প্রথম পাতা
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা দু’মাস বাড়লো
স্টাফ রিপোর্টার
২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবারত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময় দুই মাস বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল দল নিবন্ধনের আবেদনের শেষদিনে সময় বাড়ানোর এই তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, বেশ কিছু দল যেমন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তেমনি অনেকগুলো দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২২শে জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য আবেদন এসেছে ৬৫টি। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ কিছু দল নিবন্ধনের আবেদন করতে সময় চেয়েছে। গত ১০ই মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইসি নতুন দল নিবন্ধনে ২০শে এপ্রিল সময়সীমা ঠিক করে দেয়। এই সময় শেষ হওয়ার আগেই এনসিপি এই সময়সীমা ৯০ দিন বাড়ানোর আবেদন করে। আবেদনের সময়সীমার শেষদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপি’র একটি প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকের পর বিকালে সময়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন।
সিইসি’র সঙ্গে এনসিপি’র বৈঠক: ওদিকে বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নাগরিক পার্টির একটি প্রতিনিধিদল।
বৈঠক শেষে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অনেকগুলো কথা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টার থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, ইসি থেকে এসেছে। এজন্য আমরা বলবো, কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবেন। বরং এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা জানিয়ে দিয়েছেন, ইসি সে বিষয়ে কাজ ‘শুরু করতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন অংশ নেন।
বৈঠক শেষে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সরকার থেকে কোনো দিকনির্দেশনা আসার আগেই যখন নির্বাচন কমিশন নিজেদের থেকে কথা বলে থাকেন সেজন্য আমরা সন্দেহ পোষণ করি। বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোর দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে মনোনয়নপত্র সশরীরে জমা দেয়া, দল নিবন্ধন নবায়ন এবং দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানো, ঋণখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিলসহ অন্তত দশটি দাবি তুলে ধরেছে এনসিপি।
মৌলিক সংস্কারসহ ইসি’র পুনর্গঠন চেয়েছেন- সেক্ষেত্রে বর্তমান ইসি নাকি পুনর্গঠন বা বর্তমান ইসি’র প্রতি আস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলেছিলাম, ২০২২ এর যে আইন (সিইসি ও ইসি নিয়োগ) বিএনপিও বিরোধিতা করেছিল, সবগুলো দলই বিরোধিতা করেছিল, ফ্যাসিস্ট সরকার সে নিয়মগুলো বানিয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “আমরা স্পেসিফিক বলেছিলাম, ২০২২ সালের যে আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া- আমরা ওই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করি। যাতে সংস্কারের মধ্যদিয়ে, একটা সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সেখানে যদি ঐকমত্য কমিশন সম্মত হয়, তারা যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়। তার পরবর্তীতে যদি হয় এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “(সিইসি ও ইসি নিয়োগ) ২০২২ এর আইন রয়েছে আমরা পূর্বে জানিয়েছিলাম, আইনটা অবৈধ। অন্যান্য দলও জানিয়েছে অবৈধ। সে আইনের অধীনেই হয়েছে বর্তমান (ইসি)। আমরা এ আইনের বিরোধিতা করি। কিন্তু এখন যারা আছেন, তাদেরকে সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট আসার পরে যদি উনারা থাকতে পারলে থাকবে; না থাকতে পারলে থাকবে না। এটা ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের উপর নির্ভর করবে। কারও প্রতি কোনো অবজেনকশন নেই, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের অনুযায়ী হোক।
পাটওয়ারী বলেন, ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট যখন ফাইনাল হয়ে আসবে, তখন সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক কমিশনে পাঠাবে। ওই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়ন হয়। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও বলেছি।
তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে সশরীরে আসার বিধান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসি থেকে নির্বাচনের সার্টিফিকেশন দেয়া, প্রার্থীদের হলফনামা তদন্ত করে তার সত্যতা নিরূপণ করা, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে আচরণবিধি ও ব্যয়ের বিধিতে পরিবর্তন আনা, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেয়া বন্ধ করার কথা আমরা ইসিকে বলেছি।
এ ছাড়া হলফনামায় ভুল তথ্য থাকলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচিত হলেও যেন তারা সংসদে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলো যেন অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা করে তা নিশ্চিত করার বিষয়েও তাগিদ দিয়েছেন এনসিপি’র নেতারা।