প্রবাস
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া
(২ দিন আগে) ১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৬:২৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:২৬ অপরাহ্ন

কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে। গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, কুয়ালালামপুরের একটি অভিজাত পাঁচতারা হোটেলে এই বিশেষ দিনে একটি কূটনৈতিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে মালয়েশীয় সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কূটনীতিক, মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও চেম্বার নেতা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের সদস্য, সাংবাদিক এবং মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় চার শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
মালয়েশীয় সরকারের নারী, পরিবার এবং কমিউনিটি উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী দাতো সেরি হাজাহ ন্যান্সি সুকরি অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, মেলাকা প্রদেশের গভর্নর এবং কুয়ালালামপুরের মেয়র বিশেষ অতিথি হিসেবে সংবর্ধনায় যোগ দেন।
গেস্ট অব অনার হাজাহ ন্যান্সি সুকরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত অতিথি ও রাষ্ট্রদূতগণ হাইকমিশনার শামীম আহসান এবং তাঁর সহধর্মিনী মিসেস প্যান্ডোরা চৌধুরীর সাথে কেক কাটা ও ফটোসেশন পর্বে অংশগ্রহণ করেন।
হাইকমিশনার শামীম আহসান তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ‘২৪-এর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সকল শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগকারী বীর যোদ্ধাদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন। একইসাথে, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ‘২৪-এর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের আদর্শকে ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে হাইকমিশনার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বহুস্তরের এবং এটি পারস্পরিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও ঐতিহাসিক বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্বালানি, পর্যটন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বিদ্যমান রয়েছে।
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের বাংলাদেশ সফর দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। হাইকমিশনার আশা প্রকাশ করেন যে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস খুব শীঘ্রই মালয়েশিয়া সফর করবেন।
হাইকমিশনার রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মালয়েশিয়ার দৃঢ় সমর্থনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে, তিনি বাংলাদেশকে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আসিয়ানের সকল সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানস্থলে সুসজ্জিত বাংলাদেশ কর্নারে ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, জিআই পণ্য, রপ্তানিযোগ্য পণ্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনা স্থান পায় যা উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে।
অনুষ্ঠানে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরসহ বাংলাদেশের পর্যটন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিনিয়োগ এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
আপ্যায়ন পর্বে অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানি ও রসগোল্লাসহ বিভিন্ন মুখরোচক বাংলাদেশী খাবার পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে কাচ্চি বিরিয়ানীর স্টলে অতিথিদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া, আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে জামদানি ও পাটের তৈরি আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, এ বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রমজান মাসে হওয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আয়োজন করে।