ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

জানতে হবে মানবাধিকার

রাকিব হাসান সেলিম
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

সৃষ্টির আদি থেকেই প্রকৃতি, বর্ণ ও লিঙ্গভিত্তিক ভেদ ছাড়াও শক্তি, বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনভিত্তিক পার্থক্য মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। আবার সেই মানুষের মধ্যে মানুষই জ্ঞান-বুদ্ধি, ধর্ম ও দর্শনের সাহায্যে অভেদ সন্ধান করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানবজাতির যে ক্ষয় হয় তা বিশ্ব বিবেককে ভাবিয়ে তোলে। অত্যাচার ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বশেষ উপায় হিসেবে মানুষকে যেন বিদ্রোহ করতে না হয় সেই  উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলো জাতিসংঘ এবং ঘোষিত হলো সর্বজনীন মানবাধিকারের সনদ। বিশ্বের অন্য যেকোনো আন্তর্জাতিক দলিলের তুলনায় মানবাধিকার ঘোষণার প্রভাব গভীর এবং স্থায়ী। ১৯৪৮ সালে গৃহীত হওয়ার পর থেকে ঘোষণাটি সর্বকালের সার্বিক পরিচিতি এবং প্রভাবশালী দলিলসমূহের একটিতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সনদটি গৃহীত হওয়ার পর স্বাধীনতাপ্রাপ্ত প্রায় প্রত্যেক রাষ্ট্রের সংবিধানে মানবাধিকারসমূহ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মর্যাদা সহকারে স্থান পেয়েছে। কোনো কোনো রাষ্ট্রের সংবিধানে বিশেষভাবে উল্লিখিত না হলেও কিছুটা প্রতিফলন রয়েছে মানবাধিকার ঘোষণার।

মানবাধিকার স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত এক অমৃত উপহার যার মূলে রয়েছে মানুষের মর্যাদা, সমতা আর ন্যায়বিচার। সমগ্র বিশ্বের মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য সুযোগ-সুবিধাগুলোকে মানবাধিকার মর্মে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সংবিধান পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোই মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

সংবিধানে মানবাধিকারসমূহ মৌলিক অধিকার আকারে সন্নিবেশিত। যে অধিকার না থাকলে মানবজীবন পূর্ণ হয় না, তাই মৌলিক অধিকার। মৌলিক মানবাধিকার পাঁচ প্রকার যথা-অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য। এ ছাড়াও নিম্নবর্ণিত অধিকারসমূহকে মানবাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে: বাঁচার অধিকার * অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতির অধিকার * বাধ্যতামূলক শ্রম, দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকার অধিকার * স্বাধীনতার অধিকার * নিরাপত্তার অধিকার * আটক ব্যক্তিদের মানবীয় আচরণ পাবার অধিকার * অবাধে চলাফেরা ও বসবাসের অধিকার * নিরপেক্ষ বিচার পাবার অধিকার * আইনের ভূতাপেক্ষিক কার্যকারিতা থেকে রক্ষা পাবার অধিকার * ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার * ব্যক্তিগত ধর্ম ও চিন্তা-চেতনার অধিকার * ব্যক্তিগত মতামত পোষণ ও তা প্রকাশের অধিকার * বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষজনিত প্রচারণা নিষিদ্ধ হওয়ার অধিকার *অবাধ সমাবেশের অধিকার জনকল্যাণমূলক সমিতি প্রতিষ্ঠার অধিকার * বিবাহ করার ও পরিবার গঠনের অধিকার * শিশু অধিকার * নারী অধিকার * সংখ্যালঘিষ্ঠের অধিকার *নাগরিকত্বের অধিকার * সম্পত্তির অধিকার * নিজ দেশের অভ্যন্তরে অবাধ প্রবেশাধিকার * বাধ্যতামূলক দেশত্যাগ থেকে নিষ্কৃতির অধিকার ঋণের দায়ে আটক হওয়া থেকে নিষ্কৃতির অধিকার * রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের অধিকার।মানবাধিকার চর্চা: মানবাধিকার চর্চা হতে হবে সর্বত্র এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সঙ্গে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এই অধিকার  রক্ষণাবেক্ষণ করা।

মানবাধিকারের মূলত: ২টি উপাদান (১) এই অধিকার জন্মগত, নতুনভাবে অর্জন করা যায় না। (২) এটা কেড়ে নেয়া যায় না- এটা অবিচ্ছেদ্য যুগে যুগে মানবাধিকারের অমোঘ বাণী প্রচার, প্রসার ও চর্চার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন চুক্তি, দলিল, সংবিধান, আইন ও বিভিন্ন পারস্পরিক সমঝোতা স্মারকে মানবাধিকারকে সম্মিলিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই কিছু অধিকার আছে। এ অধিকারগুলো লালন করার এবং প্রয়োগ করার সার্বিক অনুমোদন আছে। এক কথায়, মানবাধিকার হলো সকল প্রকার ভীতি ও অভাব মুক্ত। এ অধিকার আইনসঙ্গত ভাবে হরণযোগ্য নয়। এ অধিকার সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। 

যেকোনো প্রকৃতির অন্যায় বা অপরাধকেই আমরা সাধারণভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন মনে করি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে একটি অপরাধ বা অন্যায় ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। যদি দেখা যায়, রাষ্ট্র যন্ত্র বা রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কেউ তার পদ বা ক্ষমতা ব্যবহার করে ওই অন্যায় কাজটি সংঘটিত করেছে অথবা ওই অন্যায় কাজটি প্রতিহত করতে রাষ্ট্রের অবহেলা ছিল, তাহলে সেটিই হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। অর্থাৎ মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে তিন ধরনের দায়িত্ব যথা মানবাধিকারকে সম্মান করা, রক্ষা করা এবং পূরণ করা বা এর কোনো একটির যদি ঘাটতি হয় তবেই আমরা তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলতে পারি। পরিবার, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। যেমন, একটি পরিবারের একটি কন্যা সন্তানকে তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে সুযোগ না দিয়ে, লেখাপড়া না করিয়ে যদি তাকে অপরিণত বয়সে বিবাহ দেয়া হয় তখনই উক্ত কন্যা সন্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।  স্বামী-স্ত্রীকে অধিকার না দিলে, সমাজ তার দায়িত্ব পালন না করলে কোনো সংগঠন কোনো ব্যক্তি বা তরুণ সমাজকে ভুল তথ্য দিয়ে প্ররোচিত করে বিপদগামী করে হত্যা, খুন ও অরাজকতা সৃষ্টি করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা সর্বাধিক। 

সারা বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের প্রকোপ আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। আজ মানবাধিকার ভূ-লুণ্ঠিত। মানুষ তাদেরও অধিকার থেকে পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে যাতে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। সন্ত্রাস, মাদক আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান। মাদকের আগ্রাসন  থেকে আমরা কোনোভাবেই রক্ষা পাচ্ছি না। তরুণ সমাজ মাদকের কবলে পড়ে আজ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

মানবাধিকার নীতি: বাংলাদেশের মানবাধিকার আমাদের সংবিধানের ৩টি মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যেমন-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার আমাদের স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। যার সঠিক অর্জন আমাদের মানবিক উন্নয়নের মূল লক্ষ্য। জীবনের অধিকার, স্বাধীন ভাবে কথা বলার, চলাফেরা করার অধিকার ইত্যাদি। সকলের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইত্যাদি অধিকারও মানবাধিকার। এই অধিকারসমূহ একটি অন্যটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, করিম নামের একজন লোক। তিনি যদি শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন অর্থাৎ শিক্ষাজ্ঞান না থাকার দরুন কোনো ওষুধের সেবন বিধি বা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ জানা সম্ভব না হওয়ায় অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। ফলে তিনি যেমন পরনির্ভরশীল হচ্ছেন তেমনি অন্যের অসাবধানতায় তার বড় রকমের  স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। এক্ষেত্রে তার স্বাস্থ্যের অধিকার ব্যাহত হবে। অর্থাৎ শিক্ষার অধিকারের সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্যের অধিকারের সম্পর্ক। অথবা কিশোরী লিপির কথা ধরা যাক। ক’দিন ধরে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ কারণ স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে কিছু বখাটে ছেলে প্রতিদিন তাকে বিরক্ত করে। লিপি স্কুলে যেতে ভয় পায়। অর্থাৎ শিক্ষার সঙ্গে রয়েছে নিরাপত্তার সম্পর্ক। 

মানবাধিকার মানুষের জন্মগত অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকারের বঞ্চনা বা লঙ্ঘন বাংলাদেশে কখনোই কাম্য নয়। দেশ আজ লক্ষণীয় মাত্রায় উন্নতি করলেও নিয়তির নির্মম পরিহাস আমরা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণি আমাদের বঞ্চিত করছে। উক্ত অবস্থায় মানবাধিকার কর্মীদের নিজেদের সচেতন হতে হবে পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে হবে। সন্ত্রাস ও মাদকের সন্ধান পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করতে হবে। বাংলাদেশ মানবাধিকার  কমিশন ও রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭  থেকে ৪৪ পর্যন্ত মৌলিক অধিকারের সমূহ সন্নিহিত আছে। উক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মানবাধিকারগুলোর কথাই উক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে; তাই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। উক্ত মৌলিক অধিকার বলবৎ করণের বিষয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৪ ও ১০২ (১) বর্ণিত আছে তাই উক্ত অনুচ্ছেদ যথাযথ ভাবে প্রয়োগ হলেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ মতে আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমতা অনুসরণ করে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। আইনের শাসন নিশ্চিত হলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। জনগণ যাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তার কারণ অনুমান করা ও প্রতিকার করা এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর যথাযথ প্রয়োগ করা মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো জনগণের মাঝে তুলে ধরা।

পারিবারিক, সামাজিকভাবে সর্বোপরি রাষ্ট্রীয়ভাবে মাদকবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা করা এবং মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলেই মাদকের ভয়াবহ ছোবলসমূহ থেকে সমাজকে রক্ষা করা যাবে।

সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক যাতে নিরপরাধ নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হইবে। মাদক ও সন্ত্রাস সংক্রান্ত মামলা প্রসিকিউশন কেস পর্যালোচনায় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নিরপরাধ, নিরীহ শ্রেণির লোকদেরকে বিভিন্ন মামলার আসামি করেও আদালতে প্রেরণ করা হয়। যাতে উক্ত নিরীহ ব্যক্তিদের পরিবার পরিজন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন অর্থাৎ তাহাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। 
পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত হলেই মানবাধিকার নিশ্চিত প্রতিষ্ঠা পাবে। 

লেখক: সদস্য, আলোর ইশকুল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রবা (প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশ চাই)
তথ্যসূত্র:
মানবাধিকার ও মানবাধিকার কর্মী  ও আইন এবং সালিশ কেন্দ্র (আসক)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
 

পাঠকের মতামত

Informative and good writing...

Wasi Azam
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status