খেলা
সব শুধরে ফেরার চেষ্টায় সাব্বির
সৌরভ কুমার দাস
২৯ মার্চ ২০২৫, শনিবার
সাব্বির রহমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম এক আলোচিত চরিত্র। অনেক সম্ভাবনা নিয়েই জাতীয় দলে অভিষেক হয় এই হার্ড হিটার ব্যাটারের। ২০১৬ এশিয়া কাপে টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে শুরুটাও ভালো হয় তার। কিন্তু এরপর ক্যারিয়ার যেভাবে এগোনোর কথা ছিল সেভাবে হয়নি নানা বিতর্কে জড়ানো সাব্বিরের। একটা সময় বেশ আড়ালে চলে যাওয়া সাব্বির গেল বিপিএলে বেশ কয়েকটি ভালো ইনিংসে ফিরে আসার বার্তা দিয়েছেন। তবে সেখানেও আসর শুরুর আগেই অনুশীলনে না আসা নিয়ে জড়িয়েছেন বিতর্কে। নিজের ক্যারিয়ার, বিতর্ক, ভবিষ্যৎসহ নানা বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন সাব্বির। যেখানে বিপিএলের বিতর্কে ঢাকা ক্যাপিটালসের হেড কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনকে অনেকটাই নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করান তিনি-
প্রিমিয়ার লীগে প্রথমবারের মতো ক্যাপ্টেন্সি করলেন আবার ছেড়েও দিলেন...
সাব্বির: আসলে আমাদের দলটা খুবই ইয়াং তো, অনেক ছোটদের নিয়ে দলটা গোছানো হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে ওরা মনে হয় আমার কথা বুঝতে পারছে না, আমি যে লেভেলে খেলে আসছি ওই লেভেলের কথাবার্তা ওরা বুঝতেছিল না হয়তো। এজন্য আমার কাছে এটা চাপ হয়ে যাচ্ছিল যেহেতু, টিমের একটা কম্বিনেশন...জেতার ব্যাপার আছে। প্রিমিয়ার লীগ একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এজন্য চাপ কমিয়ে খেলতে চেয়েছি। মনে হয়েছে যেটা আমার দ্বারা হচ্ছে না সেটা হয়তো অন্যের দ্বারা হতে পারে।
প্রিমিয়ার লীগে শুরুটা ভালো হলো, এরপর আবার রান পাচ্ছেন না
সাব্বির: হতে পারে মানসিক প্রেসারের কারণে, দলটা তো আমাকে কেন্দ্র করেই গড়েছে। সবসময়ই আপনি চাইবেন ভালো খেলতে কিন্তু কখনো কখনো সেটা হয় না। আমি আউট হলেই দলটা ডিমোরালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আসলে এটা অনেক বড় চাপ, উইকেটে থাকাও চ্যালেঞ্জিং। সেক্ষেত্রে হয়তো ওভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি।
বিপিএলে ভালো ইনিংস, ব্যাটিং নিয়ে আলাদা কাজ করেছেন?
সাব্বির: নরমালি রাজশাহীতে কাজ করেছি ব্যাটিং নিয়ে। জাতীয় লীগ যেহেতু আমি খেলি নাই, ম্যাচের পর দুই-তিন দিন ফাঁকা থাকতো স্টেডিয়ামের মাঝের উইকেটটা। ওই সময় কিছু স্টুডেন্টদের বোলিং করিয়ে সেখানে ব্যাটিং করতাম। কংক্রিকেটের স্লাভে কিছু কাজ করেছি, ভার্ডি বলে কিছু কাজ করেছি। নিজের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখেছি, কোথায় সমস্যা আছে কিভাবে উন্নতি করা যায়।
জাতীয় লীগে খেলেননি, তখন কিছু আলোচনাও ছিল এ নিয়ে...
সাব্বির: জাতীয় লীগে খেলতে চাচ্ছিলাম আমি, তখন নির্বাচকের একজন নাকি বলেছিলেন আমি জিম্বাবুয়ে থেকে টি-টেন খেলে এসেছি, সেজন্য আমাকে ২টা ম্যাচ বিশ্রাম দিয়েছিল। আমি জানি না কেন বিশ্রাম দিয়েছিল, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি তখন। তারপর ওদের যুক্তি ছিল, আমি শেষ দুই বছর রান করতে পারিনি। আমি ব্যাখাও দিয়েছি, যদি আপনারা গুগুলে সার্চ করতেন তাহলে দেখতে পারতেন শেষ দুই বছরে রাজশাহীর হয়ে সাব্বির রহমান ও সাব্বির হোসেনই রান করেছে, এক-দুইয়ের মধ্যেই ছিল। তারা হয়তো এটা দেখেনি, না দেখেই জাজ করে ফেলেছে। সম্ভবত ওনাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল বা কেউ হয়তো চায়নি যে আমি জাতীয় লীগ খেলি। এরপর শেষ ম্যাচ খেলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছিল আমি খেলিনি, কারণ শেষ ম্যাচে তো আর খেলে লাভ নাই!
ক্যারিয়ারে আক্ষেপ হয় কিছু নিয়ে?
সাব্বির: না, আসলে আক্ষেপ করে তো লাভ হবে না। অতীত যেটা চলে গেছে সেটা তো আর পাবেন না! আল্লাহ যেটুকু রিজিক রাখছে সেটুকুই পেয়েছি, পাবো। আক্ষেপ নাই, যেটা এটা কেনো হয়নি, ওটা কেনো পাইনি। আলহামদুলিল্লাহ, চেষ্টা করেছি নিজের শতভাগ দেওয়ার জন্য। মানুষ ভালোবাসে, দেশের জন্য কিছু তো করেছিলাম। এখনও আশা আছে, চেষ্টা করছি আবার কিভাবে জাতীয় দলে ফেরা যায়।
মাঠের বাইরের বিতর্কের প্রভাব কি মাঠের খেলায় পড়ে?
সাব্বির: ইমপ্যাক্ট তো অবশ্যই ফেলবে, যখন প্রফেশনাল লাইফ আর পারসোনাল লাইফ এক করে ফেলবেন, এটা বাংলাদেশেই বেশি হয়। আমরা সহজেই কাউকে জাজ করে ফেলি যে প্রফেশনালি আমি ভালো খেলোয়াড় কিন্তু পারসোনালি অনেক রাগী, অনেক উগ্র! কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, সবার একটা ব্যক্তিগত জীবন থাকে। এর সঙ্গে প্রফেশনাল লাইফকে কখনোই এক করা উচিত নয়। আমি পার্সোনালি কি করছি তার চেয়ে প্রফেশনালি কেমন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মাঠে কতটুক দিতে পারছি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর ইমপ্যাক্ট তো মাঠে অবশ্যই পড়ে...তবে এগুলোতে আমি কিছু মনে করি না। চেষ্টা করছি সব ঠিক করে আবার যেন কামব্যাক করতে পারি।
বিপিএলে বলেছিলেন আপনাকে ভালো হতে দেওয়া হচ্ছে না, কারা হতে দিচ্ছে না?
সাব্বির: আমি একটা দিন অনুশীলনে যাইনি, এতে আমাকে ৩ ম্যাচ বসিয়ে রাখা হয়েছে (বিপিএলে)। এটা খুবই অবাক করা বিষয় যে কোচ যিনি ছিলেন সে হয়তো বিষয়টি অবগত নাও থাকতে পারেন। সব খেলোয়াড়রা ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন নাও করতে পারে কিন্তু এটা তখন যদি একটা হেড কোচ (ঢাকা ক্যাপিটালসের হেড কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন) যখন বলে প্র্যাক্টিসে না আসার কারণে ২টা ম্যাচ সুযোগ দেওয়া হয়নি, এটা আসলে খুবই লজ্জাজনক বিষয়। এটা আমার জন্যও আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও। ঘরের খবর বাইরে এসে বলাটা খুবই লজ্জাজনক। মানুষ তো আসলে বিরক্ত করবেই, অতীত নিয়ে কথা বলবে! আমার কাছে মনে হয় আমি এখন নিজেকে, নিজের জীবনকে অনেক সুন্দর করে গুছিয়েছি। ক্রিকেটের বাইরেও আমার জীবন আছে, চেষ্টা করছি ক্রিকেট ও বাইরের দুটো জীবনেই ঠিকমতো চলতে।