ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট

ইরানে কেন যুদ্ধ শুরু করছে না ইসরাইল

মানবজমিন ডেস্ক
১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার

আগামী মাস নাগাদ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল ইসরাইল। কিন্তু তাতে সায় দেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এই হামলা চালাতে গেলে ইসরাইলের প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে এ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। ভয়ে বিভাজন তৈরি হয়। এ নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক একটি রিপোর্ট করেছেন। তাতে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ও অন্যদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তির পক্ষে আলোচনা চলছে। এ কারণে ইসরাইলকে নিবৃত করেছেন ট্রাম্প। রিপোর্টে বলা হয়, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেবেন নাকি ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতার বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন করবেন তা নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে বিতর্ক হয়। এ নিয়ে বিতর্কের পর ট্রাম্প ওই সিদ্ধান্ত নেন। এসব বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রে মন্ত্রিপরিষদের কিছু কর্মকর্তা ও অন্য সহযোগীদের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরে। সহযোগীরা সন্দেহ পোষণ করেন যে, ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে দিতে এবং একটি বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে পারবে না সামরিক অভিযান। কিন্তু ইরান শেষ পর্যন্ত সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে এখনকার মতো সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে মোটামুটি একটি ঐকমত্যে পৌঁছেন তারা।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মে মাসে হামলা করার পরিকল্পনা ইসরাইলি কর্মকর্তারা প্রস্তুত করেন সম্প্রতি। তারা এই হামলা চালাতে প্রস্তুতও ছিল। তাদের আশা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন দেবে। এ হামলা প্রস্তাবের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়াকে এক বছর বা তারও বেশি সময় পিছিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে শুধু ইসরাইলের প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাই প্রয়োজন হবে না। একই সঙ্গে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, ইসরাইলের হামলা সফল হয়েছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তারা কেন্দ্রীয় চরিত্রে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামরিক হামলার পরিবর্তে এখনকার মতো কূটনীতিকেই বেছে নিয়েছেন। ওদিকে ২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি করেন। ট্রাম্প প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেই সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনেন। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানোর জন্য চেষ্টা করছেন। এ জন্য তেহরানের সঙ্গে সংলাপকে উন্মুক্ত রেখেছেন। পারমাণবিক কর্মসূচিতে একটি চুক্তি করার জন্য দু’এক মাস সময় দিয়েছেন ডেডলাইন হিসেবে। এ মাসের শুরুর দিকে ইসরাইলকে তিনি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ইরানে হামলায় সমর্থন দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় তার সঙ্গে আলোচনা হয় ট্রাম্পের। ওভাল অফিসের সেই মিটিংয়ের পর ঘোষণা আসে যে, ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে মিটিংয়ের পর হিব্রু ভাষায় লেখা এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের সঙ্গে চুক্তি তখনই কাজ করবে, যদি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদেরকে ইরানের সব স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে প্রবেশ করতে দেয়, ওইসব স্থাপনাকে উড়িয়ে দেয়, গুঁড়িয়ে দেয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের চারজন সাংবাদিক এ বিষয়ে কাজ করেন। তারা ইসরাইলের গোপন সামরিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন এমন বেশ কিছু কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য পান, ট্রাম্প প্রশাসনের  ভেতরকার গোপনীয় আলোচনাকে উদ্ধৃত করেন। যারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল। কীভাবে বোমা হামলা করা হবে সেই মহড়া দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এমন হামলা হলে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়াই হামলা হলে তাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তার হিসাবনিকাশ করেছে। গত বছর ইরান অনেকটা দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর সেখানে হামলার পরিকল্পনা বাড়ে ইসরাইলি সরকারের ভেতরে। 

গত বছর এপ্রিলে ইসরাইলে হামলা করে ইরান। কিন্তু তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি প্রতিরক্ষাকে ভেদ করে ইসরাইলে হামলা করতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে গত বছর ইসরাইলি সামরিক হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিজবুল্লাহও ম্লান হয়ে যায়। ওদিকে পালিয়ে যান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এর মধ্যদিয়ে হিজবুল্লাহ ও তেহরানের একটি মিত্রের বিদায় হয়। ইরান থেকে অস্ত্র পাচারের মূল রুট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ইরান ও সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। একই সঙ্গে ইরান যেসব স্থাপনাকে ব্যবহার করতো ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানি তৈরিতে তাও ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে দেশটির নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা কিছু সময়ের জন্য খর্ব হয়। ফলে প্রাথমিকভাবে নেতানিয়াহুর পক্ষ নিয়ে তার সিনিয়র কর্মকর্তারা মার্কিন কর্মকর্তাদেরকে তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তারা বলেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যৌথ ইসরাইলি কমান্ডো অভিযানে বোমা হামলা করা হবে। ইসরাইল আশা করেছিল এই প্রচেষ্টায় জড়িত হবে মার্কিন যুদ্ধবিমান। তবে ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলেন, এই কমান্ডো অপারেশন অক্টোবরের আগে প্রস্তুত হবে না। কিন্তু আরও দ্রুত এই হামলা চালাতে চেয়েছেন নেতানিয়াহু। ইসরাইলি কর্মকর্তারা বোমা হামলা বিস্তৃত করার একটি প্রস্তাব সামনে এগিয়ে দেন। বলা হয়, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা লাগবে। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা ইসরাইলি পরিকল্পনা অধিক পরিমাণে বিবেচনার জন্য উন্মুক্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল ই কুরিল্লা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ দু’জনেই আলোচনা করেছেন- ট্রাম্প যদি পরিকল্পনায় সমর্থন দেন তাহলে কীভাবে ইসরাইলের হামলায় কার্যকরভাবে সাহায্য করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ওদিকে ইয়েমেনে ইরানসমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তীব্র করেছে। হোয়াইট হাউসের আশীর্বাদে এমন সময়ে জেনারেল কুরিল্লা সামরিক সরঞ্জাম মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো শুরু করেন।  যুদ্ধবিমান বহনকারী দ্বিতীয় জাহাজ কার্ল ভিনসন বর্তমানে অবস্থান করছে আরব সাগরে। লোহিত সাগরে অন্য জাহাজ হ্যারি এস ট্রুম্যানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা তার। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে দুটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি এবং একটি টার্মিনাল হাই অলটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে।

ইরানের ভূ-গর্ভস্থ পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ট এমন ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা বহনে সক্ষম বি-২ বোমারু। এমন প্রায় দুই ডজন বি-২ মোতায়েন করা হয়েছে ভারত মহাসাগরে ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে। বাড়তি যুদ্ধবিমান ইসরাইলের ঘাঁটিতে মোতায়েনের কথা বিবেচনা করা হয়। হুতিদের বিরুদ্ধে হামলায় ব্যবহারের জন্য এসব সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে লোহিত সাগরে শিপিং জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুতিরা। তাদের বিরুদ্ধে ১৫ই মার্চ থেকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা প্রাইভেটলি বলেছেন, ইরানে ইসরাইলের সামরিক হামলায় এসব অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও ইরানে হামলায় এসব অস্ত্র ব্যবহারের কর্তৃত্ব দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র; তবু ইসরাইল জানে যে, ইরানের কোনো মিত্রদের হামলা থেকে প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন যুদ্ধবিমান হাতের নাগালে থাকবে। ইরানে সামরিক হামলায় ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওপেন ছিলেন বলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে, তারা হুতিদের অস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্য দিচ্ছে। একই সঙ্গে হুতিদের ওপর ইরানের কিছুটা নিয়ন্ত্রণও আছে। ইয়েমেনের হুতিদের হামলা বন্ধ করতে ১৭ই মার্চ হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। তিনি একই সঙ্গে ইরানকে বলেন, তারা হুতিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status