বাংলারজমিন
শোভাযাত্রায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
(৩ দিন আগে) ১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৪:৪৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:১৮ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজিত বর্ষবরণ ও আনন্দ শোভাযাত্রায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার এক আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতাকে অংশ নিতে দেখা গেছে। সোমবার সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে বের হওয়া আনন্দ শোভাযাত্রার সামনের সারিতে ছিলেন তিনি।
ওই ব্যক্তির নাম মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। তিনি কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কুষ্টিয়া বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন। তার ছেলে নাইমুল ইসলাম শিপন কুষ্টিয়া শহর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি হয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন তিনি। এদিকে জেলা প্রশাসনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতাকে শোভাযাত্রায় দেখতে পেয়ে রাজনৈতিক ও সাধারণ মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শোভাযাত্রার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন নেটিজেনরা। তবে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কিছু জানেন না জানালেও মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম শেভাযাত্রায় উপস্থিত থাকার বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আজ বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নানা আয়োজন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। মজমপুরগেটসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে বনবীথিতে এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের আনন্দ শোভাযাত্রার ব্যানার ধরে সামনের সারিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেমকেও দেখা যায়।
জেলা প্রশাসনের আনন্দ শোভাযাত্রায় দেখা যায়, ব্যানার হাতে সামনের সারিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান, তার ডান পাশে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তার ডান পাশে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র, তার ডান পাশে কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ও তার ডান পাশেই মোকাররম হোসেন মোয়াজ্জেম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোকারম হোসেন ৫ আগস্ট কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় তামজিদ হোসেন জনি নামে এক যুবককে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত ৪২ নম্বর আসামি। ওই মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক এমপি মাহবুবউল আলম হানিফ। মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও আরো ৪০ থেকে ৪৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়ের করা ওই মামলার বাদী ভুক্তভোগী বড় ভাই জিলহজ হোসেন। হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেমসহ এই শোভাযাত্রার ছবি জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজ District police Kushtia-তে আপলোডও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোকারম হোসেন মোয়াজ্জম প্রথমে মামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজ সকালে জেলা প্রশাসনের বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলাম। মামলার প্রমাণ রয়েছে জানালে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা আছে জানিয়ে তিনি এই প্রতিবেদকের সাথে দেখা করতে চান।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি সুলতান মারুফ তালহা বলেন, ‘একজন জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আমি বলবো যারাই ফ্যাসিস্টদের সহযোগিদের নিয়ে পথ চলবে তারাই নিন্দনীয় হবে। সে, আমি হই,ডিসি হই,বিএনপি হোক আর জামায়াত হোক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের ঘটনায় হত্যা চেষ্টার আসামি এবং আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে এমন শোভাযাত্রা মানেই আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা।’
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘এমনাটা কেন হলো। ব্যাপারটি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবো।’
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ‘শোভাযাত্রায় কোনো মামলার আসামি ছিল কি-না আমি জানিনা। ছবিতে যদি থেকে থাকে আমাকে চিহ্নিত করে দেন আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি এখনই।’
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি তাকে চিনি না। খেয়ালও করিনি। তিনি মামলার আসামি হলে আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলবো।’