ঢাকা, ৪ জুন ২০২৫, বুধবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

ভারতীয় বাহিনীর হাতে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের মৃত্যুর পর সীমান্তে আতঙ্ক

মানবজমিন ডেস্ক

(১ দিন আগে) ২ জুন ২০২৫, সোমবার, ১:২৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৮ পূর্বাহ্ন

mzamin

ভারতের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের তামু জেলায় তাড়াহুড়ো করে আয়োজন করা হয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। প্রস্তুতির মাঝে রক্তে ভেজা যুদ্ধ-পোশাকে মোড়ানো কিশোর ও পুরুষদের পোড়া ও ফুলে যাওয়া কতগুলো দেহ। তারপুলিনের উপর পাশাপাশি পড়ে ছিল দেহগুলো। এর ওপর মাছি উড়ছিল। কাঠ ও পোড়া রাবারের টায়ার দিয়ে তৈরি একটি অস্থায়ী চিতা তখন জ্বলছিল। আগুনের নাগালের একটু বাইরে সবুজ ও কমলা রঙের মালা। ১৪ই মে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)-এর অংশ পা কা ফা’র  (পিকেপি) ১০ সদস্য। এর মধ্যে তিনজন ছিল কিশোর। পিকেপি হলো মিয়ানমারের সরকার বিরোধীদের জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) অধীনস্থ বাহিনী। ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানে অপসারিত পার্লামেন্ট সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় এই জাতীয় ঐক্যের সরকার। এর মধ্যে আছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি’র দল এলএনডির নেতারাও। পিকেপি মূলত সেই বেসামরিক মিলিশিয়া বাহিনীগুলিকে সহায়তা করে যারা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং কার্যত এনইউজির সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, ১৪ মে মণিপুর রাজ্যের চান্ডেল জেলার সীমান্ত পোস্টে টহলরত আসাম রাইফেলসের একটি ব্যাটালিয়ন ‘যুদ্ধের মতো সরঞ্জাম’ বহনকারী ১০ ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীকে’ গুলি করে হত্যা করে। তারা জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। তবে মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্যের সরকার  দাবি করেছে, তাদের ক্যাডারদের ‘ভারতীয় ভূখণ্ডে কোনো সংঘর্ষে’ হত্যা করা হয়নি বরং ‘ধরে নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ভারতীয় সেনা’। চার বছর ধরে ভারতের সঙ্গে ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে কার্যত দুটি পক্ষই একে অপরের বিষয়ে না জড়ানোর একটি নীরব সমঝোতা বজায় রেখেছিল। তবে তামু হত্যাকাণ্ডে সেই ভারসাম্য ভেঙে যায়। তামু পিপলস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন টিমের সদস্য থিদা (ছদ্মনাম) বলেন, যোদ্ধারা আতঙ্কে আছেন। কিন্তু শরণার্থীরা আরও বেশি আতঙ্কে। তারা সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। 

এদিকে, গত বছর থেকে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানো শুরু করেছে দিল্লি। এর আগে শতাব্দী ধরে এই সীমান্ত দিয়ে অবাধ যাতায়াত ছিল। এখন বেড়া বসানোর ফলে জাতিগোষ্ঠীগুলিকে আলাদা করে ফেলা হবে। থিদা বলেন, ভারতকে প্রতিবেশী হিসেবে পেয়ে আমরা নিরাপদ মনে করতাম। কিন্তু এখন আমরা আতঙ্কিত। এটা একবার হয়েছে, আবারও হতে পারে।

১২ মে পিকেপির ১০ ক্যাডারের পুরনো ক্যাম্প মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে পড়ে যাওয়ার পর তামুতে নতুন ঘাঁটিতে চলে যায়। স্থানীয় দুই বাসিন্দা ও একজন এনইউজি কর্মকর্তা দাবি করেন, ভারতীয় সেনাকে এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছিল। থিদা বলেন, ১২ মে আসাম রাইফেলস আমাদের নতুন ক্যাম্প পরিদর্শনে আসে। তাদের সব কিছু জানানো হয়েছিল। ১৪ মে ভারতীয় সেনা জানায়, তারা গোপন তথ্য পেয়ে অভিযানে নামে এবং গোলাগুলিতে ১০ জনকে হত্যা করে। পরে জানানো হয়, তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে সীমান্তে বেড়া নির্মাণের কাজে নিয়োজিত সেনা বা শ্রমিকদের উপর হামলার উদ্দেশ্যে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছিল। 

এই বিবৃতিগুলোর মধ্যে স্পষ্ট অসামঞ্জস্য থাকায় সাবেক এক ভারতীয় সরকারি উপদেষ্টা বলেন, এটা বুঝে ওঠা কঠিন যে ঘটনাটা আসলে কী ঘটেছে। এটি হয়তো যুদ্ধের বিভ্রান্তির মধ্যেই ঘটেছে। ১৬ মে ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন মৃতদেহগুলো হস্তান্তরের কথা জানায়, তখন তামুর স্থানীয় কর্মকর্তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। তাদের একজন জানান, আসাম রাইফেলসের লোকেরা আগেই কিছু নথিপত্র প্রস্তুত করেছিল। আমাদের বাধ্য করা হয় মিথ্যা নথিতে স্বাক্ষর করতে, না হলে মৃতদেহগুলো দেবে না বলে হুমকি দেয়। এই নথিগুলোর মধ্যে ছিল সীমান্ত বেড়া নির্মাণে সম্মতি এবং দাবি করা হয় যে পিডিএফ ক্যাডাররা ভারতীয় ভূখণ্ডেই নিহত হয়েছেন। থিদা বলেন, আমরা বারবার বলেছি, ভারত যেন আমাদের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে। ততদিন সীমান্তে বেড়া নির্মাণ স্থগিত রাখা হোক। তিনি সবচেয়ে বেশি ব্যথিত লাশগুলোর দশা দেখে। থিদা বলেন,  মৃতদেহগুলোর ভিতরে পোকা ধরেছিল। যদি কিছু না-ও করে, ভারতীয় বাহিনীর অন্তত আমাদের মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত ছিল।
 

পাঠকের মতামত

Indians are the worst

A
২ জুন ২০২৫, সোমবার, ৯:২৭ অপরাহ্ন

মোদি ও নেতানিয়াহু দুজনের কসাই।

shohidullah
২ জুন ২০২৫, সোমবার, ৯:০৮ অপরাহ্ন

মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারত কত যে নিষ্ঠুর আরাকান আর্মির বুঝা উচিত।

জাহাঙ্গীর
২ জুন ২০২৫, সোমবার, ৮:০৩ অপরাহ্ন

তোমাদের আর কত সময় লাগবে ভারতকে চিনতে

mc
২ জুন ২০২৫, সোমবার, ৬:৫৮ অপরাহ্ন

বুঝ হে সুজন যে জান সন্ধান।

Ahmad Zafar
২ জুন ২০২৫, সোমবার, ৪:৪৩ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status