প্রথম পাতা
বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছেন বিদেশিরা
স্টাফ রিপোর্টার
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
সোমবার থেকে শুরু হওয়া চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দুইদিন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। সরজমিন ঘুরে দেখেছেন বিনিয়োগের স্থান ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়। সম্মেলনে অংশ নিতে আসা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছেন। তারা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছেন। গত সোমবার শুরু হওয়া চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল। ব্যতিক্রমধর্মী এবারের সম্মেলনের শুরুতে গৎবাঁধা বক্তৃতা, সেমিনার না রেখে বিনিয়োগকারীদের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা দেয়া হয়েছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকেই তারা বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিনিয়োগ গ্রুপ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সম্মেলনের ফাঁকে গতকাল বিশ্বের ৫৪তম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস চুক্তি’ সই করেছে বাংলাদেশ। গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ও ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষা সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন এ চুক্তিতে সই করেন। এ উদ্যোগের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও মহাকাশ সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। যা দেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’-এর ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ; যা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ ও অসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ।
২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত আর্টেমিস অ্যাকর্ডস চুক্তিগুলো হলো একটি অ-বান্ধনযোগ্য বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার একটি সিরিজ; যার লক্ষ্য হলো মহাকাশ অনুসন্ধানে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও টেকসই সহযোগিতা। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারবে। প্রতিরক্ষা সচিব আশরাফ উদ্দিন বলেন, আর্টেমিস অ্যাকর্ডস মূলত আউটার স্পেস ট্রিটি রেজিস্ট্রেশন কনভেনশন এবং অ্যাস্ট্রোনট রেসকিউ এগ্রিমেন্টের নীতিগুলো অনুসরণ করে তৈরি একটি নির্দেশিকা; যা মহাকাশের শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই ব্যবহারে সহায়ক। তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ স্পারসো গঠন করে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করতে কাজ শুরু করে এবং তখন থেকেই আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে চলেছে। তিনি আরও বলেন, আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো মহাকাশে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০২৫ সালের ২১শে জানুয়ারি পর্যন্ত আর্টেমিস চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ, লাতিন আমেরিকানসহ ৫৩টি দেশ স্বাক্ষর করেছে।
বাংলাদেশ এই চুক্তিতে যুক্ত হয়ে একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোটের অংশ হলো। আশরাফ উদ্দিন বলেন, এই চুক্তি প্রযুক্তি স্থানান্তর, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন দরজা খুলে দেবে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে নাসা ও স্পারসোর মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে এবং বাংলাদেশের মহাকাশ কার্যক্রম জোরদার হবে। তিনি যোগ করেন, নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রবেশাধিকার পাবে, যা বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্পারসোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও জলবায়ু মনিটরিং স্যাটেলাইট তৈরি করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে; যা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে; আর শিক্ষার্থীরা নাসার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম; বৃত্তি ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হতে পারবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালক ও চিফ অব প্রোটোকল এএফএম জাহিদ-উল-ইসলাম এবং বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থার (স্পারসো) চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল ইসলাম।
বাংলাদেশে আরও এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এনডিবি:
পাঁচটি বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকসের উদ্যোগে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সংস্থাটি আরও এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস স?চিব শ?ফিকুল আলম।
বিনিয়োগকারীরা কী কী বিষয়ে জানতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীরা দুই ক্যাটাগরিতে প্রশ্ন করছেন।
বাংলাদেশে ব্যবসা করলে কী ধরনের সুবিধা দেয়া হবে। দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি করছেন সেটি হচ্ছে, ইতিমধ্যে যারা ব্যবসায়ী আছেন তারা কী ধরনের সমস্যা ফেইস করছেন, সেগুলো উত্তরণে তাদের কী করতে হবে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, এসব বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
তিনি জানান, এখনই বিনিয়োগ আনা এই সামিটের লক্ষ্য নয়। এবারের সামিটের মূল লক্ষ্য নেটওয়ার্কিং করা। এখানে আমরা নেটওয়ার্কিংকে প্রধান্য দিচ্ছি।
বিডার চেয়ারম্যান আরও বলেন, আজকে ওখানকার (ব্রিকস) ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধারণা অনেক পজেটিভ এটা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ওয়াসার সঙ্গে তারা একটি প্রজেক্ট শুরু করেছেন। তারা চাচ্ছে শুধু সরকারি নয় বেসরকারি খাতেও যেন তারা ফান্ড দিতে পারেন। আমরাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি হাসপাতাল-হাউজিংসহ সামাজিক অবকাঠামোতে তাদের ফান্ড দেয়ার সুযোগ আছে।
বিডার আয়োজনে এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের বিনিয়োগকারী অংশ নিচ্ছেন।
চীন ও কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ সভা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য যেকোনো বিনিয়োগ-সম্পর্কিত উদ্বেগ দূর করতে এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ দ্রুততর করার জন্য একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনা বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। এই বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫-এ অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রবর্তিত বিনিয়োগের পরিবেশ এবং বাণিজ্য ও শ্রম-সম্পর্কিত সংস্কার বাংলাদেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে। পাশাপাশি দেশে আরও চীনা ও দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরিত করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, গত আট মাসে আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্য নিয়েছি। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এমন অনুকূল পরিবেশ এর আগে দেশে কখনো ছিল না। প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রতি মাসের ১০ তারিখে কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মাসিক প্রাতঃরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা নিজেও কিছু সভায় অংশগ্রহণ করবেন এবং বিনিয়োগকারীদের নানা বিষয় শুনবেন। প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে এবং সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য একটি হটলাইন এবং কল সেন্টার পরিষেবা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন। যেকোনো বিনিয়োগকারী এই নম্বরে কল করে তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারেন এবং আমরা সেই অনুযায়ী সাড়া দেবো। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পরিবহন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেক্সটাইল, মোবাইল টেলিযোগাযোগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিকস এবং আইটি পরিষেবার মতো সেক্টরে বড় বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী অন্তত ৩০ জন বিশিষ্ট চীনা বিনিয়োগকারী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃৃত্বে ছিলেন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি মেইনল্যান্ড হেডগিয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট পলিন এনগান। ড. ইউনূস সমপ্রতি বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথাও জানান, যেখানে প্রেসিডেন্ট শি বাংলাদেশে শীর্ষ চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। চীনা কোম্পানির কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে নিবেদিত চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মোংলায় পরিকল্পিত চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল উভয়েই বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চীন একটি সমুদ্রবন্দরের আধুনিকীকরণে প্রস্তুত বলেও জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ।
বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগে আগ্রহী কোরিয়া: বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের নতুন যুগের সূচনা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা। সরকারের বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগের ফলে, বাংলাদেশে সম্ভাবনার নতুন আলো দেখছেন তারা। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দেন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সং-এর নেতৃত্বাধীন কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদল। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য যেকোনো বিনিয়োগ-সম্পর্কিত উদ্বেগ দূর করতে এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ দ্রুততর করার জন্য একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন। প্রতিনিধিদলে এলজি-সহ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল, ফ্যাশন, স্পিনিং, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এর আগে সোমবার প্রতিনিধিদলটি চট্টগ্রামে অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) পরিদর্শন করে। ইয়াংওয়ান করপোরেশন পরিচালিত এই শিল্প পার্কে তাৎক্ষণিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলছি, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ সহজ এবং ঝামেলামুক্ত। গত ১৬ বছরে যেসব কঠিন সময় গেছে, আমরা সেই ক্ষতিপূরণ এখন দিতে চাই। আমাদের দায়িত্ব হলো আপনাদের জন্য পথকে মসৃণ করে তোলা।
ড. ইউনূস জানান, শ্রম, শিল্প, জ্বালানি ও বিনিয়োগ নীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কিহাক সং, যিনি ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসেন, প্রধান উপদেষ্টার ব্যবসাবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপগুলো দেশের ব্যবসার সামগ্রিক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। সরকারপ্রধান বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশকে আপনার ব্যবসার গন্তব্য এবং অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে ভাবুন। আপনারা কোটি কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেন। কিহাক সং আরও জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইয়াংওয়ান করপোরেশন চট্টগ্রামে একটি টেক্সটাইল ও ফ্যাশন কলেজ স্থাপন করবে, যা দেশের টেক্সটাইল খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে সহায়ক হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টার লেখা চিঠিকেও প্রশংসা করেন। চিঠিটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে লেখা হয়েছে, বলেন সং। (মার্কিন শুল্কারোপের কারণে) তিনি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। এ ছাড়াও কোরিয়ান ফ্যাশন ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা বলেন, বাংলাদেশের সরবরাহ শৃঙ্খল অত্যন্ত দক্ষ এবং সমন্বিত। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পও দ্রুত বিকাশমান। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে দেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। একজন বিনিয়োগকারী এখানে একটি এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) প্ল্যান্ট স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও, প্রতিনিধিদলে থাকা একজন শীর্ষ কোরিয়ান সার্জনকে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেন প্রফেসর ইউনূস। বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি-বিষয়ক কো-অর্ডিনেটর লামিয়া মোর্শেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তারা সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক নীতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনা বিনিয়োগকারীদের বৈঠক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। বৈঠকে চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মেইনল্যান্ড হেডওয়্যার হোল্ডিংস লিমিটেডের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পলিন এনগান। চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।