ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পর যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার
১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পর যাবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান।

আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রথম থেকে বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, আজকের আলোচনায় আমরা কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করেছি, সেটা আপনাদের বলি- একটা হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করবো সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যদি আমরা ডিসেম্বরে সম্ভব হয় ডিসেম্বরেই, না হয় জানুয়ারিতে এভাবে বলেছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে একটু বেশি সময়ে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য অকারণে আমরা একমাস বা দুই মাস বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলাম, মোটেই সেটা না। 

তিনি বলেন, এখন উনারা (বিএনপি নেতারা) জানতে চেয়েছেন যে, সংস্কার যদি হয়ে যায় এত দেরি করার মানে কি আছে? আমরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছি, জুলাই চার্টার্ড প্রণীত হলেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা, নীতিগত ব্যবস্থা যেটি গ্রহণ করতে মাঝে মধ্যে সময় লাগে। যেমন একটা উদাহরণ দিয়ে বলেছি যে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন, এটা ২৩ বার ড্রাফট করেছি বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেয়ার জন্য এবং বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে। সেজন্য আমরা বলেছি যে, আমরা তো পিন পয়েন্ট করতে পারবো না। জুলাই চার্টার্ড প্রণীত হওয়ার পর অত দিনে হয়ে যাবে, আমরা তো অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে ব্রড কনসালটেশনের ভিত্তিতে করবো।
আফিস নজরুল বলেন, রোডম্যাপ ঘোষণা করতে কতো দিন লাগতে পারে সেটা নিয়ে তো আলোচনা হয়নি। এটা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনারা একটা জিনিস জানেন, নির্বাচনের শিডিউল, আগের নির্বাচনের যদি প্যাটার্ন দেখেন তাহলে শিডিউল ঘোষণা করার পর ৬০ দিন দিলেই হয়। সেই হিসাবে যখন আমরা নির্বাচন করবো তার অন্তত দুই মাস আগে আমাদেরকে রোডম্যাপটা ঘোষণা করতে হবে।

তিনি বলেন, এটা ব্যাপারে একটু খালি আপনার ভিন্নমত হতে পারে, সেটা হচ্ছে- উনারা যেটা বলেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যেই ইলেকশন দিলে ভালো হয়। উনারা বলেছেন যে, আমাদের কথাবার্তার মধ্যে এত অস্পষ্ট থাকে, কেউ কেউ আমাদের কোনো কোনো উপদেষ্টা কথা বলেন। আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি, যে যেটাই বলুক না কেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বার বার যেটা রিপিট করেছেন, সেটাই সরকারের অবস্থান। যেখান থেকে অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা নিজস্ব বিবেচনায় বলেন সেটা তারা (বিএনপি) যেন বিভ্রান্ত না হন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের জনগণের তো একটা আকাঙ্ক্ষা আছে যে, আমরা বিচার করে যাই। যারা জীবন দিয়েছেন, শারীরিকভাবে পারমানেন্টলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন, এসব ঘটনার বিচারের যে দাবি- এটা তো গণ-অভ্যুত্থানে প্রধান আকাঙ্ক্ষা আছে, আমরা যদি কোনো বিচার না করে যাই, আমরা যদি ইলেকশন দেই, আমরা মানুষের কাছে এবং নিজের কাছে জবাব দিবো কীভাবে? ফলে শুধু ইলেকশন, সংস্কার, বিচার এবং আমাদের সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে এ জন্যই ডিসেম্বর থেকে জুন টাইম- বারটা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি, এটা কোনোভাবে জুনের বেশি যাবে না। যে যেই কথাই বলুক না কেন, প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার রিপিটেডলি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই জুন অতিক্রম করা হবে না।
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব সন্তুষ্ট হননি এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি মহাসচিবের এটা বলার অবশ্যই অধিকার আছে। একটা আলোচনা থেকে একজন একভাবে পারসিভ করে, আরেকজন আরেকভাবে পারসিভ করে। আমার কাছে উনাদেরকে দেখে হ্যাপি লেগেছে। যখন আমাদের ডায়ালগটা শেষ হয়েছে। মনে হয়েছে উনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল তার অনেকগুলো উত্তর উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে এটা মনে হয়েছে। ফখরুল ভাইয়ের কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে।

বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুন এটাতে বিএনপি’র সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, কোনো দূরত্ব তৈরি হয় নাই। আপনাদেরকে উত্তর দিলাম তো। ফখরুল ভাই আপনাদের বলেছেন যে, উনি সন্তুষ্ট না। আমরা আলোচনার শেষপ্রান্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, আমাদের অনেক ব্যাখ্যা উনারা বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে উনারা সন্তুষ্ট।

তিনি বলেন, উনার (ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে) যে সমস্ত আশঙ্কার কথা বলেছেন, আমরা আমাদের মতো বলেছি যে, এই সমস্ত আশঙ্কার কোনো কারণ নাই। এসব ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। আমরা অত্যন্ত রেসপেক্টফুলি উনাদের মতামত বিবেচনায় নিয়েছি। আমরা এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকবো।

আসিফ নজরুল বলেন, উনারা বলেছেন যে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মামলা বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, এর আগে বিচার হয়েছে, সেটা কম্পেয়ার করে দেখিয়েছি। বলেছি যে, কোনো রকম বিলম্ব করা হচ্ছে না। আমরা উনাদের সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর উনারা আর কথা বলেননি। তার মানে উনারা বুঝতে পেরেছেন। তারা আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি যে, এটা অচিরেই হয়ে যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনারা ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন। আমরা বাড়ানোর প্রক্রিয়া কমপক্ষে একমাস আগে থেকে শুরু করেছি। আমাদের তো উপযুক্ত বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে, আমাদের লজিস্টিক ঠিক করতে হবে। এটা এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে।

আসিফ নজরুল বলেন, দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে, অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা মন খুলে কথা বলেছেন। উনারা বলেছেন, বিএনপি দেশে গত ১৫ বছর যাবৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। অবশ্যই এটার জন্য আমরা শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছি। উনারা কিছু বিষয় বলেছেন যে, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যেটা বিএনপি’র প্রতিকূলে গেছে। আমরা উদাহরণ দিয়েছি, সিদ্ধান্ত আছে- যেটা বিএনপি’র অনুকূলে গেছে। তারপরও উনারা বলেছেন যে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস, পুরো সরকারি আইনজীবীদের অফিসটা পুনর্গঠন হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে, এ সময়ে ৮ হাজারের মতো মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, ১৬ হাজারের মতো মামলা লিস্টেড আছে। আমরা বলেছি যে, এত দ্রুত গতিতে সম্ভব কিনা? উনারা আমাদেরকে বলেছেন, আমাদের বুঝতে পেরেছেন তিনি বলেন, উনারা (বিএনপি) বলেছেন যে, দলের যে সংস্কার ভাবনা এটা বহু পুরনো, উনারা সবসময় সংস্কারপন্থি দল, আমরা এটা এগরি করেছি। অবশ্যই বিএনপি সবসময় সংস্কারের কথা বলেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিএনপি আমাদের সংস্কারের জন্য যেসব কমিশনে আছে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবাবলী আছে- সেটার ক্ষেত্রে বিএনপি’র অত্যন্ত পজেটিভ রেন্সপনস দেখিয়েছে। তারা বলেছে যে, তারা শিগগিরই ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মিটিংয়ে বসবে এবং কমিশনের অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে তারা ঐকমত্য পোষণ করে। জুলাই চার্টার্ড খুব দ্রুতগতিতে হয়ে যাবে, এটা তারাও আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা ছিলেন।

পাঠকের মতামত

Sir, sotti apnr kothagulo sunte onek onek valo lage. Apne ekdom real kothagulo bolen.

Akash Roy Chowdhury
১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

কি উদ্ধার করার জন্য জুন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হবে? রোড ম্যাপ দিচ্ছো না কেন?

সিরু
১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

বিএনপির নির্বাচন নির্বাচন বললে হবেনা বর্তমান সরকার কে জুন মাস পর্যন্ত সময় দিলে ভালো হবে এই সময়ের মধ্যে হাসিনা সহ ফ্যাসিস্ট দের বিচার সম্পন্ন করতে হবে বিএনপি বিচার করতে গেলে বলবে প্রতিহিংসা।

Mdariufurrahman
১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status