অর্থ-বাণিজ্য
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই: দেবপ্রিয়
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৪ ঘন্টা আগে) ১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৮:১৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি, তত ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েই কথাটা বললাম। শুল্ক আরোপের প্রভাব আমাদের প্রতিযোগীদের (দেশ) ওপরেও পড়ছে। ফলে তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় আমরা খুব বেশি হারছি না।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে আয়োজিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপকে ‘বিষাক্ত শুল্ক চিকিৎসা’ হিসেবে আখ্যা দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসার পর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পেছনে অর্থনীতির চেয়েও বেশি আছে রাজনীতি। কিন্তু পাল্টা শুল্ক আরোপের যে নীতি ট্রাম্প নিয়েছেন, তা সফল হবে কি না, সে বিষয়ে দৃঢ় সংশয় আছে তার। অর্থাৎ এই নীতি দিয়ে তিনি (ট্রাম্প) যে লক্ষ্য থেকে অর্জন করতে চাচ্ছেন, তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন না তিনি। বাজার এই নীতি সেভাবে গ্রহণ করবে না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, যে নীতিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা তেমন একটা সঠিক নয়। শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে যে সূচক (পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি) ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর কিছু নয়। তারা বলছে, পণ্যের ক্ষেত্রে যার সঙ্গে যত বাণিজ্য ঘাটতি, তার ওপর তত বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য তারা বিবেচনায় নেয়নি। আবার চলতি বছর যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, পরবর্তী বছর তা একই থাকবে না, পরিবর্তিত হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, তাহলে কী বছর বছর তারা শুল্কহার বদলাবে; বছর বছর শুল্ক বদলালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা দরকার, তা থাকবে না। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নীতি যৌক্তিক না হলে তাকে স্থায়িত্ব দেয়া খুবই কষ্টকর। বাজার তা গ্রহণ করে না। তবে দুর্যোগকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অনেক দিনের জমে থাকা যেসব সংস্কারের কথা আমরা বলে থাকি, এই দুর্যোগের সময়টা সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ।
প্রধান অতিথি বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। সে জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যতালিকা (এজেন্ডা) দেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০০টি পণ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি তৃতীয় যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো হিসাবের মধ্যে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আমরা তাদের পণ্য কিনবো, কিন্তু তা মোট বাণিজ্যের হিসেবে যোগ হবে না- আমরা তা বরদাশত করবো না। যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি না হলে আমরা আমদানি নীতি সংশোধন করে তৃতীয় দেশ থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দেবো। ইতিমধ্যে গাড়ির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি আছে। এ ছাড়া বাণিজ্য বাধা দূর করতে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে নেয়াসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশের রপ্তানি খাতের সুরক্ষা ও টেকসই করার লক্ষ্যে মার্কিন শুল্ক ইস্যু মোকাবিলায় রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ অতীব জরুরি। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিশীলতার পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণ, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে ত্বরান্বিত করা, কার্যকর ও কৌশলগত অর্থনৈতিক কূটনীতির জোরারোপ, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার উন্নতি ও মানব সম্পদের দক্ষতার বিকাশে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতিতে কার্যকরভাবে নেগোশিয়েশন চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছে তা কাম্য নয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের সম্পর্ক আরো জোরালো হতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ পরিচালক রাজীব হায়দার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান।