শেষের পাতা
সিলেটে হাওয়া হয়ে গেল তুষারের চিহ্নিত ঘাতকরা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
সিলেটের পূর্ব শাহী ঈদগাহ্ টিবি গেট এলাকা পরিচিত অপরাধ জোন হিসেবে। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদ নীপু। ভয়ঙ্কর সব অপরাধে কাঁপতো ওই এলাকা। সর্বশেষ দুই বছর আগে হিরণ মাহমুদ গ্রুপের কর্মীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে ছাত্রলীগকর্মী আরিফকে। সেটি ঘটেছিল তুষার হত্যাকাণ্ডের স্থল থেকে অদূরে টিবি গেট এলাকায়। আরিফ হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে ফের হত্যার শিকার হলো ছাত্রলীগকর্মী তুষার আহমদ চৌধুরী। তার খুনের মধ্য দিয়ে ফের ওই এলাকায় আতঙ্ক নেমে আসে। পাশেই সদর উপজেলা খেলার মাঠে চলছে বৈশাখী মেলা। মেলার পেছনেই দলদলি বাগানের মদের পাট্টার পাশে ঘটে তুষার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- যেখানে তুষারকে খুন করা হয় সেটি ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত। দলদলি চা বাগানের প্রবেশমুখ। এর আগেও এখানে কয়েকটি আলোচিত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তুষার খুন হয়েছিল নিরিবিলি স্থানে। প্রায় দেড়ঘণ্টা তুষারের মরদেহ পড়েছিল বাগানের প্রবেশমুখে। পরে তার লাশ উদ্ধার করে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু মোটিভ অজানা এ খুনের রহস্য খুব দ্রুতই খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। এক আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মূল আসামি সহ কয়েকজন এখনো অধরা। তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ। এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের শেষ সীমানা। আবার কোতোয়ালি ও শাহ্পরাণ থানা পুলিশের শেষ সীমানা। ফলে এই স্থানকে ধরা হয় তিন থানার মধ্যস্থল। বাগান এলাকা হওয়ার কারণে এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাতায়াত খুবই কম। তুষার হত্যার পরপরই এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ খুনিদের শনাক্ত করে। রাত ১১টার মধ্যে নগরের বড় বাজারের একটি বাসার খাটের নিচ থেকে গ্রেপ্তার করে জাবেদ নামের একজনকে। সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছেও স্বীকার করেছে। তবে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। এ কারণে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে- গ্রেপ্তার হওয়া জাবেদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তার বাসা আম্বরখানা বড় বাজার এলাকায়। ঘটনার পর সে নিজ এলাকায় চলে এসেছিল। পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে লুকিয়েও ছিল। তার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি পলাতক থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত তুষারের পিতা সাজেদ আহমদ চৌধুরী তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। অজ্ঞাত রেখেছেন কয়েকটি নাম। স্থানীয়দের ভাষ্য থেকে পুলিশ খুনের মিশনে ৯-১০ জনের জড়িত থাকার তথ্য জেনেছে। পুলিশ জানায়- যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা তুষারের সহপাঠী। ওই এলাকায় তুষারের সঙ্গেই তারা আড্ডা দিতো। সে তথ্য স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া সে তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। বর্তমানে তাদের গ্রুপের অনেকেই অন্য আরেকটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। তবে সেই বিভক্তির রেশ তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে পড়েনি। এদিকে- খুনের ঘটনায় জড়িতরা হঠাৎই হাওয়া হয়ে গেল। একমাত্র জাবেদ ছাড়া আর কাউকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে টিবি গেট এলাকায় অপরাধ রাজ্য ফের সরগরম। কেউ কেউ বলছেন; অপরাধীরাই হত্যায় জড়িতদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- শাহী ঈদগাহ্ থেকে টিবি গেট এলাকা পর্যন্ত বিএনপি কিংবা অঙ্গ সংগঠনের কারও কোনো গ্রুপ নেই। কেউ সেখানে গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি করেন না। এ কারণে বালুচর, টিবি গেট ও পূর্ব শাহী ঈদগাহ্ এলাকার অপরাধীরা এ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে সেখানে খাসদবির এলাকার অপরাধ চক্রের নজর পড়েছে। বালুচর এলাকার অপরাধীরা টিবি গেট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। নিহত তুষার ও তার খুনিরা খাসদবিরকেন্দ্রিক অপরাধ চক্রের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। রাজু ও রনি নামের দু’জন তাদের নিয়ন্ত্রক। তাদের অবস্থান খাসদবির এলাকায় হলেও তারা ওখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করে টিবি গেট এলাকা। গেল কয়েক মাস ধরে তাদের নিয়মিত আড্ডা বসে ওই এলাকায়। সন্ধ্যা হলে উঠতি যুবকরা সেখানে বসে। কেউ কেউ বাগান থেকে মাদক কিনে সেবনও করে। আবার অনেকেই ওই এলাকায় ছিনতাই করে বেড়ায়। গত ঈদ মৌসুমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খাসদবির এলাকার নেতাদের নামে খুনের ঘটনায় জড়িতদের পোস্টারিং করতে দেখা গেছে। তুষার খুনের ঘটনার পর এই পোস্টারিং নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ কারণে তুষার খুনের ঘটনার পর জড়িতকে কৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। তবে এয়ারপোর্ট থানার ওসি আনিসুর রহমান খান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- খুনের ঘটনাটি ব্যক্তিগত বিরোধ বলে মনে করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। তুষারের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। ভার্চ্যুয়ালি তদন্ত চালানো হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।