শেষের পাতা
দাবি মানার ঘোষণা, আন্দোলন প্রত্যাহার জবি শিক্ষার্থীদের
স্টাফ রিপোর্টার ও জবি সংবাদদাতা
১৭ মে ২০২৫, শনিবার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের টানা তিনদিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার রাস্তায় অবস্থানের পর শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি মেনে নিয়েছে সরকার বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় ইউজিসি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন জবি ভিসি। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধি করার মাধ্যমে প্রথম দাবির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আবাসন সংকট নিরসনে অস্থায়ী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু হবে, ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, আমরা সারাদিন এটা নিয়ে কাজ করেছি। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে সবাই মিলে সমাধান করতে পারবো। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি একসঙ্গে বসে সব সমাধান করবো। আপনাদের সকল দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।
এ সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ের জন্য গণ-অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, আমাদের চতুর্থ দাবি ছিল আমাদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। হামলার ঘটনায় পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সাতদিনের মধ্যে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তবে শিক্ষার্থীদের আসান ভাতা নিয়ে যে দাবি, তার সুরাহা হয়নি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলোচনা চলছে।
এর আগে আবাসন সংকট নিরসনসহ চার দফা দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করেন। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে এ অনশন শুরু করেন তারা। গণ-অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সাবেক ব্যবসা অনুষদের ডিন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দাবি না আদায় হওয়া? পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচি পালন করবো। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করবো না। বিজয় নিয়েই আমরা ফিরবো। এর আগে বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে জবি ঐক্যের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সমপাদক মাহতাব লিমন।
সরজমিন দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা সড়কে বসে- আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ, লড়াই লড়াই লড়াই চাই, তুমি কে আমি কে, জবিয়ান জবিয়ান, বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, লড়াই করে বাঁচতে চাই, চুপ কেন যমুনা, খালি হাতে ফিরবো না, রক্ত লাগলে রক্ত নে তবু জবির হল দে। এমন স্লোগানে মুখরিত করেন কাকরাইল মোড়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিবাদী গান ও কবিতা পরিবেশন করতে দেখা যায় তাদের। এ সময় বিকাল ৪টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে এক মিনিট নীরবতা পালন কর্মসূচি পালন করা হয়। নীরবতা পালনের পর হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করা হয়।
এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বিকালে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
উল্লেখ্য, চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবির মধ্যে রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করা, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট না করে অনুমোদন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন। এসব দাবি নিয়ে গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি নিয়ে যাত্রা শুরু করলে কাকরাইল এলাকায় দুপুর ১টার দিকে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জের মাধ্যমে মিছিল ছত্রভঙ্গ করা হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। সেখান থেকেই শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত না ফেরার ঘোষণা দেন।