শেষের পাতা
চট্টগ্রামে উন্মুক্ত খালে থামছে না মৃত্যুর মিছিল, এবার প্রাণ গেল শিশুর
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় হিজড়া খালে পড়ে নিখোঁজ ছয় মাসের শিশু সেহরিশের লাশ উদ্ধার হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কাপাসগোলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খাল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম স্টেশনের কর্তব্যরত কর্মকর্তা জানান, সকালে শিশুটির লাশ চাক্তাই খালে ভেসে ওঠে। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, এর আগে শুক্রবার রাত আটটার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশুসহ তিনজনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা ও দাদি খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। শিশুটিকে উদ্ধারে গতকাল সিটি করপোরেশন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছে। রাত তিনটা পর্যন্ত খালের বিভিন্ন অংশে নেমে ডুবুরিরা তল্লাশি করেন। শনিবার সকাল সাতটায় নৌবাহিনী পুনরায় অভিযান শুরু করে। স্থানীয়রা জানান, শিশু সেহরিশের মায়ের নাম সালমা বেগম। বাবার নাম মো. শহিদ। তারা নগরের আছদগঞ্জ এলাকায় থাকেন। চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় মো. শহিদের বোনের বাসা। সেখানেই বেড়াতে এসেছিলেন সালমা বেগম, শিশু সেহরিশ ও তার দাদি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে উঠেছিলেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়। সেটিই উল্টে পড়ে খালে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক জানান, খালটি হিজড়া খাল নামে পরিচিত। খালের বিভিন্ন অংশে আবর্জনার স্তূপ। চালক অটোরিকশাটি ঘোরাতে গিয়ে খালে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে দুই নারী উঠে এলেও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। নগরে গতকাল সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে খালে পানির স্রোত ছিল।
স্থানীয় এক যুবক বলেন, খালটির সঙ্গে সড়ক একেবারে লাগোয়া। এ সড়কে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলায় খালের পাশে থাকা একটি নিরাপত্তাবেষ্টনী খুলে রাখা হয়েছিল। এ কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলো। নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। অবশ্য গতকাল রাতে মেয়র শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে খালের পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী বসানো হবে। এদিকে চট্টগ্রাম নগরের উন্মুক্ত খালগুলো যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যুকূপ। একের পর এক খালে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ আর ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েই দায় সেরেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নেয়া হয়নি খালগুলো নিরাপদ রাখার উদ্যোগ। এর আগে চট্টগ্রামের বন্দর থানার পশ্চিম গোসাইলডাঙ্গা ও আবিদার পাড়ার মাঝামাঝি এলাকার খাল থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২৪ সালের জুনের ওই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা বক্স ড্রেনের ঢাকনা খোলা থাকায় শিশুটি খেলতে গিয়ে খালে পড়ে যায়।
২০২১ সালের ৩০শে জুনে ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকার চশমা হিলে অটোরিকশা ড্রেনে পড়ে যায়। এ সময় অটোরিকশা চালক ও যাত্রীর সলিল সমাধি ঘটে। একই বছর ২৫শে আগস্ট দুই মাসের মাথায় মুরাদপুর এলাকায় খালে পড়ে নিহত হন একজন। হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে তিনি প্রবল স্রোত থাকা ওই নালায় পড়ে যান। পরের মাস সেপ্টেম্বরে নাছিরছড়া খালে পড়ে তলিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়া। পড়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে ১৯ বছরের এই তরুণীর লাশ পরিবারকে হস্তান্তর করে। একই বছরের ডিসেম্বরে চশমা খালে নেমে ১১ বছরের এক শিশু তলিয়ে যায়। পরে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, খালগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে বছরের পর বছর। মানুষ পরে মারা যাওয়ার পরও রেলিং স্থাপন করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র শোক প্রকাশ ও কিছু টাকা নিহতের পরিবারকে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাচ্ছে না। জরুরিভিত্তিতে গোটা নগরীর খালগুলোতে রেলিং স্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।