাল ভিসি এনায়েত হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ নিয়ে এসে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর ভাঙচুরের স্থল পরিদর্শন করেন তারা। আর এ কাজ করার সময়ই আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আন্দোলনে থাকা কর্মচারী নুরুল আমীন জানিয়েছেন- ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না। এ কারণে তারা মানবেতন জীবনযাপন করছেন। গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তারা আন্দোলন করছেন। কিন্তু ভিসি তাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি। এ কারণে আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এদিকে- দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তারা গিয়ে ভিসির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এসে আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন ভিসি প্রফেসর ড. এনায়েত হোসেন। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন; এ বিষয় নিয়ে তিনি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করবেন। ওই সভায় কর্মকর্তাদের দাবি উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তক্রমে বিষয়টি সুরাহা করবেন। তার এই কথায় আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আশ্বস্ত হন। কর্মকর্তা কাজী মাসুদ জানিয়েছেন, ভিসি’র আশ্বাস তারা মেনে নিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের পাশাপাশি বকেয়া বেতন প্রদানের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করেন তিনি। নতুবা তারা পুনরায় আন্দোলনে যাবেন বলে জানান। এ ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের আন্দোলন ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা উপ-পুলিশ কমিশনার এবিএম আশরাফউল্লাহ তাহের জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এজন্য সময় দিতে হবে। এই সময় দিতে আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাজি হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন- ২০১৮ সালে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর প্রথম ভিসি প্রফেসর ড. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী ২৪২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি চলে যাওয়ার কারণে এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। নতুন ভিসি প্রফেসর ড. এনায়েত হোসেন আসার পর থেকে তাদের বকেয়া, বেতন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কার্যক্রম চালাতে ২৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও তাদের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সংকট দেখা দিয়েছে। দিন দিন এ সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। তবে ভিসি জানিয়েছেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক লোকবল নিয়োগসহ নানা বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তিনি কাজ করবেন। বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।