শেষের পাতা
বিএনপি-সিপিবি-বাসদ চা-চক্র
নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে ঐকমত্য
স্টাফ রিপোর্টার
২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিএনপি, সিপিবি ও বাসদ। এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে চাইলেও সিপিবি এবং বাসদ এর আগেই ভোট চায়। এজন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বলেন
নেতারা। দাবি অনুযায়ী রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হলে দলগতভাবে তারা রাজপথে সোচ্চার হবেন। গতকাল রাজধানীর বনানীতে হোটেল সেরিনায় ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে করণীয় ঠিক করতে সিপিবি ও বাসদের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটির চা-চক্রে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই চা-চক্রটি ছিল অনানুষ্ঠানিক। শিগগিরই বাম জোটের সঙ্গে বিএনপি’র আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া চা চক্রে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, নির্বাচন এবং নতুন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেতারা। সংস্কার বিষয়ে বিএনপি, সিপিবি ও বাসদের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই বলে আলোচনায় বলেন নেতারা। এ প্রসঙ্গে বলেন, সংস্কার একটা বড় কাজ। এটা করার দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের। এটা তারাই করবে। অনির্বাচিত সরকার তো করতে পারে না। ওদিকে ঐক্যের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সামনের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
চা-চক্র শেষে সিপিবি‘র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যেকোনো নির্বাচনের নামে আমরা প্রহসন গ্রহণ করবো না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যেটুকু সংস্কার দরকার, সেটা অবশ্যই নির্বাচনের আগেই করতে হবে। নির্বাচন করার মাধ্যমে সংস্কারের ভিত্তি ভূমিকে শক্ত করে অগ্রসর হওয়াটাই সঠিক পথ।
সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রথমত এটা বাম জোটের সঙ্গে বৈঠক না। এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকও না। এটা মনে রাখা দরকার আমরা যেকোনো দলের সঙ্গে যখন আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করবো, আমাদের একটা জোট আছে, জোটগতভাবে কথা বলে সেটা ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা আলাপ-আলোচনা করবো। আজকে এখানে বিএনপির এক-দু’জন নেতৃবৃন্দ, যাদের সঙ্গে আমাদের অনেক সময় কথা হয়, মিল-অমিলও হয়, তাদের আমন্ত্রণে আমরা এখানে অনানুষ্ঠানিকভাবে চা খেতে এসেছিলাম। সেই চা খেতে গেলে তো বুঝেন, রাজনীতিবিদরা চা খেতে গেলে রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়- সেটা আমাদের হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, আমাদের রাজনীতিতে নতুন একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। এই যে দেখা হওয়া, না হওয়া- অনেকদিন ধরে এটা বন্ধ হয়েছিল। সেটা ভেঙে ফেলা দরকার। পরস্পর জানা-বোঝা, কিভাবে কাজ করছেন। কিভাবে আমরা একটা গণঅভ্যুত্থান করলাম, সংঘটিত করলাম, তারপরে গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যেতে চাই। সেই কাজটা করা দরকার।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রিন্স বলেন, আমরা এবং আমাদের জোট বলে এসেছি, এই বাংলাদেশে জরুরিভাবে একটা নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে শঙ্কাটা আরও ঘনীভূত হবে। ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পরে ওই দিনই আমরা বিবৃতিতে বলেছিলাম, পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা অনেকদিন আগেই বলেছি, ডিসেম্বর কেন? ডিসেম্বরের অনেক আগেই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার- ওটা সংস্কার করে নির্বাচন করা সম্ভব। আমরা দেখলাম, বিএনপি বলছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার সম্ভব। সেটা করার জন্য জরুরিভাবে এগুনো দরকার। আর আমাদের প্রধান এজেন্ডা হলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। এজন্য আমরা মাঠে তো আছি। আমরা আশা করবো, অন্য যারা দেখতে পাচ্ছে- নির্বাচনের নামে অনেকে কালক্ষেপণ করছে, তাতে দেশে একটা সংকট বাড়বে। আশা করি, তারাও মাঠে নামবে।
চা-চক্রে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, সহ -সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি’র পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।