ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

মাইনাস রঞ্জিত, ভাবছে সিলেট আওয়ামী লীগ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

সিলেট আওয়ামী লীগে রঞ্জিত সরকার কখনোই কোনো ফ্যাক্টর ছিল না। তাকে দ্বিতীয়সারির নেতা হিসেবে বিবেচনায় রাখা হতো। সিলেটের শীর্ষ নেতাদের কাছে তার অবস্থানও ছিল ক্ষীণ। শুধুমাত্র টিলাগড় গ্রুপ কেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে তাকে কখনো কখনো গণনায় ধরা হতো। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির কারণে এখনো ক্যাডার খ্যাতি তার নামের পাশ থেকে সরে যায়নি। সেই রঞ্জিতকে হঠাৎ করে টেনে আকাশে তুলে দিলেন সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মনোনয়ন পাইয়ে দিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপিও করে দিলেন তিনি। ৮ মাস ধরে পলাতক সিলেট আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশির ভাগেরই অবস্থান ভারতের মেঘালয় ও কলকাতায়। আছেন লন্ডনেও। দলের দুর্দিন। ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতারা উৎকণ্ঠায়। এই অবস্থায় রঞ্জিত সরকার ও তার বলয়ের নেতাকর্মীদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ভাবিয়ে তুলেছে সিলেট আওয়ামী লীগকে। নেতারা জানিয়েছেন; লন্ডনে থাকা পলাতক রঞ্জিত সরকার এখন অনেক বেশি বেসামাল। তার আচরণও বেপরোয়া। লন্ডনে থেকে অনেক নেতাদের গালিগালাজও করছেন। ভার্চ্যুয়ালি নানাভাবে হেনস্তা করে চলেছেন। আর ওদিকে ভারতে থাকা তার গ্রুপের কর্মীরা বেপরোয়া। সিনিয়র নেতাদের পর্যন্ত তোয়াক্কা করছে না তারা। এই অবস্থায় রঞ্জিত সরকার ও তার বলয়কে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত দলের সিলেটের নেতারা। লন্ডনে থাকা কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- রঞ্জিত সরকার লন্ডনে থাকা নেতাদের সঙ্গে বেয়াদবি করেই যাচ্ছেন। একইসঙ্গে তার ভারতে থাকা তার বলয়ের কর্মীরাও বেপরোয়া আচরণ করছেন। অথচ এই ক’মাসে সিলেটে কার্যক্রম শুরু করতে নানা ভাবে রঞ্জিত ও তার বলয়ের নেতাকর্মীদের বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই নির্দেশ পালন করেননি। তারা জানিয়েছেন- লন্ডনে থাকা রঞ্জিত সরকার আওয়ামী লীগ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী রঞ্জিত সরকারকে লন্ডনে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এমনকি ওখানে এসাইলাম নিয়ে বসবাসের জন্য আনোয়ারের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে রঞ্জিত সরকার সিলেট-৩ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ কয়েকজনের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে রঞ্জিত সরকারের কথা বলে কয়েকজন নেতা অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া কলকাতায় থাকা রঞ্জিতের অনুসারীরাও কাউকে পরোয়া করছেন না। ৯ই ডিসেম্বর ট্রাকচালককে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে কলকাতা থেকে মেঘালয়ের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তিসহ ৫ নেতা। গ্রেপ্তারের পর তারা জোয়াই আদালত থেকে মুক্তিও পেয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। এই ঘটনার জন্য কলকাতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষ থেকে দোষারোপ করা হয়েছিল রঞ্জিত বলয়ের নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও দেবাংশু দাশ মিঠুকে। নেতারা জানিয়েছেন- ওদের ইন্ধনেই ডাউকি শ্রমিকদের একটি গ্রুপ মামলা নাটক সাজিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর ও মিঠু আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। ভারতে থাকা রঞ্জিত বলয়ের নেতারা সিলেটে নানাভাবে উস্কানি অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। পলাতক থাকা দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন- নানা ঘটনায় দুষ্টু সিলেট ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপ ও বলয়ের শীর্ষ নেতা রঞ্জিত সরকার। দল ক্ষমতায় থাকাকালেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত ছিল না। টিলাগড়কে বিষাক্ত করে তুলেছিল তারা। কিন্তু গ্রুপিং রাজনীতির কারণে তারা সবসময় অগ্রাধিকার পেয়ে যায়। দলের এই দুর্দিনে তাদের বেসামাল আচরণ কেউই ভালো চোখে দেখেননি। এ কারণে সম্প্রতি সময়ে লন্ডনে অবস্থান করা সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ভারতে অবস্থান করা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, লন্ডনে অবস্থান করা সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ সিনিয়র নেতা একাধিকবার ভার্চ্যুয়ালি সভা করেছেন। এসব সভায় সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনার পর রঞ্জিত ও তার বলয়কে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। তাদের কয়েক দফা বৈঠকে সিলেটের নেতারা এ ব্যাপারে সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন; রঞ্জিতকে কাছে টানার চেষ্টা করলে তিনি সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের হারাবেন। এতে করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও পিছুটান দিয়েছেন বলে দলের নেতারা জানান। সিনিয়র নেতাদের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক এবং পর্যালোচনার বিষয়টি ইতিমধ্যে পলাতক থাকা নেতাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কাছে পৌঁছেছে। রঞ্জিত ও তার বলয় থেকে সতর্ক থাকতে সবাইকে বলা হয়েছে। ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন- রঞ্জিত সরকার ও তার বলয়ের একের পর এক কর্মকাণ্ড পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের বিব্রত করছে। কে কখন কার সঙ্গে কী আচরণ করে বসে সেটি বলা মুশকিল। এ কারণে এখন ন্যূনতম পর্যায়ে সাংগঠনিক সম্পর্ক পালন ছাড়া কোনো বিষয়েই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না কেউ। এদিকে কয়েকদিন আগে লন্ডনের পার্কে রঞ্জিত সরকার ও সিলেটের আরেক নেতা বিধান কুমার সাহার এক সঙ্গে হেঁটে বেড়ানোর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওখানকার নেতারা জানিয়েছেন- লন্ডনের পরিবেশ ভিন্ন। এখানে বাঙালি সোসাইটিতে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। রঞ্জিত সরকার এই পরিবেশের সঙ্গে এখনো খাপ খাওয়াতে পারেননি। তার নানা কর্মকাণ্ডের বিষয়টি বাঙালি কমিউনিটিতে প্রকাশ পাচ্ছে। সিলেটের টিলাগড়ের গোপালটিলায় রঞ্জিত ও তার গ্রুপের অবস্থান। তারা টিলাগড় থেকে বটেশ্বর পর্যন্ত পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। কমপক্ষে ১০-১২টি টর্চার সেলে নিয়ে নিরীহ মানুষদের নির্যাতন করতো। চোরাচালান, অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা রঞ্জিত ও তার বলয়ের নেতারা করেনি। তার এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সিলেট আওয়ামী লীগকে আরও বেশি কলঙ্কিত করেছে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।    

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status