ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

বাঁধে পানি প্রবাহ: বন্ধ ছাতক-কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তবর্তী নদীতে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
mzamin

ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তঘেঁষা খরস্রোতা সোনাই   নদীতে দেয়া হয়েছে মাটি-পাথরের বাঁধ। এই বাঁধের ওপর দিয়ে চলে পাথরবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টর। ছাতকের ইছামতী নদী থেকে পাথরভর্তি ট্রাক বাঁধের ওপর দিয়ে যায় কোম্পানীগঞ্জ। প্রতিবার যেতে গুণতে হয় তিনশ’ টাকা চাঁদা। আর বাঁধে ট্রাক্টর রেখে নদীতে থাকা বালুভর্তি নৌকা থেকে বালু লোড করা হয় ট্রাক্টরে। এখানে প্রতি ট্রিপে ট্রাক্টরকে চাঁদা দিতে হয় তিন হাজার টাকা। সোনাই নদীর ছনবাড়ী-গাঙপাড়-নোয়াকোট পয়েন্টের চিত্র এটি। নদীটির ওই অংশে ৩৫০ ফুট দীর্ঘ ও প্রায় ১৮ ফুট প্রস্থ করে মাটি ও পাথরের বাঁধ দেয়া হয়েছে। মাঝে পানি চলাচলের জন্য ১০ ফুট অংশ নিচু করে রাখা হয়েছে। বাঁধটি টেকসই করার জন্য তার ভাঁজে ভাঁজে এবং দুইপাশে বিপুল পরিমাণ পাথর ফেলা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের ব্যয় তোলার কথা বলে বাঁধের পশ্চিম পাশে নোয়াকোট পয়েন্টে মসজিদের ঘাটে বসে ট্রাক-ট্রাক্টর থেকে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মখলিছুর রহমান, তার ভাই আব্দুল কুদ্দুস, রফিক, ইলিয়াছুর রহমান ও তাদের সহযোগী কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী মিলে এই বাঁধটি নির্মাণ করেছেন। তাদের দেওয়া বাঁধের ওপর দিয়ে প্রতিদিন অন্তত দুইশ’ ট্রাক-ট্রাক্টর বালু ও পাথর পরিবহন করে। এ হিসেবে প্রতিদিন এখানে তিন লক্ষাধিক টাকার চাঁদাবাজি হয়। এ বিষয়ে মখলিছুর রহমান জানান- এতদিন এখানে ব্রিজ না থাকায় এলসি’র পাথর পরিবহনের সুবিধার কথা ভেবেই তারা মাটি-পাথর ফেলে বাঁধটি তৈরি করেছিলেন। কয়েক বছর আগে যখন এই বাঁধ তৈরি হয়, তখন কোনো ব্রিজ ছিল না। বর্তমানে একটি ব্রিজ হলেও গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। এলসি ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মতি নিয়েই বাঁধটি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।  চাঁদাবাজির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন- এখানে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি হয় না। বরং গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বাঁধের মেরামতের প্রয়োজনে টাকা তোলা হয়। তবে নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ রাখায় কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- মাটির বাঁধটির অদূরেই একটি নতুন ব্রিজ হয়েছে। চাঁদাবাজ চক্রের চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখতে ব্রিজটি খোলে দেয়া হচ্ছে না। সোনাই নদীর এই বাঁধের বিরূপ প্রভাব পড়ছে নদীতীরবর্তী জনপদে। ২০২২ এর ভয়াবহ বন্যা ও ২০২৩ এর আকস্মিক বন্যায় কোম্পানীগঞ্জ ও ছাতকের অসংখ্য বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ভেঙেছে। স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যার পানি সরাসরি আঘাত হেনেছে তীরবর্তী এলাকায়। কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। প্রতি বছর নদীভাঙনের কবলে পড়েন রতনপুর, নিজগাঁও, গাংপার, নোয়াকোট, বাহাদুরপুর, বৈশাকান্দি, বনগাঁও, ছনবাড়ী ও তৎপার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন। গাংপার নোয়াকোটের ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান সান্ডুল বলেন, এই বাঁধের ফলে ২০২৩ এর বন্যায় বনগাঁও, শাহ আরেফিন, বাগানবাড়ী, রতনপুর, ধনীটিলা ও পুরান নোয়াকোট রাস্তা ভেঙেছে। ধনী টিলায় একটি কালভার্ট ভেঙেছে। এখনও এগুলো মেরামত করা যায়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ময়না মিয়া বলেন, আমরা বহুবার স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। ব্যবসায়ী মো. আছদ্দর আলী বলেন, মাটির বাঁধের পাশাপাশি সোনাই নদীর ওপর ২০১২ সালে নির্মিত রাবার ড্যামটি সীমান্তবাসীর জন্য আরেক দুঃখ। এটি কৃষকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। কৃষকেরা আগে যেভাবে সেচ কাজ করতো, এখনও সেভাবেই করে। তাদের লাভের বদলে ক্ষতি হয়েছে। নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ কাজ চরমভাবে ব্যাহত হয়। নাব্য সংকটের কারণে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানি ধারণ করতে পারছে না নদীটি। এই সংকট উত্তরণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি।  ছাতক থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ বন্ধ করার এখতিয়ার কারও নেই। নতুন এসেছেন। এখনও ওই এলাকায় যাওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান। কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত বলেন, কোনোভাবেই নদীতে মাটির বাঁধ দেওয়া উচিত না। এটা অন্যায়। তিনি ছাতকের এসিল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status