ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫, রবিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

৪৪ বছর পর মা-মেয়ের মিলন

মানবজমিন ডেস্ক

(১ দিন আগে) ২৪ মে ২০২৫, শনিবার, ৬:৪৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১:০৪ অপরাহ্ন

mzamin

হান তে-সুনের মনে আছে ১৯৭৫ সালের মে মাসে সিউলে তাদের বাড়িতে ছোটবেলার শেষবারের মতো তিনি মেয়ে কিয়ং-হারকে দেখেছিলেন। তারপর ৪৪ বছর মেয়ের দেখা পাননি তিনি। অবশেষে তাদের মিলন হয়। মা-মেয়ে একে অন্যকে খুঁজে পান। যখন তাদের মিলন হলো তখন কিয়ং-হা একজন মধ্যবয়সী আমেরিকান নারী। নামও বদলে ফেলেছেন। এখন তার নাম লরি বেন্ডার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। মিস হানের অভিযোগ, তার মেয়েকে বাড়ির কাছ থেকে অপহরণ করে একটি অনাথ আশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অবৈধভাবে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সেখানে আরেক পরিবার তাকে বড় করে। এখন তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, কেননা সরকার তার মেয়ের অবৈধ দত্তক নেওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি হচ্ছেন শত শত মানুষের মধ্যে একজন, যারা সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার বিতর্কিত আন্তর্জাতিক দত্তক প্রক্রিয়া নিয়ে জালিয়াতি, অপহরণ, মানব পাচার ও বেআইনি দত্তক নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়া একমাত্র দেশ, যারা দীর্ঘ সময় এবং বিপুল সংখ্যক শিশুকে বিদেশে দত্তক দিয়েছে। ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়ায় ১,৭০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ শিশুকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর বেশির ভাগই পশ্চিমা দেশে।

মিস হানের মামলাটি আগামী মাসে আদালতে উঠবে। এই মামলাটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তিনি প্রথম মা, যিনি তার দত্তক নেওয়া সন্তানের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। এর আগে ২০১৯ সালে আমেরিকায় দত্তক নেওয়া এক ব্যক্তি প্রথম এই ধরনের মামলা করেছিলেন। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, তারা ‘দীর্ঘদিন পর পরিবার না খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিদের আবেগময় কষ্টের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করে।’ সরকার বলেছে, তারা মিস হানের মামলাটি ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে বিবেচনা করছে’ এবং মামলার রায় অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ৭১ বছর বয়সী মিস হান বলেন, তিনি চান সরকার যেন দায় স্বীকার করে। কারণ ‘৪৪ বছর ধরে আমার শরীর আর মন ধ্বংস করে খুঁজেছি তাকে। কিন্তু একবারও কি কেউ আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে? না, কখনো না।’

বছরের পর বছর ধরে তিনি ও তার স্বামী থানা, অনাথ আশ্রমে খোঁজ করেছেন, লিফলেট ছড়িয়েছেন, টেলিভিশনে গিয়ে সাহায্যের আবেদন করেছেন। মিস হান বলেন, আমি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খুঁজতে খুঁজতে পায়ের দশটি আঙ্গুল হারিয়েছি।

১৯৯০ সালে এক টিভি অনুষ্ঠানের পর ভেবেছিলেন মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন। এমন এক নারীকে ঘরে এনে রেখেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু পরে সেই নারী স্বীকার করেন, তিনি কিয়ং-হা নন। অবশেষে ২০১৯ সালে বড় সাফল্য আসে, যখন তিনি ‘৩২৫ কামরা’ নামের একটি ডিএনএ মিলিয়ে দেওয়া সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই সংস্থাটি জানায়, একটি মিল পাওয়া গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার এক নার্সের সঙ্গে। তার নাম লরি বেন্ডার। টেলিফোনে কিছুদিন কথা বলার পর লরি কোরিয়ায় উড়ে এসে মিস হানের সঙ্গে দেখা করেন। বিমানবন্দরে আবেগঘন পুনর্মিলনে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন।

মিস হান মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে হেয়ারড্রেসার। শুধু চুল স্পর্শ করেই বুঝতে পারি এটা আমার মেয়ে কি না। আগেও ভুল করেছি, তাই এবার নিশ্চিত হতে চুলে হাত দিয়েছিলাম। মেয়েকে তিনি প্রথমেই বলেন, আমি দুঃখিত। আমি অপরাধবোধে ভুগতাম। কারণ ছোটবেলায় সে বাড়ি ফিরে আসতে পারেনি। আমি ভাবতাম, সে কতটা খুঁজেছে আমাকে। এই ভাবনায় আমার হৃদয় ভেঙে যেত।

কিয়ং-হা পরে বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেন, মনে হলো বুকের এক ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে গেছে। আমি এখন সম্পূর্ণ মানুষ। তারা পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের সেই দিনটি নিয়ে টুকরো স্মৃতি জোড়া লাগান। তখন ৬ বছরের কিয়ং-হা বাড়ির কাছে খেলছিল। হঠাৎ এক অচেনা নারী উপস্থিত হয়ে জানান, তার মা তাকে আর চান না। তাকে ট্রেনে তোলা হয়। আর গন্তব্যে পৌঁছে ছেড়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে অনাথ আশ্রমে পাঠায়। এরপর তাকে আমেরিকার এক দম্পতির কাছে দত্তক দেয়া হয়। পরে জানা যায়, তার নামে তৈরি কাগজপত্রে মিথ্যে লেখা ছিলÑ সে পরিত্যক্ত শিশু, যার বাবা-মা অজানা।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status