প্রবাস
মালয়েশিয়ায় সম্প্রীতির জয়গানে মুখরিত বিডিএক্সপ্যাটের বৈশাখী উৎসব
আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া
(১৪ ঘন্টা আগে) ২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৪:১০ অপরাহ্ন

মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করলেন বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। "সম্প্রীতির জয়গানে" মুখরিত এই বৈশাখী উৎসব প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা।
গতকাল শনিবার কুয়ালালামপুরের কেএলএসসিএএইচ হলে দিনব্যাপী এই মিলনমেলায় লাল-সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। বাংলাদেশি এক্সপ্যাটস ইন মালয়েশিয়া (বিডিএক্সপ্যাটস) এর উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে ছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল মঞ্চে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিস্কুট দৌড়, বল পাসিং, কাপল গেইমস এবং সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও চিঠি পাঠের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বৈশাখী মেলা ১৪৩২ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও কার্যনির্বাহী সদস্য অসীম সাহা রায় এবং সদস্য সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরীর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় উৎসবের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি "প্রবাসের খেরোখাতা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। উৎসবের সার্বিক উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন অসীম সাহা রায় ও ড. মারজিয়া জান্নাত মহুয়া।
আলোচনা পর্বের শুরুতে, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিডিএক্সপ্যাটস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান রিয়াজ, কার্যনির্বাহী সদস্য ড. মোহাম্মদ আলী তারেক, পাভেল সারওয়ার, ডা. তানিয়া ইসলাম এবং মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ হাইকমিশনারের সাথে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, "লাল সবুজের আর নানা রঙের সাজসজ্জার মাঝে আমার যেন মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে আমি যেন ঠিক বাংলাদেশে আছি। আসুন, আমরা নতুন বছরে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের শপথ নিই এবং নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাই। যার যার অবস্থান থেকে আমরা যেন বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠিয়ে আমাদের দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনে অংশীদার হতে পারি।”
উৎসবে হাইকমিশনের কনস্যুলেট পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিডিএক্সপ্যাটস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান রিয়াজ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পাভেল সারওয়ার তাদের শৈশবের নববর্ষ উদযাপনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “এই উৎসব শুধু একদিনের আনন্দ নয়, এটি আমাদের শেকড়ের সাথে এক গভীর সংযোগ স্থাপন করে।”
অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিল বাংলাদেশের সিটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান, সিবিএল মানি ট্রান্সফার। প্রতিষ্ঠানটি উৎসবের র্যাফেল ড্রতে তিনটি আকর্ষণীয় রিটার্ন কাপল টিকিট প্রদান করে। এ সময় সিবিএল মানি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাঈদুর রহমান ফারাজী উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ছিল ব্রাইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, এনবিএল মানি ট্রান্সফার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সানওয়ে মেডিকেল সেন্টার, ই-স্মার্টওয়ে এসডিএন বিএইচডি, মেডিলিংক গ্লোবাল (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি এবং জেএমজি কার্গো অ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিসেস এসডিএন বিএইচডি। মেলায় খাদ্য সহযোগী হিসেবে ছিল ভিআইপি পিঠা ঘর, গ্রাফিক্স ডিজাইন সহযোগী হিসেবে ছিল ব্র্যান্ড ডেভেলপার আরিফুল ইসলাম, মুদ্রণ সহযোগী হিসেবে ছিল স্মার্ট ডিজাইন অ্যান্ড প্রিন্টিং সল্যুশন, কমিউনিটি পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন মালয়েশিয়া (বিএসওএম) এবং ফটোগ্রাফি পার্টনার ছিল ক্লিকস অব শাওন। এসব পৃষ্ঠপোষকদের বিডিএক্সপ্যাটের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের মধ্যে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ার মাটিতে এই বৈশাখী উৎসব প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে এক আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।