ঢাকা, ১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ট্রাম্পের বড় জুয়া

মানবজমিন ডেস্ক
৪ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবারmzamin

নিজের মতো করে যুক্তরাষ্ট্রকে সাজাতে চান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সেটা করতে গিয়ে তিনি নিজের সঙ্গেই সবচেয়ে বড় জুয়া খেলছেন। কয়েক দশক ধরে তিনি এই নীতিতে কাজ করছেন। বিশেষ করে ১৯৮০’র দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি নিজের মতো করে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব ব্যবস্থাকে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি মনে করেন মার্কিন অর্থনীতিকে যদি চাঙ্গা করতে চান তাহলে তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো শুল্ক। সেই শুল্ক আরোপ করে তিনি বাকি বিশ্বকে কার্যত একপেশে করে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, তিনি এক্ষেত্রে নিজের বিরুদ্ধে নিজেই জুয়া খেলছেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিজের প্রেসিডেন্সিকে বাজি রাখছেন। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ২টার পর  হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্বের শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তালিকায় মিত্র দেশ  যেমন রয়েছে, তেমনই প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ দেশকেও রাখা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।  

হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে বন্ধু, কনজারভেটিভ রাজনীতিক ও মন্ত্রীদের পরিবেষ্টিত অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ওই দিনকে বর্ণনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র এই দিনের জন্য অপেক্ষা করেছে দীর্ঘদিন ধরে। বিবিসি লিখেছে, অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের দেয়া বক্তৃতার অর্ধেক ছিল উদ্‌যাপন, বাকি অর্ধেক ছিল আত্মপ্রশংসা। নিয়মিত বিরতিতে চলছিল হাততালি। ট্রাম্প তার বক্তৃতায় শুল্ক নিয়ে নিজের দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি নাফটার মতো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নিয়ে নিজের শুরুর দিকের সমালোচনার কথা স্মরণ করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানেন যে, নতুন শুল্ক ঘোষণার কারণে আগামী দিনে তাকে ‘বিশ্ববাদী’ আর ‘বিশেষ স্বার্থবাদীদের’ চাপের মুখে পড়তে হবে। তবে তিনি নিজের বিশ্বাসের ওপর আমেরিকানদের ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তার কথায়, ভুলে গেলে চলবে না, গত ৩০ বছর ধরে বাণিজ্য নিয়ে আমাদের বিরোধীরা যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, তার প্রত্যেকটিই সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিবিসি লিখেছে, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পকে যেমন সমমনা উপদেষ্টারা ঘিরে  রেখেছেন, তেমনি কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণও রয়েছে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির হাতে। এ অবস্থায় বাণিজ্য নীতির মাধ্যমে নতুন আমেরিকা গড়ার দীর্ঘদিনের দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে পরিণত করার সুযোগ ট্রাম্পের সামনে এসেছে। তার ভাষ্য, এসব নীতিই যুক্তরাষ্ট্রকে এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে একটি সম্পদশালী দেশে পরিণত করেছিল এবং আবারো করবে। 

ট্রাম্প বলেন, কঠোর পরিশ্রমী মার্কিনিরা বছরের পর বছর ধরে দর্শকসারিতে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছে; কারণ অন্যান্য  দেশ ধনী ও শক্তিশালী হয়েছে, যার  বেশির ভাগ খরচ গুনতে হয়েছে আমাদের। আজকের পদক্ষেপের মাধ্যমে অবশেষে আমরা আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলতে চলেছি; অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে মহান। বিবিসি লিখেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য এখনো বড় ধরনের ঝুঁকি অপেক্ষা করছে। সব দেশের অর্থনীতিবিদরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, চীনের ওপর ৫৩ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২০ শতাংশ এবং সব দেশের ওপর অন্তত ১০ শতাংশের যে শুল্ক ঘোষণা করা হয়েছে, তা আখেরে আমেরিকান ভোক্তাদেরই  ভোগাবে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, সেই সঙ্গে বৈশ্বিক মন্দারও ঝুঁকি  তৈরি করবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কেন রগফ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, নতুন শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মন্দায় পড়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তিনি (ট্রাম্প) বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি পারমাণবিক বোমা ছুড়েছেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ওপর এই স্তরের কর আরোপের সিদ্ধান্ত হবে বিস্ময়কর। ট্রাম্পের পদক্ষেপে বিভিন্ন  দেশের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ বৃদ্ধির যেমন আশঙ্কা রয়েছে, তেমনই যেসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টায় রয়েছে আমেরিকা- এমন মিত্রদেরও হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। যেমন চীনের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষাকবচ হিসেবে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সম্প্রতি ওই তিন দেশ ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির জবাব দিতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে। বিবিসি লিখেছে, ট্রাম্প যদি সফল হন, তবে তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার  মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলবেন, যা গড়ে তুলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, নতুন নীতি আমেরিকান উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করবে, রাজস্বের নতুন উৎস তৈরি করবে এবং আমেরিকাকে আরও স্বাবলম্বী করবে। কোভিড মহামারিতে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে  যে ধরনের সংকটে পড়তে হয়েছে,  তেমন পরিস্থিতি থেকেও রক্ষা করবে। বিবিসি লিখেছে, ট্রাম্পের দীর্ঘ পরিকল্পনা অনেকের কাছে ‘অত্যন্ত অবাস্তব’  ঠেকতে পারে। কিন্তু যুদ্ধের অবসান,  ভৌগোলিক অবস্থানের নতুন নামকরণ, নতুন অঞ্চল অধিগ্রহণ বা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প বিলোপ ও জনবল কমানোর মাধ্যমে যে প্রেসিডেন্ট তার উত্তরাধিকারকে শক্তিশালী করতে চান, তার জন্য এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে ফলপ্রসূ পুরস্কার। নিজের ভঙ্গিতেই তিনি বলেছেন, এটা হবে আমেরিকার ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’। বুধবারের ঘোষণার মধ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ট্রাম্প যদি নতুন নীতি অনুসরণ করেন, তাহলে ঐতিহাসিক পরিবর্তন প্রায় অবশ্যম্ভাবী। এখন যে প্রশ্নটি সামনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো- এই পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে ট্রাম্প কি ইতিহাসের পাতায় সুখ্যাতি অর্জন করতে পারবেন, না কুখ্যাতি?

ট্রাম্পের ভাষণ ছিল বিজয়োল্লাসে পূর্ণ। তার এ পদক্ষেপের ফলে আমেরিকান অর্থনীতি এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে  যে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা ভাষণে ছিল অনুপস্থিত। অবশ্য তিনি বলেছেন, যা তিনি করতে চান, সেজন্য এটুকু ঝুঁকি নেয়াই যায়। আর তাতেই বক্তব্যের একেবারে শেষে, তার সাহসী চেহারার মাঝে ছোট্ট একটি সন্দেহের ছায়া যেন উঁকি দিচ্ছিল। ট্রাম্প বলেন, এটা হতে চলেছে এমন এক দিন, যেদিনের কথা আপনারা ভবিষ্যতে স্মরণ করবেন। তখন আপনারা বলবেন, ‘তিনি ঠিকই করেছিলেন’।
 

পাঠকের মতামত

আন্নেরই তো Open Market Economy শুরু করছিলেন, এখন জ্বালাটা বোঝলেন ?

জনতার আদালত
৪ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ১২:০৭ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ কি এখন কি করবে এই সংকট এড়ানোর জন্য? দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

sanzida
৪ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

পাগলের সুখ মনে মনে

Obak
৪ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: news@emanabzamin.com
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status