শেষের পাতা
জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হলো ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’
স্টাফ রিপোর্টার
১৭ মে ২০২৫, শনিবার
সমতার দাবিতে শুরু হয়েছে ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’- কর্মসূচি। ‘সমতার দাবিতে আমরা’- স্লোগানের এই কর্মসূচিতে প্রগতিশীল নারী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। গতকাল বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’ কর্মসূচির মূল স্লোগান ‘আমরা মিলিত হবো সম্মিলিত মুক্তির দাবিতে’- বেলা ২টা থেকে বিভিন্ন ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে কর্মসূচিতে অংশ নিতে মিছিল মানিক মিয়া এভিনিউতে আসে। নারীদের পাশাপাশি রয়েছেন পুরুষরাও। কর্মসূচি উপলক্ষে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। কর্মসূচির শুরুতে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াদের হাতে ছিল ফেস্টুন। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে মঞ্চ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাঠ করা হয়, যা আন্দোলনের মূল দাবি এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা তুলে ধরে। পরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে একটি র্যালি শুরু হয়ে খামারবাড়ী অভিমুখে যাত্রা করে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূলত নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই কর্মসূচি। পাশাপাশি নারীদের প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীপ্ত প্রতিবাদ জানাতে কর্মসূচি হচ্ছে। আয়োজন উপলক্ষে ৩১টি স্লোগানের একটি তালিকা করেছেন আয়োজকরা। স্লোগানগুলোতে নারীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা, শ্রমিকের অধিকার, ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষেও স্লোগান রাখা হয়েছে।
সেখানে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ বলেন, আমরা নারীর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ এখানে এসেছি-সবাইকে এটা জানাতে যে, আমরা আমাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন এবং সেই অধিকার আদায়ে আমরা একতাবদ্ধ।
এনজিওকর্মী নাজিফা রায়দাহ বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম আমাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে হবে না। কিন্তু আমরা ক্রমাগত দেখছি নারীরা জনসমক্ষে হয়রানি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন, তাদের ওপর মব হামলার হুমকি আসছে। মব হামলাকারীরা নারীকে ঘরে বন্দি করে রাখতে চায়। আমরা আমাদের মর্যাদা ও ন্যায্যতার জন্য এবং নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছি।
বিভিন্ন সংগঠন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারী মুক্তি কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আদিবাসী ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, তীরন্দাজ, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন প্রভৃতি।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’ জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান’- এর সময় নারীদের সরব উপস্থিতি ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তার পরেও রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারকরা এবং সামাজিক কাঠামো নারীদের সেই ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নারীরা শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নয়, শ্রমক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন, সংস্কৃতি এবং প্রতিদিনের জীবনে যেভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, তার মূল্যায়ন এখনো পর্যাপ্ত নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারী শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী নারী, যৌনকর্মী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের ওপর যেসব নিপীড়ন চলছে, তার বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে বিচারের বাইরে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো এবং ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যৌথভাবে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষ্যম্যকে আরও শক্তিশালী করছে। নারীদের নিজস্ব স্বরকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রতিটি ঘটনাতেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ কর্মসূচি কেবল নারীদের স্বার্থরক্ষা নয় বরং এটি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির আন্দোলনের অংশ। ‘নারীমুক্তি কোনো একক ইস্যু নয়, এটি শ্রমিক-মজুরের মুক্তি, জাতিসত্তার অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গেই জড়িত। তাই এই যাত্রা শুধুই নারীর নয়, বরং সকল প্রগতিশীল শক্তির মিলনমঞ্চ।
পাঠকের মতামত
যারা নারী অধিকার ক্ষুন্ন করে তারাই মূলত নারী অধিকার নিয়ে উচ্ছ কন্ঠ।