অনলাইন
লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টাকে যা জানিয়েছে বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার
(২০ ঘন্টা আগে) ২৪ মে ২০২৫, শনিবার, ১১:০২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

অন্তবর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছে বিএনপি। এতে বর্তমান পরিস্থিতে দলের অবস্থান তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অগণতান্ত্রিক বর্বরতম ফ্যসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টের রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যসিবাদ মুক্ত হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা এবং জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন ও সামাজিক ন্যয় বিচার ভিত্তিক একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এদেশের মানুষ আপনার নেতৃত্বে একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে।
এতে বলা হয়, ফ্যাসীবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে, বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান; কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে তা একটি বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোন বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা। কোন মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সচেতন থাকা উচিত ছিল। এই বক্তব্য আমরা আপনার সামনে বারবার উচ্চারণ করেছি। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকান্ডে জনমনে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকান্ডে জাতীয় স্বার্থে রক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেয়া দরকার ছিল। এছাড়াও এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ মেয়াদী নীতি নির্ধারণী কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের আছে বলে এদেশের জনগণ মনে করেনা।
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যাতে দেশে অস্থিতিশীল কোন পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত কেবল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচিন।
অন্তর্বর্তী সরকারের যে সমস্ত উপদেষ্টাগণ একটি নুতন রাজনৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বুঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।
বিএনপি’র বক্তব্যে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি “সংস্কার সনদ” তৈরীর প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা স্বত্ত্বেও একই বিষয় গুলো নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদেরকে এবং সরকারকে বিব্রত করে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পূর্ণগঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ পূণর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে অন্তর্ভূক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে সুতরাং আমাদেরকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব অতিশীঘ্রই সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র হিসাবে জনাব ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নিবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পক্ষপাতমূলক আচরণ সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষণ্ন করছে।
নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক। জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্রসম্ভব জনআকাঙ্খা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ ইং এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবী জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্খাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া বর্তামান অন্তরবর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসাবে বিএনপি’র পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, জনআকাঙ্খা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথা সময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি ইতোমধ্যেই সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে এবং অন্যদেরকেও একই প্রক্রিয়ায় দাবী আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে আমরা মনে করি।
যেহেতু, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দু’টাই একই সাথে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
বক্তব্যে বলা হয়, আমরা যে বিষয়গুলো এই পত্রে উল্লেখ করেছি সেগুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মত উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক এবং অনিবার্যভাবেই তা আমাদেরকে সরকারকে সহযোগীতা করার লক্ষ্যে পরামর্শ দিতে নিরুৎসাহিত করবে।
দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
পাঠকের মতামত
গনতান্ত্রিক সরকারের কোন বিকল্প হয়না তাই দ্রুত নির্বাচন দাবি করছি
দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিএনপির উচিত তীব্র আনদোলনের মাধ্যমে ডিসেম্বর এর মধ্যে নিরবাচন আদায় করে নেয়া। আগামী ডিসেম্বর এর পরে জুন পরযন্ত বিভিন্ন কারণে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
এমন সুনির্দিষ্ট মতামত এবং দেশের সবচেয়ে বড় দলকে এবারেও যদি অবজ্ঞা করে ২% এর মতামতকেই আবার প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে পরিস্থিতি যেদিকেই যাক সেটা ভালো হবেনা। বিএনপি সবসময় ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে কিন্তু এটাকে অনেকে দুর্বলতা ভাবছে। এখন যদি ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের মত প্রোগ্রাম দেয় তাহলে বর্তমানে আইন-শৃংখলার যে অবস্থা তাতে আটকানোর ক্ষমতা কি সরকারের আছে?
Ahmad Zafar সহেবের সাথে শতভাগ সহমত।
Jonogoner upor shob kichu chapeya deya khub sohoj. ei term ta sorkaro bebohar kore ar rajnoitik gulo to korei. Bah valoi to !!!!!!
জনগণের নাম ভাঙ্গিয়ে কথা বলার এখতিয়ার বিএনপি কোথা থেকে পেল? ভারত ও নিষিদ্ধ আওয়ামীদের সঙ্গে সূর মিলিয়ে কথা বলে বিএনপি সরকার এবং জনগণকে কি বার্তা দিচ্ছে।
গনতান্ত্রিক সরকারের কোন বিকল্প হয়না তাই দ্রুত নির্বাচন দাবি করছি
অসাধারণ ও গঠনমূলক মতামত বিএনপির পক্ষ থেকে। এখন দেখা যাক, ডঃ ইউনুস সাহেব এবার কী পদক্ষেপ নেন। তাঁর ভূমিকা ও চেতনা আগের মতো হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
অসাধারণ! খুবই পরিপক্ক দাবি....
দারুণ বক্তব্য, সবকিছু পরিষ্কার।