ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

তারেক রহমান আসছেন

আতিকুর রহমান রুমন
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবারmzamin

‘এ যৌবন জল-তরঙ্গ রুধিবি কি দিয়া বালির বাঁধ?’-জাতীয় কবির কবিতার এই পঙ্‌ক্তির মর্মার্থ অনুযায়ী বাস্তবিকই বালির বাঁধ দিয়ে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ রোধ করা সম্ভব নয়। তরঙ্গের প্রবল অভিঘাতে সে বাঁধ কোথায় ভেসে যাবে, সূক্ষ্ম বালিকণা কোথায় হারিয়ে যাবে, তার ঠিক-ঠিকানা নেই। দীর্ঘ ৯ বছরের ঘটনাক্রম পর্যালোচনা করে, দেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতির সুলুক সন্ধান করে এ কথা আজ দৃঢ়তার সঙ্গে বলার সময় এসেছে যে, হৃষ্টবিত্তে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আর গরিমাময় সরব উত্থানকে রোধ করার সাধ্য এখন কারও নেই। কোনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তই আর হালে পানি পাবে না।

আমাদের স্মরণ আছে, কোন পটভূমিকায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন; কতোভাবে তাকে হেনস্তা করা হয়েছিল; কীভাবে, কী উদ্দেশ্যে তার ওপর একের পর এক মিথ্যা মামলা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল; নানা ঘৃণ্য অপবাদ তার বিরুদ্ধে সাজানো হয়েছিল; কতোটা নৃশংস নির্যাতন চালানো হয়েছিল; কোন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করেছিলেন; ক্ষমতাসীন প্রতিপক্ষের শত বিরোধিতা আর আইনের মারপ্যাঁচ উতরিয়ে কীভাবে তাকে সুদূর লন্ডনে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছিল।

আমাদের আরও স্মরণ আছে, গত ৯ বছরে এই দেশে কতো অন্যায়-অবিচারের ঘটনা ঘটেছে। বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে কীভাবে টুঁটি চেপে রুদ্ধ করা হয়েছে। কীভাবে নাগরিক অধিকারকে পদদলিত করা হয়েছে। হত্যা-ধর্ষণ-গুম-রাহাজানির কী রকম মহোৎসব চালানো হয়েছে। হামলা-মামলা দিয়ে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে কীভাবে মুক্তবুদ্ধির বিকাশকে স্তব্ধ করা হয়েছে। কতো ফ্যাসিস্টসুলভ বর্বরতায় বিরোধী মত-পথ-চিন্তাকে দলন করা হয়েছে। দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-গোষ্ঠী প্রীতির মাধ্যমে কীভাবে লুটপাট করে দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ করা হয়েছে; লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আর সেবাখাতে কর চাপিয়ে কীভাবে জনগণকে নিষ্পিষ্ট করা হয়েছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কীভাবে অসম ও অন্যায় চুক্তির মাধ্যমে এদেশের সহায়-সম্পদ, সার্বভৌমত্ব বিদেশি শক্তির পদতলে নিবেদন করার নির্লজ্জ প্রয়াস চলেছে। বিদেশি খুঁটির জোরে, পেশিশক্তি আর কূটকৌশলে জনগণের ভোটের অধিকার পর্যন্ত হরণ করা হয়েছে।

অধিকারহারা জনগণ দুঃখ-কষ্টে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেও তাদের চেতনার দরজা এখন উন্মুক্ত হয়ে গেছে। ৯ বছরের ঘটনা পরম্পরা থেকে তাদের অন্তরে সুস্পষ্ট ধারণা এসেছে- কী কারণে সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়েছিল কী কারণেই-বা বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল তার বিরুদ্ধে নিরন্তর অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার সবরকম ফন্দি-ফিকির-অপকৌশল-ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। জনগণের সহজ উপলব্ধি হলো- তারেক রহমানের মতো উঁচু মাপের সংগঠক, দেশপ্রেমিক ও জনদরদী নেতা সক্রিয় থাকলে দেশের মাটিতে এত অন্যায় সংঘটিত হতে পারতো না; এ দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার এবং সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার সুযোগ পাওয়া যেতো না। এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে তাকে দেশ ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার দীর্ঘপ্রয়াস। এই প্রয়াসের সূত্রপাত ঘটেছিল সেইদিন, যেদিন তৃণমূল মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়ে তিনি অনেক উঁচুমানের রাজনীতিক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনায় দাঁড়িয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি অপশক্তির অন্তর আত্মা সেদিনই কেঁপে উঠেছিল। এই তরুণ যদি রাজনীতিতে দৃঢ় কোনো ভিত্তি পায় তখন তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে? তিনি তো জনগণমননন্দিত হবেন; দেশ আর জনগণের স্বার্থ দেখবেন। তখন তাদের স্বার্থ যে মাঠেই মারা যাবে। তাদের পিছিয়ে পড়া রাজনীতি জনগণ গ্রহণ করবে না। রাজনীতির নামে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে লুটপাটের খেলা কিংবা বিদেশি প্রভুর স্বার্থ চরিতার্থ করে সেবাদাসের নিরাপদ সুখ ভোগ করা কোনোটাই যে সম্ভব হবে না। অতএব, ঠেকাও তাকে। রুদ্ধ করো তার বেগময় অগ্রযাত্রা। অভিন্ন স্বার্থের কারণেই দেশীয় অপশক্তির সঙ্গে সেদিন বিদেশি অপশক্তির গভীর মৈত্রী সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পথ ধরেই সৃষ্টি হয়েছিল লগি-বৈঠার তাণ্ডব আর ১/১১-এর গভীর সংকট। তারপরই গ্রেপ্তার করা হলো তারেক রহমানকে।

২০০৭ সালের ৭ই মার্চ সেই কালো দিবস, যেদিন রাতের অন্ধকারে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলো ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের ৬ নং বাড়ি থেকে। দেশবাসী বিস্মিত হলো। কী দোষ টগবগে ওই তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিকের? কোনো অভিযোগ নেই, ওয়ারেন্ট নেই, আচানক শুধু শুধু গ্রেপ্তার, তাও কিনা রাতের আঁধারে? দিনের বেলা গ্রেপ্তারে ভয় ছিল বুঝি? পাছে গণরোষে ১/১১-এর সেনাসমর্থিত সরকারের চৌকিদার-দফাদারদের দফারফা হয়ে যায়, এই শঙ্কায় কাঁপছিল তাদের বুক? অন্যায়কারীদের চিত্ত সবসময় দুর্বল হয়। তাই তো নিরস্ত্র-নিরপরাধ তরুণ এক রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করতে সামরিক আর পুলিশ বাহিনীর বিশাল বহর নিয়ে তারা হাজির হয়েছিল মইনুল রোডে। অবস্থাটা এমন, যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে সেনানিবাসে।
পরদিন ৮ই মার্চ তারেক রহমানকে সিএমএম আদালতে হাজির করা হলো। বিচারক এক মাসের আটকাদেশ দিয়ে তাকে কারাগারে প্রেরণ করলেন। কী তার দোষ, কী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তা কেউ জানেন বলে মনে হলো না।

এরপরই শুরু হলো ষড়যন্ত্রকারীদের আসল খেলা। তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিন্দা-মন্দ, অপপ্রচার আগে থেকেই চালানো হচ্ছিলো। তার কারণেই নাকি সিএনজি-অটোরিকশার মূল্য বেড়েছে। তার কারণেই নাকি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে; তিনি নাকি ধুমসে চাঁদাবাজি করছেন আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। তার রাজনৈতিক অফিস হাওয়া ভবন নাকি সমস্ত অপকাণ্ডের উৎস এমনি কতো কী! এবার এইসব অপপ্রচারের মালা গেঁথে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হলো গুনে গুনে ১৩টি মামলা। যারা তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছে ও চিনেছে, দেশের একটি বড় অংশের সেই তৃণমূল মানুষেরা শুনে তো হতবাক! যে মানুষ দিন নেই, রাত নেই অবিশ্রান্তভাবে সাধারণ মানুষের সেবা করে গেছেন, নিজ হাতে খাল কেটেছেন, বীজ-চারা সরবরাহ করে কৃষিতে প্রণোদনা দিয়েছেন, হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল সরবরাহ করে হতদরিদ্র মানুষকে পশুপালনে উৎসাহ যুগিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের কাছে মমতার হাত বাড়িয়েছেন, দরিদ্র-মেধাবী ছাত্রদের গোপনে সাহায্য করে উচ্চশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেছেন, অর্ধপঙ্গু রোগক্লিষ্ট অসহায় মানুষকে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছেন তিনি কেন খারাপ মানুষ হতে যাবেন? তার মা যখন প্রধানমন্ত্রী, তিনি তো মন্ত্রিত্ব বা এ ধরনের বড় কোনো পদ সহজেই বাগিয়ে নিতে পারতেন। কিংবা তা না করেও রাজধানীর বিলাসবহুল প্রাসাদে বসে যুবরাজদের মতো রাজকীয় সুখে দিনাতিপাত করতে পারতেন। তা না করে তিনি রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার জগদ্বিখ্যাত মরহুম পিতার মতোই মানুষকে উৎপাদনে উৎসাহ যুগিয়েছেন, উন্নয়নের উজ্জ্বল মনছবি এঁকেছেন, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এমন মানুষ তো দুর্নীতিবাজ হতে পারেন না! সাধারণ মানুষের মাথায় ঢোকে না। কেন তাহলে এমন হলো, কেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল!

এদিকে মইন-ফখর-এর ফ্যাক্টরিতে তৈরি মামলার সূত্র ধরে চললো তার ওপরে রিমান্ডের নামে নৃশংসতম নির্যাতন।
চোর-তস্কর-সন্ত্রাসীর সঙ্গেও যে নিকৃষ্ট আচরণ করে না কোনো পুলিশ প্রশাসন, তারেক রহমানের সঙ্গে সে রকম আচরণই করা হলো। দফায় দফায় তাকে নেয়া হলো রিমান্ডে, জিজ্ঞাসাবাদের নামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই তাকে নির্যাতন করা হলো। কখনো ইলেকট্রিক শক দিয়ে মর্মভেদী যন্ত্রণা দেয়া হলো। কখনো দুই হাত বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হলো। কখনো বহু উঁচুতে তুলে অকস্মাৎ বার বার মেঝেতে নিক্ষেপ করা হলো। রিমান্ড সেলের আরও চিরাচরিত বীভৎস অত্যাচার তো ছিলই। এইসব পাশবিক অত্যাচারের ফলে তার মেরুদণ্ডের ৩৩ হাড়ের ৬ ও ৭ নম্বর হাড় ভেঙে গেল। স্কন্ধদেশের হাড়েও ধরা পড়লো ফ্র্যাকচার। হাঁটুর সংযোগ স্থলের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেল। দিনের পর দিন আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে তিনি প্রায় স্থবির হয়ে পড়লেন। হুইলচেয়ারে উপবিষ্ট বেদনায় ক্লিষ্ট হয়ে যাওয়া তারেক রহমানকে দেখে সেদিন আদালত অঙ্গন পর্যন্ত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাজবন্দির ওপর এমন ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা সমকালীন ইতিহাসে আর কোথাও ঘটেছে বলে জানা যায় না। স্রেফ জবানবন্দির নামে নির্যাতন নয়, বরং তাকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই যে আক্রোশের সঙ্গে কু-পরিকল্পনা যুক্ত করে এমন নজিরবিহীন নিগ্রহ চালানো হয়েছিল তা  বোধসম্পন্ন প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে স্পষ্টতই ধরা পড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু স্রষ্টা যার সহায় তাকে নিশ্চিহ্ন করে সাধ্য কার? হাজার চেষ্টা-অপচেষ্টা চালিয়েও তারেক রহমানের নামে অভিযোগের ফিরিস্তি কায়েম করা যায়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তারা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তার দুর্নীতির সন্ধান পাননি। ১/১১-এর সেনা-সমর্থিত সরকারের সময় দুদক চেয়ারম্যান জেনারেল মশহুদ সাংবাদিকদের কাছে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগের কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে মামলাগুলো তার নামে দেয়া হয়েছিল তার কোনোটিতেই তিনি সরাসরি আসামি নন। কারণ তিনি প্রজাতন্ত্রের কোনো পদেই আসীন ছিলেন না কোনো সরকারি নথিতেই নেই তার স্বাক্ষর। মামলাগুলোর কথিত আসামিদের ধরে এনে পিটিয়ে সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ই ছিল তারেক রহমানকে ফাঁসানোর অস্ত্র। সে অস্ত্র ১/১১ সরকারের কোনো কাজেই আসেনি। ১৩টি মামলার মধ্যে ১১টি উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে যায়। কাফরুল থানায় দ্রুত বিচার আইনে ২০০৭-এর ১৭ই এপ্রিল যে মামলাটি হয়, তাতে তাকে ফাঁসাতে দু’বার আইন সংশোধন করেছিল ১/১১-এর অবৈধ সরকার। কিন্তু হাইকোর্ট তা আমলে নেয়নি। বাকি দুই মামলার মধ্যে ‘দিনকাল’ মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। অন্য মামলাতেও তারেক রহমান মূল আসামি নন। ১/১১ সরকারের উত্তরসূরি (এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের এজেন্ট?) আওয়ামী লীগ সরকারও তার কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার বা অর্থনৈতিক স্খলন শনাক্ত করতে পারেনি। সামপ্রতিক অতীতে সরকার যে মামলায় তার অনুপস্থিতিতে তাকে দণ্ড দিয়েছে তার পটভূমি আর কারণ সম্পর্কে দেশবাসী ভালোই অবগত।

১১ই সেপ্টেম্বর ২০০৮ বিলেতে পাড়ি জমানোর পর দেশবাসীর দোয়া, আল্লাহর রহমত, উন্নত চিকিৎসা আর পরিবার- পরিজনের সাহচর্যে কয়েক বছরে তারেক রহমান অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মাঝে মাঝে দলীয় কর্মীদের সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করেন, ইতিবাচক রাজনীতি তুলে ধরেন। কিন্তু দেশে যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে লাগাতার কদর্য অপপ্রচার চলছে, ক্ষমতার জোরে ইতিহাস-বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে, তাতে একজন সৎ ও সাহসী রাজনীতিক হিসেবে তিনি তো নীরব থাকতে পারেন না। এই পটভূমিতে তিনিও সমালোচনামূলক ছিটেফোঁটা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এতেই গাত্রদাহ হলো শাসক মহলের। প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তার বক্তৃতা প্রচার ও প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো আর ১টি মামলায় তার অনুপস্থিতিতেই তাকে দণ্ডিত করা হলো। এই দণ্ডের পর সরকারি মহল যতই আস্ফালন বা উল্লাস করুক, দেশপ্রেমিক মানুষ কিন্তু মোটেই চিন্তিত নয়। কারণ তারা ইতিমধ্যে বুঝে নিয়েছে তারেককে নির্বাচনে অযোগ্য করার যত কোশেসই করা হোক, অন্যায়ের প্রতিকার জনতার আদালতে একদিন হবেই হবে। তারা বরং প্রশ্ন তুলছেন, সুদূর লন্ডনে বসে তারেক রহমান কালে-ভদ্রে যে দু’একটা সমালোচনামূলক কথা বলছেন তাতেই যদি শাসকমহলের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে, তাহলে তিনি ফিরে এসে রাজনীতিতে সরব হলে এদের অবস্থা কী দাঁড়াবে? এ এক মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন বটে।

এবং শেষ পর্যন্ত সে রকমই কিন্তু ঘটতে যাচ্ছে। তারেক রহমানকে ফাঁসানোর সব অস্ত্রই এখন অকার্যকর, ভোঁতা। লবিং করে, ইন্টারপোল দিয়ে বা অন্যান্য নানা কায়দায় তারেক রহমানকে দেশে আনিয়ে নেয়ার কোশেস সাবেক সরকার কম করেনি। হয়তো উদ্দেশ্য নাগালের মধ্যে এনে আবারো বানোয়াট মামলার জটাজালে ফেলে তার রাজনৈতিক জীবন চিরতরে নিঃশেষ করে দেয়া। কিন্তু সেই অপচেষ্টা কোনো কাজে আসেনি।

উন্নত গণতন্ত্রের ধারক পশ্চিমা মহল তারেক রহমানের মতো সৎ আর দেশপ্রেমিক রাজনীতিকের ওপর পাশবিক নির্যাতনের নমুনা দেখেই বুঝে নিয়েছে পরিস্থিতিটা আসলে কী? এদিকে দেশের তৃণমূল জনগণের চোখের সামনে থেকেও ধোঁয়াশা কেটে গেছে। তারা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে কী কারণে তার ওপর এই অমানবিক নির্যাতন। সুধীসমাজ, বিদ্বজন, দেশদরদী মানুষরাও এতদিনে বুঝে গেছে তারেককে কারারুদ্ধ করার মূল রহস্য। শুধু তাই নয়, তার মতো একজন পজিটিভ ধারার রুচিবান গণমুখী মেধাবী রাজনীতিকের সন্ধান পেয়ে চমৎকৃত হয়েছে এবং আশায় আশায় দিন গুনছে। তারেক রহমানের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন-নিপীড়ন হয়ে উঠেছে যেন শাপে বর। তিনি যদি নিগ্রহের শিকার না হতেন, যদি ক্ষমতায় থাকতেন হয়তোবা এতদিনে সত্যিকার অর্থেই আমরা এক ডিজিটাল বাংলাদেশ পেতাম। যদি বিরোধী কাতারে থাকতেন তাহলে বোধকরি এতটা জনপ্রিয় হতে পারতেন না, যতটা হয়েছেন গত ১০ বছরে। তার বিরুদ্ধে সব অপপ্রচারের ‘অপ’ দুঃখের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, আর জ্বল জ্বল করে উদ্ভাসিত রয়েছে কেবল ‘প্রচার’। দেশ-বিদেশে সর্বাধিক আলোচিত হয়ে তার ইমেজ এখন গগনচুম্বী। দু’বছর কারা নির্যাতন ভোগ করে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু পরিণত হয়েছিলেন জাতীয় নেতায়। ১৩ বছর কারাবাস করে শেখ মুজিবুর রহমান হয়েছিলেন এদেশের বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা, সুদূর প্যারিসে নির্বাসিত থেকে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি হয়ে উঠেছিলেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহানায়ক, দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাস করে নেলসন ম্যান্ডেলা হয়ে উঠেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা ও মহান প্রেসিডেন্ট। আর নয় বছর অত্যাচার-নির্যাতন-দুঃখ-কষ্ট সয়ে প্রবাস কাটিয়ে তারেক রহমান হয়ে উঠেছেন...। উহ, কল্পনাই করা যায় না।

আমাদের স্মরণ আছে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ যখন মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় এলো, তখন ঢাকা মহানগর লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। আরাফাত রহমান কোকো রাজনীতিক ছিলেন না। ছিলেন ছোটখাটো ব্যবসায়ী। জিয়া পরিবারের সন্তান বলেই তার লাশকে সম্মান জানাতে মানুষের ঢল নেমেছিল রাজধানীতে। আর জিয়া পরিবারের সন্তান তারেক রহমান দুঃখের দহনে পুড়ে পুড়ে খাঁটি স্বর্ণে পরিণত হওয়া এক রাজনৈতিক জ্যোতিষ্কের নাম। ১৬ কোটি মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক তারেক রহমান যখন সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে দেশে ফিরবেন তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে?
আমি মানসচোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি-গোটা রাজধানী জুড়ে জনতায় সয়লাব; কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ হর্ষোৎফুল্ল মানুষের ঢল, চোখে-মুখে তাদের দীপ্ত প্রেরণা, দীপ্তকণ্ঠে তাদের মুহুর্মুহু গগনবিদারী স্লোগান। 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক

পাঠকের মতামত

লেখক তার লেখায় সুক্ষ ভাবে শেখ মুজিবকে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পবিত্র প্রামাণিক
২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ৭:১১ অপরাহ্ন

সত্যের জয় একদিন হবে ইনশাআল্লাহ্ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই সত্যি টা তুলে ধরার জন্য.

md kabir hossen
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৪:৫২ অপরাহ্ন

আল্লাহর ইচ্ছায় অতি দ্রুত, বীরের বেশে, রাজকীয় মুকুটে জনাব তারেক রহমান বাংলাদেশে আসবেন এটা বাংলাদেশের সব মানুষের মনের চাওয়া, তার আগমনের সময় আমি উপস্থিত থাকতে পারলে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করবো,আল্লাহ জনাব তারেক রহমানকে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিন। আমিন Md.Mizanur Rahman

Md.Mizanur Rahman
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৪:৪৭ অপরাহ্ন

লিখক তার সাবলীল বর্ণনায় জনাব তারেক রহমানকে নিয়ে যে লিখনি তুলে ধরেছেন তার কোথাও নয় বৎসরের দিন তারিখ খুঁজে পেলাম না। লিখক তারেক রহমান সাহেবের প্রবাস পাড়ি দেখিয়েছেন ১১ই সেপ্টেম্বর ২০০৮ । কিন্তু পুরো লিখায় নয় বৎসর নিয়ে লিখা। হয়তো হতে পারে আমারই বুঝার ভুল। ভুলটা ভেংগে দেয়ার জন্য শ্রদ্ধেয় লিখক মহোদয়ের নিকট অনুরুধ করছি।

ইফতেখার আলম
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৪:৪৬ অপরাহ্ন

স্বাগত জননেতা! তবে অনেক সাবধান থাকবেন সকলে, দেশি - বিদেশী শত্রুরা এখন অনেক তৎপর আগের চেয়ে , বাংলাদেশ কে ব্যর্থ করে দিতে, দেশপ্রেমিক শহীদ জিয়ার যোগ্য সন্তান এর ভাগ্য এবং বাংলাদেশের ভাগ্য একই সুতায় গাথা |

Mahabubul hoq
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৪:৪১ অপরাহ্ন

যথার্থই বলেছেন। যে দিন জনাব তারেক রহমান দেশে আসবেন সেই জনজোয়ারে আমিও থাকবো ইনশাআল্লাহ।

সফিকুল
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৩:৪৩ অপরাহ্ন

ইনশাআল্লাহ প্রিয় নেতার আগমনে ইতিহাসের স্বাক্ষী হওয়ার চেষ্টা করব।

Kazi Belal.
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৩:৩৩ অপরাহ্ন

জনাব তারেক রহমানের শরীরে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক জিয়াউর রহমানের রক্ত মিশে আছে। নেতা আপনি দেশে আসুন দেশ আপনার অপেক্ষায় আছে। আপনাকে লাল সালাম।

Shahadat Hossain
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৩:১৬ অপরাহ্ন

জনাব তারেক রহমানের শরীরে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক জিয়াউর রহমানের রক্ত মিশে আছে। নেতা আপনি দেশে আসুন দেশ আপনার অপেক্ষায় আছে। আপনাকে লাল সালাম।

Shahadat Hossain
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৩:১৬ অপরাহ্ন

দেশবাসী আনন্দিত। তাঁর আগমনে দল আরো সুসংহত হবে এবং দলে কোন ডাবল এজেন্ট থাকলে তা কঠোরভাবে নির্মূল করবেন মর্মে জাতি প্রত্যাশা করে।

আলী মাহমুদ
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৩:০৯ অপরাহ্ন

Mentioned reports are fully correct. Thanksgivings for this report.

Farid Ahmed
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:৩০ অপরাহ্ন

সুন্দর লিখেছেন।

বিবি
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:২১ অপরাহ্ন

যদি বেঁচে থাকি প্রিয়নেতার আগমনের দিন জনস্রোতে আমিও থাকব ইনশাআল্লাহ।

Mohammad Alam Khan
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:১৭ অপরাহ্ন

১৬ কোটি জনগণ প্রিয় জন্ম ভূমি জনাব তারেক রহমানের অপেক্ষায় মা মাটি ডাকছে তারেক রহমান আসচে

Abdul karim
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:১৫ অপরাহ্ন

শহীদ জীয়া একজন ১০০%খাটি দেশ প্রেমিক ছিলেন। তার ঐরশে অবশ্যই ভালো সন্তানের জন্ম হয়েছে। আমরা সাধারন জনগন তারেক রহমানের উপর ভরসা ও বিশ্বাস রাখি। আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুন।

মোঃ ওয়ালীউল্লাহ লিটন
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:১২ অপরাহ্ন

বর্তমান বাংলাদেশের পরিপূর্ণ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি জনাব তারেক রহমান

মাহমুদ
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:১০ অপরাহ্ন

Bangladesh is waiting to receive Tarek Zia. Minimum 10 Lac people will gather to receive him from AIRPORT

Nurullah
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১:৪৭ অপরাহ্ন

আপনি আপাময় বাংলার নেতা।

Jalilur rahman
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১:৩৯ অপরাহ্ন

এটাই বাস্তবতা

মোঃ তৌহিদুল ইসলাম
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১:৩৭ অপরাহ্ন

সু স্বাগতম জন নেতা ।

zakiul Islam
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১২:০৮ অপরাহ্ন

আমরা মনে করি তারেক রহমান ভারতের জন্য আতঙ্ক।

ROBIUL AOWAL
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

১/১১ এর সময় সেনাশাসকেরা যখন বেগম জিয়া কে জোরপূর্বক দেশ ত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা করছিলো তখন জিয়া পরিবারের পক্ষে কথা বলা ও এক লাইন লেখার লোক পাওয়া যাচ্ছিলো না।আমিই ব্রিগেডিয়ার হান্নাম শাহ্ কে দিয়ে চ্যানেল ওয়ানে জিয়া পরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছিলাম।যা এদেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার অনেক সাংবাদিক জানেন।ওই সময় বহু অনেক নেতা ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল,ব্রিগেডিয়ার ও প্রবীন নেতাদের কাছে গিয়েছি কেউ জিয়া পরিবারের পক্ষে কথা বলতে রাজী হয়নি।বরং অনেকে আমাকে নানান কথা শুনিয়েছে।তারেক রহমান সম্পর্কে চমৎকার তথ্য উপস্থাপন করায় লেখক কে ধন্যবাদ।

ইকবাল কবির
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

You are absolutely right... Salute our Future Leader..........

Saiful Islam Masum
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

হাসিনাকেও অনুরূপ ইলেকট্রিক শক আর থেরাপি দেয়া হোক ।

Harun
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

জিয়া পরিবার বাংলাদেশের রক্ষাকবচ । এই পরিবারকেই ভারতীয় আগ্রাসন ভয় পায় ।

Monir
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

সত্যের জয় একদিন হবে ইনশাআল্লাহ্ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই সত্যি টা তুলে ধরার জন্য

Md Mojid
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৮:১০ পূর্বাহ্ন

কথাগুলো একদম সত্য।

Sarwar Hossain
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৫:১৮ পূর্বাহ্ন

দারুন লিখছেন

শাহ আলম
২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:২৯ পূর্বাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status