খেলা
পারটেক্সের ক্রিকেটারদের নিয়ে সন্দেহ, আকু’র শরণাপন্ন কোচ
সৌরভ কুমার দাস
১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক ইস্যু নিয়ে বিতর্ক যেন শেষ হওয়ার নয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ (ডিপিএল) সবখানেই একই রোগ! পারিশ্রমিক না পেয়ে গতকাল অনুশীলন বর্জন করেন ডিপিএলের দল পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেটাররা। যদিও ক্লাব অফিশিয়াল ও কোচ জানিয়েছেন, পারিশ্রমিক ঠিকমতো শোধ করা হচ্ছে। পারিশ্রমিক নিয়ে বিতর্কের মধ্যে পারটেক্স কোচ আনোয়ারুল মোস্তাকিম জানিয়েছেন, তার দলের ক্রিকেটাররা দলের সিদ্ধান্ত মানেন না। ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে তার কাছে ফিক্সিং সন্দেহে ফোনও করা হয়েছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের (আকু) শরণাপন্ন হয়েছেন পারটেক্স কোচ।
গতকাল দুপুরে বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী বরাবর একটি চিঠি দিতে যান পারটেক্সের ক্রিকেটাররা। তাকে না পেয়ে পরে তার অফিসে চিঠি জমা দিয়ে আসেন তারা। গতকাল সকালে পারটেক্সের জার্সি গায়ে ৩-৪ জন অনুশীলন করলেও বাকিরা ছিলেন না। বিসিবিতে চিঠি দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যেম পারটেক্সের অলরাউন্ডার মুক্তার আলী বলেন, ‘এই দলের পারিশ্রমিক এমনিতেই খুব কম। যারা খেলছি, মূলত প্রিমিয়ার লীগটা খেলার জন্য খেলছি। এখানে শতাংশের হিসাবে বলাও মুশকিল। কেউ হয়তো এক লাখ পেয়েছে, কেউ আবার দশ হাজার। চার-পাঁচ জনের মতো পঞ্চাশ ভাগ পেয়েছে। বাকিদের ১০ বা ২০ ভাগ দেওয়া হয়েছে।’
তবে পারটেক্সের ক্রিকেট কর্মকর্তা ও কোচ মোস্তাকিমের দাবি ক্রিকেটারদের এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। আজ ১০ থেকে ২০ শতাংশ দেওয়ার কথা। দৈনিক মানবজমিনকে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ক্রিকেটারদের ৬০ শতাংশ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে আর বলছি গ্রাজুয়ালি বাকিটা লীগ চলকালীন ও লীগের পরে দেওয়া হবে। এমন তো বলিনি যে দিবো না। লীগের ৪৫ দিনের মধ্যে না পেলে তখন বলতে পারে যে পাইনি! এখন কেন?’
লীগের ৯ রাউন্ড শেষে মাত্র ২ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের ১১ নম্বরে পারটেক্স। ৭ হারের কোনো ম্যাচেই লড়াইও করতে পারেনি দলটি। এর মধ্যে আগেভাগে শতভাগ পেমেন্ট করলে শেষ ম্যাচে খেলোয়াড়রা কেমন খেলবে এটা নিয়ে সংশয়ে ক্লাব অফিশিয়াল। সবমিলিয়ে ক্রিকেটারদের নিয়ে বিরক্ত কোচ মোস্তাকিমও। তিনি বলেন, ‘তাদের নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা খুবই বাজে। ক্রিকেটাররা আসলে দলের প্রতি কোনো আন্তরিকতাই দেখায়নি, দলের জন্য খেলেনি।’
মোস্তাকিম বলেন ক্রিকেটাররা টিম ম্যানেজমেন্টের ইনস্ট্রাকশন শোনেন না। কয়েকটি ম্যাচে বাইরে থেকে তাকে ফোন করে জিজ্ঞাসাও করা হয়েছে ক্রিকেটাররা ফিক্সিং করছে কিনা! এই অবস্থায় আকুকেও জানিয়েছেন মোস্তাকিম। তিনি বলেন, ‘আমরা বলি একরমক ভাবে খেলতে ওরা মাঠে গিয়ে খেলে অন্যরকমভাবে। এজন্য ম্যাচও হারছি। সন্দেহ বলতে আরকি তারা কি পারে না নাকি ইচ্ছা করে করছে না এটা বুঝছি না। তুমি অল্পতেই আউট হয়ে যাও কিন্তু পজিটিভ ক্রিকেট খেলো, এটাই ছিলো আমাদের চাওয়া।
ক্রিকেটারদের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা করেছেন পারটেক্স কোচ, ‘ক্রিকেটারদের বলেছি, তোদের খেলা দেখা কিন্তু মানুষ এই ধরনের কথা বলছে ফোন দিয়ে। হয়তো এমন কিছু না, কিন্তু মানুষ কিন্তু সন্দেহ করছে। তোরা খেলার ধরন পালটা, পজিটিভ খেল। আমি এই ইন্সট্রাকশন দিয়েছিলাম কিন্তু তারা শোনেনি।’
মোস্তাকিম বলেন, ‘ব্যাটাররা মেডেনের পর মেডেন দিচ্ছে, কোনো রান করার চেষ্টাও করছে না। এই যুগে এখন ওয়ানডেতে কেউ টানা বল ব্লক করে না! রান করতে হবে, ম্যাচ জিততে হবে এই ধরনের অ্যাপ্রোচ ছিল না তাদের মধ্যে। এটাই বাকিদের চোখে লাগছে। এতে আমরাও শঙ্কিত হয়ে গেছি, দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছি কিন্তু স্পষ্ট কিছু বলতে পারছি না কারণ আমাদের কাছে তো প্রমাণ নেই।’
এ বিষয়ে আকুর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন মোস্তাকিম। তিনি বলেন, ‘আকুর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে...আমি তাদের বলেছিলাম এটা একটু দেখেন আমি তো বুঝছি না। আপনারা ভালো জানেন, অভিজ্ঞতা আছে, আমার খেলোয়াড়দের সন্দেহ করছে মানুষ, আপনারা এটা একটু বের করেন। কেউ এমন করতে পারে কিনা বা কারা করছে। আকু অবশ্য এখনও কিছু জানায়নি।’
দলের পারফর্মেন্স ও সাব্বির রহমানের অধিনায়কত্ব নিয়ে মোস্তাকিম বলেন, ‘আমাদের দলের সিনিয়র ও জুনিয়রের মধ্যে অনেক দূরত্ব ছিল। একটা দল হিসেবে কখনো এক করতে পারিনি। সিনিয়রদের কাছে জুনিয়ররা যাবে এমন হয়নি কখনো। মাঠে সাব্বিরের আচরণ আশানুরূপ ছিল না, কারও সঙ্গেই। ক্যাপ্টেন হিসেবে সে আসলে পারফেক্ট ছিল না, ম্যানেজমেন্টের ভুল ছিল। ক্যাপ্টেন্সির চাপ সে নিতে পারেনি, প্রতিদিনই কারো না কারও সঙ্গে তার মনোমালিন্য হতো। বাকি খেলোয়াড়রাও তাকে নিয়ে খুশি ছিল না।’ কাল (আজ) খেলোয়াড়রা খেলবে না প্রশ্নে মোস্তাকিম বলেন, ‘আমাকে ৭০ শতাংশ খেলোয়াড় জানিয়েছে তারা খেলবে। তারা বড়ভাইদের প্ররোচনায় এমন করেছে।’