বাংলারজমিন
ভিসিকে আল্টিমেটাম
২৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সিমেবি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
দীর্ঘ ২৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিমেবি) আড়াইশ’ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বারবার আন্দোলনে গেলেও আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। তবুও তাদের বেতন-ভাতা হয়নি। চাকরি হয়নি নিয়মিতকরণ। এই অবস্থায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নামার হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। চাকরি নিয়মিতকরণ ও ভাতা প্রদানে ভিসিকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহবান করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায়, দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি প্রদান করেন তারা। শনিবার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের পক্ষ থেকে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। পরিষদের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তাদের পরিশ্রমের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশনজট তৈরি হয়নি। একদিনের জন্যও তারা কাজ বন্ধ রাখেননি। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন মুকুল আমাদের একাধিকবার চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছেন। এজন্য ২০২৩ সালের ২৬শে জুন শূন্য পদের বিপরীতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ২০২৩ সালের ১৭ই জুন আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু আজ অবধি দু’টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে স্বৈরশাসক হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক সাবেক ভিসি এনায়েত ও রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান গা ঢাকা দেন। দু’জনই ছিলেন ফ্যাসিস্টের দোসর। একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে আন্দোলনরতরা ভিসি এনায়েত ও ফজলুর রহমানের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান পদত্যাগ করেন। প্রায় চার মাস পর ভিসি ডা. এনায়েত হোসেন ক্যাম্পাসে ফেরেন। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে এসে তাদের চাকরি স্থায়ী ও বেতন-ভাতার বিষয়ে ভিসির কাছে জানতে চান। একপর্যায়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেন বেতন বঞ্চিতরা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ১৫ দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণসহ সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন ভিসি এনায়েত। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর মেহেদী অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নিতে অনুরোধ করলে তারা অবরোধ তুলে নেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ভিসির আশ্বাসের ১৫ দিনের ডেডলাইনের ১৪ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সিন্ডিকেটে ডিন অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামকে সভাপতি করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ইতিপূর্বে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃতদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বেতন-ভাতাদি প্রদান প্রসঙ্গে একটি সুস্পষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এ ছাড়াও সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সকল সদস্যের আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা, আদালতের নির্দেশনা, আর্থিক ও প্রশাসনিক বিধি-বিধান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র নির্দেশনা পর্যালোচনা করে মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় নিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রতিবেদন প্রদানে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে গত বছরের ৬ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য্যের অনুমোদনক্রমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদন জমা প্রদানের শেষ সময় ছিল ১৯শে ডিসেম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে তারা আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর গত ২০শে ডিসেম্বর ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগ করলে চলতি বছরের ৩১শে জানুয়ারি ও ১লা ফেব্রুয়ারি তারা ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ভাইভা পরীক্ষার বোর্ড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ছাড়াও বিএমএন্ডডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারী। তিনি যোগদানের পর গত ১৬ই মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি ২৫শে মার্চ পর্যন্ত ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন বলে লিখিত পত্রের মাধ্যমে ভিসিকে জানানোর পরও তার অনুপস্থিতিতে গত ২৩শে মার্চ বর্তমান ভিসি ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন। কমিটির সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় নিয়োগ রিপোর্টটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। ওই সিন্ডিকেটের পর থেকে উপাচার্য চৌহাট্টাস্থ কার্যালয়ে অফিস করেননি। তিনি পূর্বের ভিসির রেখে যাওয়া স্বৈরাচার দোসরের মতাবলম্বী মানুষ দিয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদিকে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে ওই রিপোর্টের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।