অনলাইন
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক প্রস্তাব সমর্থন যোগ্য
ডক্টর জিয়া হায়দার
(২ সপ্তাহ আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

নারীরা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নারীরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, যা তাদের আর্থিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি করছে। নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
অতীত ধারাবাহিকতায় বিএনপি নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং ক্ষমতায়নকে অধিকতর গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। তাই সঙ্গত কারণেই ‘নারী উন্নয়ন’ ৩১ দফার রাষ্ট্র মেরামতের কাঠামোতে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আধুনিক পৃথিবীতে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হলে নারী উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের কাছে ওনাদের রিপোর্ট সাবমিট করেছেন। কমিশনটির টার্মস অব রেফারেন্স আমাদের জানা নেই। কমিশনটিতে কারা কীসের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন সে সম্পর্কেও আমাদের কোনও ধারণা নেই। তবে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টটি এখনও হাতে না পেলেও সামাজিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে অতীব সেনসিটিভ বিষয় বাদে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পোষণ করি।
কয়েকটি প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হলো- (১) বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, (২) নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা, (৩) শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা, (৪) সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ৬ মাস ছুটি দেয়ার সুপারিশ, (৫) প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন, ইত্যাদি।
আমি পূর্বেই বলেছি কমিশনের এই রিপোর্টটির মধ্যে সামাজিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে স্পর্শকাতর বেশ কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। যেমন, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা অথবা শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা। এ ধরনের বক্তব্য বা সুপারিশ একটি বিদেশি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আসতেই পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের প্র্যাকটিস চালু আছে সেটাও সত্য। কিন্তু, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য আমাদের সমাজ কি প্রস্তুত। সামাজিক প্রস্তুতি এবং বেশিরভাগ নাগরিকদের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।
তবে একজন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদ হিসেবে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি যে, কমিশনটি সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ৬ মাস ছুটি দেয়ার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করার সুপারিশ করেছেন। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের পুষ্টিবিদ এবং উন্নয়ন চিন্তাবিদরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করে আসছেন এবং সরকারের আনুকূল্য লাভের চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত কিছু কাজ হলেও অনেক কাজ এখনও অসমাপ্ত হয়ে আছে। এবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনও নারী শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নের এই বিষয়ে একমত হলেন। আমার মনে হয় না জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় দু’টি নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দল দ্বিমত পোষণ করবেন।
এই কারণে আমি আশা করব প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই মুহূর্তে একটি প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ৬ মাস ছুটি দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করার বিধান নিশ্চিত করবেন। এতে করে মা ও শিশুর শত বছরের পাওনা অধিকার নিশ্চিত হবে, ওদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নতি হবে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ সভ্যতার মাপকাঠিতে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। সকল মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক আমাদের আগামীদিনের রাজনীতির অঙ্গীকার।
লেখক: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা