ঢাকা, ১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

শিক্ষার দারিদ্র্য এবং তীব্র আবহাওয়া: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দু’টি মারাত্মক হুমকি

ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার

(৩ ঘন্টা আগে) ১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৪:৫১ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশে শিক্ষার দারিদ্র্য এবং তীব্র আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক শিক্ষার ফলাফলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বয়স্ক শিক্ষার্থীদের তুলনায় তরুণ শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শহরাঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার দারিদ্র্য এবং তীব্র আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর সম্মিলিত প্রভাব বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে, যা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য শিক্ষার মান উন্নত করা, স্থিতিশীল শিক্ষার অবকাঠামো তৈরি করা এবং দুর্বল ও প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোকে সহায়তা করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
 
শেখার দারিদ্র্য বলতে বোঝায় ১০ বছর বয়সের মধ্যে শিশুদের সহজ লেখা পড়তে ও বুঝতে ব্যাপক অক্ষমতা, যা তাদের শিক্ষাগত অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের সুযোগগুলোকে বাধাগ্রস্ত করে। প্রথমত, বাংলাদেশের অনেক শিশুর মৌলিক পঠন এবং সংখ্যাবিদ্যার দক্ষতার অভাব রয়েছে, যার ফলে তাদের স্কুলে সাফল্য অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শিশুদের সহজ লেখা পড়তে এবং বুঝতে সমস্যা হয়, যা তাদের শেখার এবং শিক্ষাগতভাবে অগ্রগতির ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। তৃতীয়ত, শেখার দারিদ্র্য অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলোকে প্রভাবিত করে, যার মধ্যে রয়েছে নিম্ন আয়ের পরিবার, গ্রামীণ এলাকা এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শিশুরা। ফলস্বরূপ, শিশুরা দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি ভোগ করে, যার মধ্যে রয়েছে সীমিত শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক সুযোগ, যা দারিদ্র্যেরচক্রকে স্থায়ী করে তোলে।
 
শিক্ষার দারিদ্র্যের পাশাপাশি, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার মতো তীব্র আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও ব্যাহত করে। ২০২৪ সালের এপ্রিল এবং মে মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ শিশুদের পানিশূন্যতা এবং তাপ প্রবাহের ঝুঁকিতে ফেলে, যার ফলে বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বেশ কয়েকটি জেলায় স্কুল বন্ধ হয়ে যায় এবং জুন মাসে তীব্র বন্যা হয়। দেশব্যাপী বন্যায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে ৭০ লাখ শিশুও রয়েছে। সিলেট জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি হয় এবং ৬ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক হিসাব অনুসারে, সিলেটের শিশুরা মোট ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলের দিন হারিয়েছে এবং খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর জেলার প্রতিটি এলাকায় ১২ মাস ধরে জলবায়ুজনিত কারণে ৬ সপ্তাহ করে স্কুল বন্ধ রয়েছে।
 
আমাদের স্কুল এবং শিক্ষাব্যবস্থা তীব্র আবহাওয়ার প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্য মূলত অপ্রতুল। স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি, বাংলাদেশের শিশুরা দু’টি আন্তঃসম্পর্কিত সংকটের মুখোমুখি-তীব্র আবহাওয়ার ঘটনা এবং ক্রমবর্ধমান শিক্ষার দারিদ্র্য। আমার অজানা দুর্ভাগ্যজনিত কারণে যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে সংস্কার সম্পর্কিত চলমান আলোচনার প্রেক্ষাপটে শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, আসন্ন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের এই বর্ধিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাৎক্ষণিকভাবে বেশকয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে; অন্যথায়, বাংলাদেশ একটি অপরিবর্তনীয় মানব উন্নয়ন সংকটে ভুগবে।
 
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম শিক্ষা অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, স্কুলে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তীব্র আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান এবং সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত শিক্ষার প্রচার।

একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এবং রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার আলোকে সঠিক মাত্রার রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে, বাংলাদেশ শিক্ষার দারিদ্র্য এবং তীব্র আবহাওয়ার ঘটনার প্রভাব হ্রাস করতে পারবে, যার ফলে তার শিশুদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।

লেখক: বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status