ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫, রবিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

বাস্তবতার আলোকে মনে হচ্ছে দেশে এখন জাতীয় সরকার প্রয়োজন

গাজী মিজানুর রহমান

(২ দিন আগে) ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

আমরা সবাই দেশের ভালো চাই । সংকটের আবর্তে পড়ে দেশ যেন ইঞ্জিনবিহীন জাহাজের মতো ঘুরপাক খেতে না থাকে, এটা সকলেরই আন্তরিক চাওয়া। বিগত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে , দেশের জন্য এই মুহূর্তে দরকার একটা  শক্ত প্রশাসন । এইরূপ প্রশাসন নিশ্চিত করতে আপামর সকল মানুষের কাতারবন্দী হয়ে সরকারের পেছনে দাঁড়ানো দরকার । এই সম্মিলিত দাঁড়ানোর কাজটির পূর্বশর্ত যদি হয়  জাতীয় সরকার , তাহলে সেরকম একটি সরকার আশু প্রয়োজন । ২০২৪ সালের  জুলাই-আগস্ট মাসের  অভ্যুত্থানে  সমর্থন-দেয়া  সকল রাজনৈতিক দল  এবং ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া  ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত নতুন দলের প্রতিনিধি নিয়ে   জাতীয় সরকার গঠিত হলে দেশের মানুষ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে সেই সরকারকে বেশি আস্থায় নিতে পারবে। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাকে যারা মনেপ্রাণে চান, কিন্তু  উপদেষ্টা পরিষদকে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত  বলে মনে করেন না, তাদের  আস্থার  সংকট কাটাতে এরূপ একটি জাতীয় সরকার গঠন খুবই জরুরি বলে মনে হয় । ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাভের আশায় অভিমানী হয়ে বসে থাকলে নয় মাস আগের আন্দোলনের ফসল যদি বানভাসিতে ডুবে যায় , তখন সকলেরই মাথায় হাত পড়বে ।

জাতীয় সরকারগঠিত হলে এর সাথে যেহেতু সকল দল   যুক্ত  থাকবে, সেহেতু সে সরকারকে  অন্যের সরকার ভেবে  তুচ্ছজ্ঞান এবং  অসহযোগিতা দেয়ার  মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না  । জাতীয় সরকার গঠিত হলে সে সরকারে অংশ  নেবে যেসব রাজনৈতিক দল, তাদের ভেতর থেকে  অভিজ্ঞতাসম্পন্ন  ব্যক্তিদেরকে   সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা  করা হলে, তারা  মন্ত্রণালয়ের হাল ধরতে পারবেন এবং বর্তমানে মাঝে-মাঝে   যে ইমেজ-সংকট  পরিলক্ষিত হচ্ছে , তা পূরণ করা সম্ভব হবে । 

এছাড়া  জাতীয় সরকারের  প্রতি বিদেশের সরকারগুলিও আস্থাবান হবে বেশি ।  আর্থিক উন্নয়ন সহায়তা এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে চুক্তি করার দরকার হলে তার জন্য নৈতিক ভিত্তিও অধিকতর  সুদৃঢ় হবে। আমরা ভুলতে পারি না যে,  সুশাসন পাওয়া দেশের মানুষের মুখ্য অধিকার । কাজেই  নির্বাচন  যদি ডিসেম্বর মাসেও হয় , তাহলেও এখন থেকে তা ছয় মাস দূরে ।যার যেমন ইচ্ছে, তেমন করে চলার মানসিকতা যদি বৃদ্ধি পেতেই থাকে , তাহলে ছয় মাসে দেশকে বিপন্ন করে ফেলার মতো মানসিকতাসম্পন্ন লোকের অভাব নেই দেশে । এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে , আগেই ভালো ছিলাম , এমন আবহ তৈরি করা । সকল দলের সম্মতির ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জাতীয় সরকার থাকলে সে সরকার দক্ষভাবে সুশাসন নিশ্চিত করা , আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং দেশের নিরাপত্তা দৃঢ় করার কাজ করতে পারবে। 

সাধারণ  মানুষ যদি বুঝতে পারে যে  , নির্বাচন পরিচালনা করবে জাতীয় সরকার এবং সেখানে  ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত নতুন দলের  প্রভাব খাটানোর সুযোগ  থাকবে না ,তাহলে জনগণের মনে এমন সন্দেহ  তৈরি হবে না  যে, নতুন একটি দলগঠন করা হয়েছে  ক্ষমতা আঁকড়ানোর জন্য  । পারস্পরিক   সন্দেহ দূরীভূত হলে  সকলের  মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে । যে ছাত্ররা আন্দোলন করে দেশে বর্তমান অবস্থা ফিরিয়ে এনেছে, তাদের প্রতিনিধিদেরকে  দেশগঠন কাজের বাইরে রেখে দেশ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হবে । একটা আন্দোলন করে, আত্মত্যাগের উদাহরণ দেখিয়ে যারা দেশবাসীর প্রিয়পাত্র হয়েছে, সেই পরিচিতি নিয়ে যদি তারা জনগণের ভোট পেয়ে  এমপি হতে পারে, আর সংসদে গিয়ে মানুষের ভালোমন্দ নিয়ে কথা বলতে পারে, তাহলে তাদের কণ্ঠস্বর জাগরুক থাকবে  এবং দেশের জন্য কথা বলার মাধ্যমে তারা দেশসেবার সুযোগ পাবে  । নতুন দল গঠন মানেই ক্ষমতায় যাওয়া নয় – জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে  ভোট পাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে যাওয়া । মানুষের মন জয় করতে পারলে , দেশবাসী  একদিন-না-একদিন যে কোনো দলকেই  ক্ষমতায় আনতে পারে ।  

যার-যার চাওয়া-পাওয়ায় নৈতিক অবস্থান ধরে রেখে একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে পারলে এবং দলগুলির  মধ্যে মৌলিক বিষয়ে   বোঝাপড়া  থাকলে  সুযোগ-সন্ধানীদের মোকাবেলা করা , বাংলাদেশের বিষয়ে অন্য দেশের নাক গলানো  বন্ধ হবে। জাতি হিসেবে আমরা হবো মর্যাদাবান । এই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে  সমাজে অস্থিরতা অনেক কমে যাবে ,দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে । ভোটের মাধ্যমে   জনগণের অবাধ ও সুবিবেচনাপ্রসূত  রায়  মনেপ্রাণে গ্রহণ ও লালন করা না গেলে জুলাই-আগষ্টে যে তাজা প্রাণগুলি ঝরে গেল , তাদের আত্মাহুতি বিফল হয়ে যাবে । ভূরাজনৈতিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংহতি ছাড়া দেশের উন্নয়ন ও দেশের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব নয় । তাই বর্তমান সময়ের আলোকে  দেশের ভালোর জন্য একটা জাতীয় সরকার অতীব জরুরি বলে মনে হয় । তার জন্য যার যার অবস্থান থেকে সমঝোতার নীতিকে আগবাড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ।  

(সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও প্রবন্ধকার  )

পাঠকের মতামত

উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে প্রথম থেকেই জনমানসে একটা অজানা আশঙ্কা ছিল। জনমানুষ এখন হতাশ হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়ন আরও দ্রুততার সাথে হতে পারত। জুলাই ঘোষণা প্রকাশ করতে কারা বাঁধা দিল? বিচার প্রক্রিয়া এতো ধীরগতি পেল কেন? চারিদিকে এত দাবিদাওয়া, আন্দোলন এর পিছনে কারা ইন্ধন যুগিয়েছে??? সেনানিবাসের ৬২৬ জনের কী খবর??

কে. জামান
২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১১:০০ অপরাহ্ন

Major political party of Bangladesh doesn't consider the well-being for Bangladesh. They just want to grab power at any cost. This type of political worst dicision created uncertinity for the nation.

Mahabubul hoq
২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২:৩৯ অপরাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status