ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

রাতে সীমান্তে গুলিবিনিময়, ভারতের গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান

মানবজমিন ডেস্ক
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পঞ্চম রাতেও উভয়পক্ষে গুলিবিনিময় হয়েছে। এর জন্য ভারত যখন পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে তখন নিয়ন্ত্রণরেখায় আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে ভারতের একটি কোয়াডকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পাকিস্তান বলছে, ভারতের আগ্রাসনের ফলে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় নাগরিকরা দেশে ফিরে যাচ্ছেন এবং পাকিস্তানিরাও তাদের দেশে ফিরে যাচ্ছেন। ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি একজন কূটনীতিক ও সাতজন স্টাফ দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে আছেন কূটনীতিক সোহেল কামার। অন্য চার স্টাফের সঙ্গে তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াগা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লাহোর পৌঁছেছেন। একই দিন বিকালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের অন্য তিনজন সদস্য তাদের পরিবারের ২৬ জন সদস্যকে নিয়ে একই রুটে দেশে ফিরেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডয়েচে ভেলে, জিও নিউজ। পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে পাকিস্তান যতই আন্তর্জাতিক পক্ষপাতিত্বহীন, স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছে, ভারত ততই ওই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে। এ নিয়ে দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের মধ্যে ভয়াবহ উত্তেজনা চলছে। পাল্টাপাল্টি যুদ্ধ প্রস্তুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে আরব সাগরে ভারতের নৌবাহিনী মহড়া চালিয়েছে। তা থেকে বলা হয়েছে, দূরবর্তী সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা চালাতে সক্ষম তারা। এর মধ্যদিয়ে যে পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে ভারত তার সেনাদের প্রস্তুত করেছে। পাকিস্তানের সেনাদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুই দেশের এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। অনলাইন জিও নিউজ নিরাপত্তা সূত্রগুলোকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ভারতের একটি কোয়াডকপ্টার নিয়ন্ত্রণরেখায় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী তা গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ওই সূত্র আরও জানিয়েছেন কোয়াডকপ্টারটি দিয়ে ভিমবারের মানাবার সেক্টরে গোপন নজরদারি করার চেষ্টা করছিল শত্রুপক্ষ। ফলে সময় উপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান সেনারা। তারা শত্রুদের অশুভ উদ্দেশ্য ভণ্ডুল করে দিয়েছে। নিরাপত্তা সূত্রগুলো আরও নিশ্চিত করেছে যে, যেকোনো আগ্রাসনের তাৎক্ষণিক ও কার্যকর জবাব দেয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পাকিস্তানি সেনারা। ওদিকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যে ভারতের মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশে আটকা পড়েছেন প্রায় দুই হাজার কাশ্মীরি। কাশ্মীরি একজন ছাত্র জিও নিউজকে বলেছেন, তারা শ্রীনগরে পৌঁছার চেষ্টা করছেন। নিজেদের বাসায় ফিরতে না পেরে তারা বিভিন্ন অফিসে ঘুমাচ্ছেন। এ ছাড়া ভারতশাসিত কাশ্মীরের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী এবং ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকারে পরিণত হচ্ছেন। 

ডয়েচে ভেলে বলছে, দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি চললেও তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তাদের অভিযোগ, পাকিস্তানের সেনারা গুলি চালাতে শুরু করে। ভারত তার জবাব দিয়েছে। পাল্টা ভারতকে দায়ী করছে পাকিস্তান। তারাও একই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। ফলে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে বলা সম্ভব নয় যে, কে বা কোন পক্ষ আগে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সেনার তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  কোনোরকম উস্কানি ছাড়াই পাকিস্তানের সেনা ‘স্মল আর্মস ফায়ারিং’ শুরু করে। কুপওয়ারা ও বারামুলায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এই গুলি চলে। আখনুরেরও গুলি চলে। ভারতীয় সেনা তার প্রত্যুত্তর দিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি রাতেই কাশ্মীর সীমান্তে গুলি চলছে। পেহেলগামে ২৬ জনের মৃত্যুর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে ভারত। পাকিস্তানও জানিয়েছে, তারা সিমলা চুক্তি-সহ ভারতের সঙ্গে সব চুক্তি স্থগিত করছে। তারপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে প্রতিরাতে গুলির লড়াই চলছে। কাশ্মীর  থেকে ডয়েচে ভেলের প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, প্রতিদিন রাত বারোটার পর গুলি চলছে। ভোরে থেমে যাচ্ছে। তবে শুধু গুলিই চলেছে। এ ছাড়া সীমান্তে প্রচুর সেনা মোতায়েন করছে ভারত। ব্যাপক মুভমেন্ট হচ্ছে।

পাকিস্তানে কী কী ওষুধ রপ্তানি করে ভারত এক্সপোর্ট কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে তার তালিকা চেয়েছে ভারত সরকার। জরুরিভিত্তিতে তাদের এই তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। নিউজ-১৮’র রিপোর্ট বলছে, ২১৯টি দেশের মধ্যে ভারত থেকে ওষুধ নেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান ৩৮তম স্থানে আছে। ২০২৪ সালে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ডলারের ওষুধ কিনেছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তান এই ওষুধ সরাসরি  কেনে না। ভারত থেকে আমিরাতে ওষুধ যায়।  সেখান থেকে তারা এই ওষুধ কেনে। ভারতীয় কর্মকর্তারা মনে করেন, পাকিস্তানে ওষুধ বিক্রি বন্ধ হলে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের খুব একটা ক্ষতি হবে না। কিন্তু পাকিস্তানে তার প্রভাব পড়বে। তাদের অনেক বেশি দাম দিয়ে ওষুধ কিনতে হবে।

জাতিসংঘে ভারতীয় দূতের প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘে ভারতের সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি  যোজনা প্যাটেল বলেছেন, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার দেশ গত এক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করে। এই স্বীকারোক্তিতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে তার এই কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তান একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র এবং তারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহ দিচ্ছে। গোটা বিশ্ব শুনেছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কী বলেছেন। এই প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তান আঞ্চলিক স্থিতি নষ্ট করতে চাইছে। বিশ্ব এখন চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status