বাংলারজমিন
ময়মনসিংহে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার নেপথ্যে...
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবারময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় মাদক বিক্রি, নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা ও চুরির অভিযোগে শালিসে না যাওয়ায় বাবা-ছেলেকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোমবার নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগম বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৬০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। পুলিশ বলছে, নিহত গফুর ও তার ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আবদুল গফুর নাওগাঁও ইউনিয়নের ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করে মাদক ব্যবসা করতেন তিনি। ওই সময় ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন মাদক বিক্রি, চুরি ছিনতাইয়ে বাধা দিলে তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন। দেশের ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও তার কোনো পরিবর্তন আসেনি। পূর্বের প্রভাব দেখিয়ে এখনো মাদক বিক্রি, চুরি ছিনতাই অবাধে করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় চুরি ছিনতাই চাঁদাবাজির ৩টি ও ছেলের বিরুদ্ধে ১টি মাদক মামালা আছে। এর প্রতিকারে সমপ্রতি তিনি ও তার ছেলে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে মাছ ও মোবাইল চুরি, মাদক বিক্রির ঘটনায় স্থানীয়রা শালিস ডাকেন। কিন্তু বাবা ছেলে শালিসে না এসে ঘরে রাম-দা নিয়ে বসে থাকে। শালিসকারীরা তার বাড়িতে ডাকতে গেলে রাম-দা হাতে নিয়ে বাবা ছেলে তাদের ধাওয়া করে। পরে শালিসকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হাত থেকে রাম-দা কেড়ে নিয়ে তাদের কুপিয়ে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে ওইদিন রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- পলাশীহাটা গ্রামের মো. রিপন (৩২), নাওগাঁও গ্রামের মো. মোজাম্মেল হক (৬৫) ও এক কিশোর (১৩)। নিহত আব্দুল গফুরের স্ত্রীর করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত রোববার দুপুরে ময়মনসিংহ আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। স্থানীয় আঃ মান্নান জানান, ৪ বছর আগে গফুর তার দলীয় লোকজন নিয়ে আমাকে কুপিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবনযাপন করছি। আমার দায়ের করা মামলায় গফুরের ২ বছরের সাজা হলেও সে জেলে যায়নি। পুলিশও আটক করতে পারেনি। এলাকায় এখনো সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক বিক্রি, চুরি-ছিনতাই করে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে তার সকল অপকর্মের সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তবে নিজ হাতে আইন তোলে নেয়াটা ঠিক হয়নি।
নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, মেহেদী ৪-৫ দিন আগে আবদুল মোতালেবের ফিশারিজ থেকে মাছ ধরায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বকাঝকা করে। এর মধ্যে প্রতিবেশী বিদেশ ফেরত একজনের কিছু কাগজ ও মোবাইল চুরি হওয়ার অপবাদ দেয় মেহেদীকে। এ নিয়ে শালিস বসালে আমার স্বামী ছেলে শালিসে যায়নি। সে কারণে বাড়িতে এসে হামলা করে। ফুলবাড়ীয়া থানার ওসি মো. রুকনুজ্জামান বলেন, নিহত আব্দুল গফুর বিভিন্ন ঘটনায় ৩টি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার ছেলে একটি মাদক মামলা আসামি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।